বাংলাদেশে ব্যবসার বাধা দূর হওয়ার অপেক্ষায় নরওয়ের বিনিয়োগকারীরা

60

বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসতে পারছে না নরওয়ের কোম্পানিগুলো। নরওয়ের রাষ্ট্রদূত সিসসেল ব্লেকিন বলেছেন, এই সমস্যাগুলো নিয়ে তারা নিয়মিত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছেন, কিন্তু এখনও বাংলাদেশে নতুন ব্যবসার অনুমোদন পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়নি।
“আমরা চাই, নরওয়ের আরও বেশি কোম্পানি বাংলাদেশে আসুক, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করুক। কিন্তু ব্যবসা করার পথ মসৃণ হওয়াটা জরুরি।” সোমবার ঢাকায় নিজের বাসভবনে নরওয়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক প্রাতঃরাশ বৈঠকের পর এ বিষয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, নরওয়ের কোম্পানিগুলো দূতাবাসের কাছে এ দেশে ব্যবসার পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চায়। “বিনিয়োগের পরিবেশ যখন উন্নত হবে, আমি নিশ্চিত, আরও বেশি কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চাইবে। বাংলাদশ একটি বড় বাজার, এখানে সম্ভাবনাও প্রচুর।”
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম এ বৈঠকে নরওয়ের বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সমস্যার কথাগুলো শোনেন। গ্রামীণফোন, জুটন গ্রুপ, সেকটেক সোলার, বার্গেন ইঞ্জিনস ও পলি কংক্রিটের মত কোম্পানির প্রতিনিধিরা অংশ নেন এই বৈঠকে। কাজী আমিন বলেন, “আমরা সব সমস্যারই সমাধানের চেষ্টা করছি। এখন আমরা প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করি। আমার মনে হয় না কোনো ঘটনা পেন্ডিং আছে। আমি আন্তরিকভাবে চাইছি, এখানে ব্যবসা করার প্রক্রিয়াটা যেন সহজ করা যায়।”
প্রাতঃরাশ বৈঠকে আমন্ত্রিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী একজন সংবাদ প্রকাশক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিদেশি কোম্পানিগুলো যেসব সমস্যার কথা বলেছে, তার অভিজ্ঞতা তার চেয়ে খুব একটা ভিন্ন নয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালের ১৪ এপ্রিল নর্ডিক দেশ নরওয়ের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হয়। এক সময় দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ধরন ছিল মূলত উন্নয়ন সহযোগিতা নির্ভর। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
বাংলাদেশে ব্যবসায় থাকা সবচেয়ে বড় নরওয়েজীয় কোম্পানি টেলিনরের হাতে রয়েছে গ্রামীণফোনের ৫৫.৮ শতাংশের মালিকানা। দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের গ্রাহক সংখ্যা ৭ কোটির বেশি। বাংলাদেশে টেক্সটাইল খাতে নরওয়ের যেসব কোম্পানি রয়েছে তাদের মধ্যে ভার্নার গ্রুপের বিনিয়োগ সবচেয়ে বেশি। নরওয়ের সফটওয়্যার কোম্পানি সেফালোর নিজস্ব অফিস রয়েছে ঢাকায়। বার্গেন ইঞ্জিনসও বাংলাদেশে তাদের ব্যবসা বাড়িয়েছে। বেশ কয়েকটি নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিনিয়োগ রয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ ২০১৭ সালে ২.২ বিলিয়ন নরোয়েজীয় ক্রোনার পণ্য নরওয়েতে রপ্তানি করে, যার বেশিরভাগটাই তৈরি পোশাক। এর বিপরীতে আমদানি করে ২৮৬ মিলিয়ন ক্রোনার পণ্য, যার বড় একটি অংশ যন্ত্রপাতি।
রাষ্ট্রদূত সিসসেল ব্লেকিন জানান, সোমবারের বৈঠকে নরওয়ের কোম্পানিগুলোর লাভের অংশ দেশে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আইনি কাঠামো ঠিকঠাক থাকলেও বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার অভাবে সেসব আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় না। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি এখানে জরুরি হয়ে পড়েছে। যেসব কোম্পানি এ দেশে ব্যবসা করছে, তাদের লাভের অংশ দেশে পাঠাতে চাইলে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও এ বিষয়ে নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। এসব কোম্পানিকে অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশি পরামর্শক বা বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিতে হয় । সেজন্য পরামর্শকদের টাকা দিতে হয় বিদেশি মুদ্রায়।
কিন্তু বৈঠকে উপস্থিত নরওয়েজীয় কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা জানান, বাংলাদেশে টাকা আনা বা পাঠানো- দুটো কাজই যথেষ্ট জটিল। এ দেশে ব্যবসা করতে আসা নতুন কোম্পানির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একটি কোম্পানির একজন প্রতিনিধি বলেন, প্রতিবার টাকা বাইরে পাঠাতে তাদের বিরাট আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পার হতে হয়। ফলে তাদের অভিজ্ঞতা খুব একটা ভালো নয়।
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফলি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী যাতে ব্যবসা করতে গিয়ে স্বস্তি বোধ করতে পারে, সেজন্য আইনের শাসনের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ।”