বাংলাদেশে দারিদ্র্য কমছে অসমভাবে

25

বাংলাদেশে ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও দেশের সব অঞ্চলে দারিদ্র্য কমার হার সমান নয়; কমার গতিও শ্লথ। বিশ্ব ব্যাংকের ‘বাংলাদেশ পোভার্টি অ্যাসেসমেন্ট’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সাল থেকে অর্থনীতির গতি বাড়লেও দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমেছে। বৈশ্বিক ঋতদাতা সংস্থাটি বলছে, ২০১০ সাল থেকে বাংলাদেশের পূর্ব এবং পশ্চিমের বিভাগগুলোর মধ্যে দারিদ্র্য পরিস্থিতির ঐতিহাসিক পার্থক্য আবার ফিরে এসেছে।
উল্লেখিত সময়ে পশ্চিমের রংপুর বিভাগে দারিদ্র্য বেড়েছে, রাজশাহী ও খুলনায় পরিস্থিতির পরিবর্তন নেই। অন্যদিকে চট্টগ্রামে দারিদ্র কমেছে পরিমিতভাবে, বরিশাল, ঢাকা ও সিলেটে কমেছে দ্রুতগতিতে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬ সালের খানা আয়-ব্যয় জরিপের তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের উপস্থিতিতে গতকাল সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশ্ব ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মারিয়া ইউজেনিয়া জেননি প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বলেন, ২০১০-১৬ সময়কালে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক উন্নতি করেছে। বিশেষ করে শ্রমিকের আয় বৃদ্ধি এই উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। এসময়কালের মধ্যে বাংলাদেশে ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে। খবর বিডিনিউজের
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য সময়ে যে হারে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে তা ২০০৫-১০ সময়ের তুলনায় কম। ২০০৫-২০১০ সময়ে যেখানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর এক দশমিক সাত শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমেছে, সেখানে ২০১০-২০১৬ সময়ে দেশে দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে বছরে এক দশমিক দুই শতাংশ হারে।
জেননি দারিদ্র্যহার কমার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২০১০-২০১৬ সময়ে দেশে সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য কমেছে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটে। ২০১০ সালে বরিশালে দারিদ্র্য হার ছিল ৩৯ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা কমে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৪ শতাংশে। একইভাবে চট্টগ্রামের দারিদ্র্য হার ২৬ দশমিক ২ শতাংশ থেকে ১৮ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে আসে। আর সিলেটের দারিদ্র্য হার ২৮ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ১৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে।
উল্টোদিকে দেখা গেছে, ২০১০ সালে রংপুরে যেখানে দারিদ্র্য হার ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল, উল্লেখিত সময়ে তা বেড়ে ৪৭ দশমিক ৩ শতাংশ হয়েছে। দারিদ্র্য কমার এই চিত্রে তিনি পূর্ব-পশ্চিমের ঐতিহাসিক পার্থক্য ফিরে আসার শঙ্কা দেখছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০-২০১৬ সময়ে দারিদ্র্য বিমোচনের ৯০ শতাংশই হয়েছে গ্রামে। শহরে দারিদ্র্য কমেছে সীমিতভাবে। অতিদরিদ্র্য জনগোষ্ঠির মধ্যে শহরের লোকের অবস্থান প্রায় একই রয়ে গেছে। ফলে জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচনের গতি শ্লথ হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, গ্রামাঞ্চলেও দারিদ্র্য কমাতে কৃষি নয়, শিল্প খাতই বেশি অবদান রেখেছে। আলোচ্য সময়কালে কৃষি প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনে এ খাতটি আগের চেয়ে কম অবদান রেখেছে। আর শহরাঞ্চলে উৎপাদন খাত, বিশেষ করে পোশাক খাত দারিদ্র্য বিমোচনে নেতৃত্ব দিয়েছে।
তবে দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার সঠিক পথেই রয়েছে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘সরকার দেশ থেকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূর করতে রীতিমতো যুদ্ধ চালাচ্ছে। আগামি দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে’।
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের হতদরিদ্রের সংখ্যা ১০ শতাংশের নীচে নেমে এসেছে। কিন্তু দারিদ্র্য সীমা এখনও ১৯-২০ শতাংশে ঘুরাঘুরি করছে। তবে এ হার নামিয়ে আনতে সরকার নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত দেশে ৮০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে এসেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকার দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক নিরপাত্তা বেষ্টনির আওতা বাড়ানোর পাশাপাশি দারিদ্র্য প্রবণ নির্দিষ্ট এলাকা ও দরিদ্র গ্রæপকে টার্গেট করে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তাই দারিদ্র্য দূরীকরণে আমরা দৃঢ় আশাবাদী’।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ব ব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি মার্সিয়া টেম্বন বলেন, ‘গত এক দশকে বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচনে প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। কিন্তু এখনও প্রতি চারজনের একজন দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে’। দারিদ্র্য কমানোর জন্য, বিশেষ করে দারিদ্র্যের নতুন ক্ষেত্রগুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শহর এলাকায় দারিদ্র্য বিমোচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের অর্ধেকই শহরে বাস করবে বলে প্রক্ষেপন করা হয়েছে’।
অনুষ্ঠানে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলমও বক্তব্য দেন।