বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃতি ও সংস্কৃতি

363

আল মাহমুদ। দক্ষিণ এশিয়ার সর্বশেষ একজন বড় কবির নাম। তাঁর মহাপ্রস্থানে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো তা পূরণে হয়তো আরো একটি শতাব্দী অপেক্ষা করতে হবে আমাদের। সমগ্র জাতি আজ শোকাহত। বঙ্গজননীর ‘সোনার নোলক’ হারিয়ে গেলো অবশেষে। ব্যক্তি ও মানুষ আল মাহমুদের বিদায় হলেও সাহিত্যিক আল মাহমুদ বিশ্বসাহিত্যে চিরঞ্জীব নক্ষত্র হয়ে থাকবেন। বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বশীল কবিহিসেবে তাঁর সৃষ্টি কালে ও কালান্তরে দীপ্তি ও সৌরভ ছড়াতে থাকবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
একজন কবির আবেগ-অনুভূতি ও মেধা-মননের স্বতঃস্ফ‚র্ত প্রকাশে কবিতার জন্ম। উনিশ শতকে উপনিবেশিক আবহাওয়ায় বঙ্গীয় নবজাগৃতি, প্রথম মহাযুদ্ধ, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, দমন-পীড়ন, দাঙ্গা, মন্বন্তর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইত্যাদি এবং পাশ্চাত্য দর্শন, সাহিত্যান্দোলন ও সাহিত্যাদর্শের হাওয়া বাংলা কবিতার মূল স্রোতকে বিচিত্রগামী, বিস্তৃত ও দূরসঞ্চারী করে। দেশবিভাগের শক্ত বাঁধ এই স্রোতকে কলকাতা ও ঢাকা এই দুটি ধারায় প্রবাহিত করে। বায়ান্নোত্তর বাংলাদেশের কবিতা সাংস্কৃতিক তরঙ্গভঙ্গে অর্জন করে স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর। আল মাহমুদের কবিতা একুশের ভাষা ও জাতীয়তা ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি, চেতনা ও স্বরূপ ধারণের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পালাবদলের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের আবহমান গ্রাম-সভ্যতা, লোকসংস্কৃতি, অনার্য নারী, বাংলার ঋতুজ প্রকৃতি, সাম্যবাদ তাঁর কবিতায় বারবার বাঁকবদলের মাধ্যমে বিকাশ ও বিস্তৃতি লাভ করেছে অভীষ্ট লক্ষ্যে। ফলে তাঁর কবিতার বৈচিত্র্য অর্জিত হয়েছে কাব্যিক সুষমায় এবং কবিতার ভাববস্তু নির্মিত হয়েছে শৈল্পিক উৎকর্ষে। তাঁর কবিতার শিল্পলোকে সার্বক্ষণিক বিরাজ করেছে স্বাধীন মনোভাব, লোকসাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং উত্তর-ঔপনিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি। এই মনোভঙ্গির আলোকে তাঁর কবিতার ভাব, ভঙ্গি ও গন্তব্য নির্ণিত হয়েছে।
আল মাহমুদের কবিতা বৈচিত্র্যে অসামান্য। তাঁর কবিতায় প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রধান বিষয় হয়ে প্রকাশ পেয়েছে অনার্য বাঙালি নারী-পুরুষ। বিশেষভাবে তাঁর নির্মিত নারীচরিত্র আবহমান বাংলার কৃষি-ব্যবস্থার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত। একজন কৃষক নারী সম্পর্কে যে ধারণা, সংস্কার ও চেতনা লালন করেন, কবি তার শিল্পরূপ দিয়েছেন প্রকৃতিলগ্ন উপমা-উৎপ্রেক্ষা-চিত্রকল্প-প্রতীকে। কন্যা-জায়া-জননী অর্থাৎ নারীর ত্রিরূপ চরিত্র বাংলা কাব্যে বহুলভাবে চিত্রিত, কিন্তু আল মাহমুদ নারীর এই ধারণার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেননি। কবি নারীকে হাওয়া বা ইভের উপমা থেকে শুরু করে প্রকৃতির প্রতিরূপ, গার্হস্থ্য প্রেম, বোনের রূপক, দেশজননী-বঙ্গজননী এবং শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র মানবীর চরিত্রে রূপদান করেছেন।
আমার বিষয় তাই, যা গরিব চাষীর বিষয়
চাষীর বিষয় বৃষ্টি, ফলবান মাটি আর
কালচে সবুজে ভরা খানাখন্দহীন
সীমাহীন মাঠ।
চাষীর বিষয় নারী
উঠোনে ধানের কাছে নুয়ে থাকা
পূর্ণস্তনী ঘর্মাক্ত যুবতী।
[‘কবির বিষয়’, অদৃষ্টবাদীদের রান্নাবান্না]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মোহিতলাল মজুমদার, কাজী নজরুল ইসলাম, তিরিশোত্তর কবিবৃন্দ এবং জসীমউদ্দীনের কাব্যে সৃষ্ট নারী থেকে তাঁর নির্মিত নারী স্বভাবে, মেজাজে ও ব্যক্তিত্বে স্বতন্ত্র। ফলে সহজেই আলাদা ও অনন্য স্বরূপতায় চেনা যায় আল মাহমুদের আবহমান বাঙালি নারী।অন্যদিকে বাংলা কবিতায় কাল্পনিক ও রোমান্টিক দৃষ্টিতে প্রকৃতিকে দেখার রীতি প্রচলিত, সেখান থেকে বেরিয়ে এসে আল মাহমুদ বাস্তব ও স্বাধীনরূপে প্রকৃতিকে আঁকেন। প্রথমত, কবি নান্দনিক ও দার্শনিক দৃষ্টিতে এবং সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রকৃতির স্বরূপ উন্মোচন করেন; দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপাদানের চিত্রকল্প-প্রতীকে কবি প্রকৃতিকে নির্ণয় করেন। রবীন্দ্রনাথের নান্দনিক উপলব্ধি, তিরিশোত্তর কবিদের মুগ্ধদৃষ্টির বদলে জীবন ধারণের উৎস, জীবনের প্রয়োজন, জীবনদ্ব›দ্বকেন্দ্রিক পার্থিব সম্পর্ক, নদীভাঙা বাংলাদেশের পটভূমিতে তিনি প্রকৃতিকে বাঙালি সংস্কৃতির কেন্দ্রে স্থাপন করেন।
কতদূর এগোলো মানুষ!
কিন্তু আমি ঘোরলাগা বর্ষণের মাঝে
আজও উবু হয়ে আছি। ক্ষীরের মতন গাঢ় মাটির নরমে
কোমল ধানের চারা রুয়ে দিতে গিয়ে
ভাবলাম, এ-মৃত্তিকা প্রিয়তমা কিষাণী আমার।
[‘প্রকৃতি’, সোনালি কাবিন]
প্রকৃতিকে নারীর উপমা ও ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্ররূপে চিহ্নিহ্নত করেন। তেমনি তিনি একে বিনাশী শক্তিরূপেও অঙ্কন করেন। সর্বোপরি একজন চাষীর দৃষ্টিতে কবি প্রকৃতি দর্শন করেন। একই সঙ্গে বায়ান্নোত্তর কাব্যচেতনায় উজ্জীবিত কবি আল মাহমুদ স্বদেশ আবিষ্কার, প্রত্যাবর্তন এবং তাকে ঘিরে গভীর এক বোধে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। প্রকৃতির ভেতরে এবং প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদানÑ নদী, মাটি, বৃষ্টি প্রভৃতির মাধ্যমে প্রকৃতির মধ্যে স্বদেশ সৃষ্টি করেন। বাঙালি নারীর মধ্যেও কবি নিজের দেশ খুঁজে পান।
দ্যাখো, জয়নুলের ছবির মত ঘরবাড়ি, নারী
উঠোনে ঝড়ছে ধান, ধানের ধুলোয় ম্লান শাড়ি;
গতর উদোম করে হাতে লেপা মাটির চত্বরে
লাঞ্ছিত নিশেন হয়ে পড়ে আছে যেন অনাদরে।
[‘প্রত্যাবর্তন’, কালের কলস]
তাঁর কবিতায় বাংলাদেশের নদীকেন্দ্রিক ও কৃষিভিত্তিক গ্রামজনপদের রূপকল্প নির্মিত হয়েছে এবং নগরসভ্যতার বিপরীতে লোকসংস্কৃতি স্থাপন করে সেই গ্রামীণ সমাজে ফিরে যাওয়ার তৃষ্ণা ও তাগিদ অঙ্কিত হয়েছে। জাতীয় আন্দোলন-সংগ্রাম-অভ্যুত্থান-মুক্তিযুদ্ধের অনুভব ও চেতনাময় স্বদেশ তাঁর কবিতায় নিজস্ব আঙ্গিকে প্রকাশিত। স্বাদেশিকতায় অনুপ্রাণিত হয়েই কবি দেশজননীর প্রতিমা নির্মাণ এবং তাঁর কাছে আত্মনিবেদন করেন। সঙ্গে সঙ্গে দেশের শত্রু-শক্তির বিরুদ্ধে দ্রোহী হয়ে ওঠেন। কবিতায় ব্যবহৃত লোকঐতিহ্যের বিভিন্ন রূপকল্পও তাঁর স্বদেশচেতনার পরিচয়বাহী।
আল মাহমুদ কাব্য সূচনার কাল থেকেই সমাজচেতন কবি। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বাংলাদেশের সমাজ অভ্যন্তরের পালাবদলকে তিনি কাব্যশিল্প হিসেবে ধারণ ও প্রকাশ করেন। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান দুই রাষ্ট্রিক অধীনতা থেকে স্বাধীনতার পর্ব-পরস্পরায় সমাজদেহে সংঘটিত প্রতিক্রিয়া, অনুভূতি ও চিন্তাস্রোতের কাব্যরূপ তাঁর কবিতায় স্বাক্ষরিত। কৈশোর থেকেই আল মাহমুদ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত; যৌবনে ও পরবর্তীকালে কবিতা সৃজনের সূচনাপর্বে জাতীয়তাবাদী ও স্বাধীনতা আন্দোলনে সাড়া দিয়ে কবি রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন কাব্যরচনায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর কবিতায় অঙ্কিত রাজনৈতিক চেতনার মূলে মঙ্গলবোধ, মানবিকতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এবং দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা ক্রিয়াশীল।
আমি এখন আর বঞ্চিতা বুক চাপড়ানো নারীর কান্নার সাথে
প্রকৃতির রোদনধ্বনিকে আলাদা করতে পারি না। আমি কোনো কিছুরই
প্রতিপালক তো নই। আশ্রয় বা প্রশ্রয়দাতা নই। তবু
মানুষ ও প্রকৃতির বিলাপ আমাকে দেয়াল ফুটো করার
যন্ত্রের মতো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিচ্ছে কেনো?
[‘ঢাকার রোদন’, দ্বিতীয় ভাঙন]
তিনি যুগপৎভাবে কবি ও সাংবাদিক। স্বাধীন বাংলাদেশ সৃষ্টির বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কর্মকান্ডের সঙ্গেও তিনি ক্রিয়াশীল ও সৃষ্টিশীল। জনগণ, জনমানস ও জনসমাজের অন্তগর্ত চেতনাস্রোত তাঁর কবিতায় শিল্পরূপ পেয়েছে। কোনো ধরনের উচ্চকণ্ঠ বা উদ্বেলিত ভাবকল্প তাঁর কবিতায় স্থান করে নিতে পারেনি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম, বিকাশ ও বিস্তৃতির সঙ্গে যে রাজনৈতিক ভাবধারার সৃষ্টি হয়েছে তার শিল্পরূপ আল মাহমুদের কাব্যে প্রতিফলিত। সেইসঙ্গে সাম্রাজ্যবাদী দেশ কর্তৃক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত, বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত জনগণের প্রতি কবি তীব্র সমর্থন, একাত্মতা, প্রতিবাদ ও আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কবি রাজনৈতিক চেতনায় উজ্জীবিত হওয়ায় বিশ্বমানবতা, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের প্রতি দায়বোধ এবং নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা এবং জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ের আহব্বান করেন।
মঙ্গলচেতনা, মানবমুক্তি ও মানবতার প্রতি দায়বোধ আল মাহমুদকে সাম্যবাদে দীক্ষিত করে। কৈশোরে হাতেখড়ি এবং যৌবনে কবি সাম্যবাদকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেন। প্রথমত, মার্কসীয় সাম্যবাদে উজ্জীবিত হয়ে স্বাধিকার আন্দোলন ও অভ্যুত্থান পর্বে কবি এই ধারার কাব্যরচনা করেন। গণমানুষের মুক্তি, সকল শ্রেণীর মানুষের সমান অধিকার, বৈষম্য-শ্রেণীহীন সমাজ গঠনের প্রত্যয় কবি সাম্যবাদী আদর্শের আলোকে আপন ভঙ্গিতে কবিতায় চিত্রিত করেন।
মাৎস্যন্যায়ে সায় নেই, আমি কৌম সমাজের লোকসরল সাম্যের ধ্বনি তুলি নারী তোমার নগরে,কোনো সামন্তের নামে কোনদিন রচিনি শোলোকশোষকের খাড়া ঝোলে এই নগ্ন মস্তকের পরে।
[‘সোনালি কাবিন: ৬’, সোনালি কাবিন]
এক্ষেত্রে কবি বিষ্ণু দে’র সঙ্গে তুলনাযোগ্য। দ্বিতীয়ত, কবি জেলখানার জীবনোত্তর কালে মার্কসীয় সাম্যবাদ থেকে ইসলামী সাম্যবাদে উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই রেখে কবিতার মাধ্যমে কবি মানবতার মুক্তির সাধনা করেন।আধুনিক কবিতায় ইতিহাস ও ঐতিহ্যচেতনা বিশিষ্ট জায়গা জুড়ে আছে। কবি আল মাহমুদ মানবজাতির আবহমান ইতিহাসের পটভূমিকায় কবিতার প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গ খুঁজেছেন। বিশেষত বাঙালি জাতির ইতিহাস মন্থনের মাধ্যমে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সঙ্গে সেতুবন্ধ নির্মাণ করেন। একুশোত্তর কাব্যধারায় আত্মআবিস্কার ও আত্মপরিচয়ের সন্ধানে কবি ইতিহাসের পথে পরিভ্রমণ করেন। অন্যদিকে ঐতিহ্যের প্রতি দায়বোধ করেন শেকড়সন্ধানী এই কবি। বাঙালি জাতি হিসেবে সঙ্কর হবার কারণে একাধিক ধারার ঐতিহ্যের প্রতি কবির আগ্রহ লক্ষণীয়। প্রথমত, বাঙালি ঐতিহ্যর বিস্তৃত জগতে কবির পদচারণা; দ্বিতীয়ত, সেমেটিক ঐতিহ্যের পরিগ্রহণ এবং তৃতীয়ত, লোকঐতিহ্যের প্রতি গভীর আত্মীয়তা তাঁর কবিতাকে বঙ্গীয় সংস্কৃতির মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড় করায়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিশাল ভুবনে হেঁটে হেঁটে কবি আবহমান কাল ও সমাজ-সভ্যতার সঙ্গে নিজেকে ও নিজের কাব্যধারাকে আপন শৈলীতে সংযুক্ত করেন।
আল মাহমুদকে চেনার সবচেয়ে বড় উপায় হলো তাঁর কাব্যভাষা। তাঁর যে কোনো একটি কবিতা পাঠ করে বোঝা যাবে সেটি তাঁর কবিতা। কবিতায় ব্যবহৃত প্রচলিত শব্দের বাইরে ভিন্ন অর্থ অর্থাৎ ব্যঞ্জনা সৃষ্টি, আঞ্চলিক শব্দরাজির অর্থপূর্ণ ব্যবহার, গদ্য ও কাব্যের যথার্থ মিলনের মাধ্যমে কবি নিজস্ব এক কাব্যভাষা সৃষ্টি করেন। এই কাব্যভাষার মাঝেই অন্তর্বুনন হয়ে গেছে তাঁর নারী, প্রকৃতি, সমাজ, রাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য-পুরাণ, ছন্দ, অলঙ্কার ইত্যদি। অর্থাৎ তাঁর কবিতার সামগ্রিক কাব্যকৃতি তাঁর কাব্যভাষায় স্পন্দিত। বিশেষভাবে লোকজ বা আঞ্চলিক শব্দের অভিনব প্রয়োগ তাঁর কবিতায় এনেছে ভিন্ন স্বাদ ও মাটিগন্ধি আবহ। এই কৃতিত্বের পরিচয় তাকে বাংলা কবিতায় জীবনানন্দ দাশ ও জসীমউদ্দীন থেকে স্বতন্ত্র কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে।
মৃত্যুচিন্তা কবিকে ভীত বা বিচলিত করেনি। বরঞ্চ আল্লাহর প্রতি অপরিমেয় আস্থা কবিকে সাহসী করে তুলেছে। মৃত্যুকে একটা সাময়িক বিরতির জায়গারূপে ভেবেছেন। মৃত্যুর পরে অনন্ত জীবনে যাওয়া ও স্রষ্টার সান্নিধ্য পাওয়ার ব্যাপারে কবি তাই আশাবাদী। তাঁর কবিতায় এই উপলব্ধিরও প্রকাশ ঘটেছে বিভিন্ন চিত্রকল্প ও রূপক নির্মাণের মাধ্যমে।মৃত্যুদিনশুক্রবার কামনা করেছিলেন এবং সফল হয়েছেন। এক্ষেত্রে কবির সঙ্গে স্রষ্টার আধ্যাত্মিক সম্পর্ক প্রমাণ করে।
আল মাহমুদের কবিতা মানেই বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ও প্রতিধ্বনি। কবি পরিচয়ের সঙ্গে একজন শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক, সৃজনশীল প্রাবন্ধিক, সফল শিশুসাহিত্যিক, প্রভাবশালী সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবি হিসেবে আল মাহমুদ এককথায় অসাধারণ ও অসামান্য ব্যক্তিত্ব। তবে সবচেয়ে বড় পরিচয় আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতায় একজন মৌলিক, শক্তিমান এবং ঐতিহ্যবাদী কবিপ্রতিভা। সেইসঙ্গে কবি হিসেবে বিশ্বসাহিত্যে বাংলাদেশের প্রতিনিধি।