বাংলাদেশের ব্যাংক শিল্প বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান নিয়ে কিছু কথা

120

সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপের পরও ব্যাংক ঋণে সুদের হার কেন কমছেনা এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উষ্মা প্রকাশ করেছেন। গত ১ এপ্রিল ২০১৯ এতদ্ব্যাপারে পত্রিকায় একটি খবর ছাপা হয়। জাতীয় শিল্প মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশে শিল্পায়নে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ব্যাংক ঋণ। তাঁর বক্তব্যে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে ঋণের ক্ষেত্রে উচ্চ সুদের ব্যাপারে তিনি নাখোশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে আরো গতিশীল করতে তিনি সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির প্রসঙ্গ টেনে এনে বল্লেন পূর্বে যেখানে সরকারি অর্থ সরকারি ব্যাংকে ৭০% এবং বেসরকারি ব্যাংকে ৩০% রাখা হতো সেক্ষেত্রে এখন ফিফ্টি ফিফ্টি করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে বেসরকারি ব্যাংকের তারল্য শক্তি বৃদ্ধি পাবে, নিঃসন্দেহে একথা বলা সঙ্গত। গ্রাহকদেরকে সময়মত ঋণের অর্থ পরিশোধের ব্যাপারে তাগেদা দিয়ে বলেন, মূল অর্থ এবং সুদের টাকা একসাথে পরিশোধ করে দিলে ব্যাংকগুলো সচল থাকবে। অর্থাৎ তারল্য সংকটের সম্ভাবনা থাকবেনা ব্যাংকগুলোর।
তিনি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণাও দেন। আবার অর্থমন্ত্রী আরো একধাপ এগিয়ে গিয়ে চক্রবৃদ্ধি সুদ নির্ধারণের পরিবর্তে সরল সুদের ঘোষণা দেন। জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এও বলেন, সরকার বেসরকারি খাতকে সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। যারা ব্যাংকের মালিক তারা আবার শিল্প কারখানার মালিক। যারা বড় বড় শিল্পের মালিক তারাই আবার বড়ো বড়ো ঋণ খেলাপী। তাহলে এ সমীকরণটা সত্য বলে মেনে নেয়া যায়। এটাই একটা অপ্রিয় সত্য কথা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আক্ষেপ করে একটি পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে বলেন দেশে ৭৮ লাখের মতো শিল্প কারখানা বেসরকারি খাতে আছে। প্রতিবছর সেখানে যদি ১টা মানুষের কর্মসংস্থান হয় তবে ৭৮ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হবার কথা। দ্রæত শিল্পায়নের মাধ্যমে তিনি কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি একথা অকপটে স্বীকার করেন কারো কারো শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রায় দু’বছর যাবত বন্ধ। ব্যবসায়ীরা এবং শিল্প মালিকরা যাতে নিজ পায়ে দাঁড়াতে পারে তাদের জন্য প্রনোদনা সৃজন করা হয়েছে। আমাদের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে আরো বেগবান করতে হলে কৃষিভিত্তিক শিল্পের অবশ্যকতা তিনি উপলব্ধি করেন, তাই তিনি প্রক্রিয়াজাত কৃষি শিল্পের কথা বলেছেন এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধির জন্য নতুন নতুন শিল্পবাজার খোঁজার ওপর গুরুত্ব দেন।
তাঁর কথার সার সংক্ষেপ হচ্ছে শিল্প, ব্যাবসা বাণিজ্য চাঙ্গা করতে বিনিয়োগের জন্য অর্থায়ন আবশ্যক। অর্থায়নের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যাংক ছাড়া অন্যকোন পথ উন্মুক্ত নাই একথা বলাবাহুল্য। ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা অত্যন্ত সরল স্বল্প সুদের টাকা জমা গ্রহণ করে এবং সরকারি নির্দেশনা একমতো অগ্রাহ্য করে উচ্চ এবং চক্রবৃদ্ধি সুদে ব্যবসায়িক শিল্প কারখানাতে লগ্নী করে। উৎপাদিত পন্যে সুদের এ অংক উৎপাদন খরচের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। এ অংক যদি সিঙ্গেল ডিজিটে রাখা যায় তবে উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের মালিকদের জন্য তা স্বস্তিদায়ক হতো। প্রধান মন্ত্রীর উপলব্ধি অবশ্যই প্রশংসনীয়। তাহলে বিনিয়োগে পরিধি বৃদ্ধি পাবে। তাই যদি হয় কর্মসংস্থান ইস্পিত লক্ষ্যে পোঁছতে পারবে বলে মনে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক হচ্ছে সকল তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর অভিভাবক। তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক অবিভাকদের ব্যবস্থাপত্র আমলদেয় কিনা এটাই বিবেচ্য বিষয়। না হলে এ বিষয় নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের মাথা ব্যথা থাকার কথা নয়। ৩২টি রাজ্য নিয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী ভারত রাষ্ট্র। তৎমধ্যে ২৫টি রাজ্যপাল শাসিত এবং ৭টি কেন্দ্র শাসিত। মাত্র ১৩টি ব্যাংক নিয়ে ভারত এগিয়ে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে আমাদের ক্ষুদ্র বাংলাদেশে ৬০টি ব্যাংক বিদ্যমান আরো ২টি অনুমোদনের অপেক্ষারত।
বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংখ নিয়ম-নীতি আমলে এনে ঋণ প্রদানের কথা ছিলো। রিটের শুনানি চলাকালে আদালত এমন একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলেন, সরকারি ও বেসকারি বাংকিং খাতে একটি নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে দ্রæত বেরিয়ে আসতে না পারলে অর্থনীতিতে ধস নেমে আসবে সন্দেহ নেই। আদালতের ধারণা, যারা ঋণ গ্রহণ করেছে নিশ্চিয় তারা সুকৌশলে অর্থপাচার বা অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে এ আত্মসাতের অর্থ সুইচ ব্যাংকের নিরাপদ আশ্রয়ে বা যেখানে থাকুক না কেন তা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা আদালত প্রতিবেদনে উঠে আসে। ব্যাংকিং খাতের এ অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে হিউম্যান রাইটস এন্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরশেদের করা হাইকোর্টে একটি রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দেন। গত ২৩ শে জানুযারি ব্যাংকিং খাতে অর্থআত্মসাৎ ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকগুলোতে ব্যাংকঋণের ওপর সুদ মওকুফের বিষয় তদন্ত এবং তা বন্ধের সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সহ পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের প্রতি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। ঋণ খেলাপীর প্রবৃদ্ধি, তারল্য সংকট, ফার্মারস ব্যাংকের লালবাতি প্রজ্বলন, ব্যাংক সমূহকে আর্থিক ক্লোরফর্ম প্রদান, ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় অগ্রণী ব্যাংকের ২৫৮ কোটি টাকা লোপাট ২ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা, ইত্যাদি বিষয়গুলোর ব্যাপারে ব্যাংকের ওপর আস্থাহীনতা সৃষ্টি হলে হয়তে বা অর্থনীতির স্থবিরতা সৃষ্টি হতে পারে। আমাদের নতুন অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল বেশ কিছুদিন পূর্বে এনইসি সম্মেলন কক্ষে রাষ্ট্রিয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক, বিশেষায়িত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহের পরিচালক পর্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে বলেন, চক্রবৃদ্ধি নয় সুদ হবে সহজ এবং সরল সুদ, অর্থাৎ আগামী বাজেটে ১০% হারে ঋণের টাকার ওপর সরল সুদ ধার্য্য হবে। বর্তমানে ব্যাংক ঋণে ৩ মাস. ৪ মাস ও ৬ মাসে সুদের হিসাব করা হয়। সুদের ওপরে আবারও সুদ বসানো হয়। অর্থাৎ ব্যবসায়ীদের ঋণের পরিধি ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। তা যদি বিদ্যমান থাকে তবে বিনিয়োগের জন্য উদ্যোক্তাদের আগ্রহ হ্রাস পাবে। অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের আর একটি উক্তি প্রাণিধানযোগ্য, তিনি বলেছেন মানুষদেরকে অবশ্যই ব্যাংকমুখী করতে হবে এবং ব্যাংকের প্রতি আস্থার ভাব ফিরিয়ে আনতে হবে। ব্যাংক খাত ভালো না হলে জিডিপির ইস্পিত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অজ্যিত হবার সম্ভাবনা ক্ষীন হয়ে পড়বে। ব্যাংকের নাম উল্লেখ না করে লিখছি। এক ভদ্রলোক ব্যাংকে ৫ লাখ টাকার একটি চেক উপস্থাপন করলেন। মহিলা ব্যাংক ম্যানেজার বললেন ক্যাশে এত টাকা নেই। গ্রাহক বিরক্তবোধ করলেন, ম্যানেজার গ্রাহককে কর্পোরেট অফিসে চেকটা উপস্থাপন করতে বললেন। এর ফাঁকে ছোট খাটো বিতর্ক ও প্রত্যক্ষ করলাম। ব্যাংকের এমন ধরনের আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়। এটা ব্যাংকের নীতিবিরোধী কাজ। শিল্প-ব্যাবসা-বাণিজ্য বিকশিত করতে অর্থায়নের জন্য পুঁজি বিনিয়োগের আবশ্যকতা আছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিল্প বিকাশের স্বার্থে বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পের বৃদ্ধি সাধনকল্পে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের উপর শুল্ক কর প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তারপরও তেমন উল্লেখযোগ্য ভারী শিল্প স্থাপিত হয়নি। পোশাকশিল্প থেকে অনেকে হাতগুটিয়ে ফেলেছে। শিল্পখাতে বিনিয়োগের মাত্রাঅতি নগন্য। আমাদের চোখে পড়ার মতো অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃজন হয়েছে। সরকার শিল্প-বাণিজ্যে উৎসাহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে রপ্তানীনির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে খুব বেশী উৎসাহী। মুষ্টিমেয় রপ্তানি দ্রব্য নিয়ে অর্থনীতিকে পরিপুষ্ট করা অসম্ভব প্রতিবছর আমাদের প্রতিকুল বাণিজ্য অর্থাৎ আমদানী সবসময় রপ্তানি আয় হতে বৃহত্তর এ ধারা অব্যাহত থাকলে ভ্যাালেন্স অব পেমেন্ট এ ঘাটতি জনিত কারণে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা হ্রাস প্রাপ্ত হবে। বিদেশি বিনিয়োগ সংস্থার অর্থ অনেক সময় অব্যহৃত হচ্ছে। কোন প্রকল্প বাস্তবায়িত হতে বেশি সময় ক্ষেপন আমাদের উদ্বেগের কারণ বটে। এতে করে প্রকল্প বাস্তবায়নে যেমন ব্যায়ের ক্ষেত্র প্রসারিত হয় তেমনি বিদেশি অর্থের বিপরীত সুদও বাড়ে।
শিল্পায়নে অর্থায়নের প্রয়োজন। এ অর্থায়ন এককভাবে ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবেনা। পুঁজি বাজারকে যথেষ্ট পরিমাণে চাঙ্গা করতে হবে। পুঁজি বাজারের তারল্য সংকট দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। স্বল্পপুঁজির কোম্পানীদের বেলায় কর অবকাশের সুবিধা দিতে হবে। নতুন শিল্প উদ্যোক্তাদের শিল্পে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের শিক্ষিত তরুণেরা বেশি ঝুঁকে পড়েছে চাকুরী সন্ধানে। পুঁজির অভাব এবং অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে তাদেরকে চাকুরীর ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করছে। বাংলাদেশ ঘনবসতির দেশ আমরা যদি ব্যাপক জনসংখ্যাকে মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে পারতাম তাহলে বিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মতো জায়গা করে নিতে পারতাম। আমাদের শিক্ষা ব্যাবস্থাকে গণমুখী না করে গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় অব্যাহত রেখেছে এমবিএ পাস করা তরুণরা চাকুরীর জন্য হন্য হয়ে দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভুগছে। এরা এখন রাষ্ট্রের বোঝা হিসেবে বিদ্যমান। ব্যাংকিং খাত এদেরকে আর কত চাকুরীর সংস্থান করতে পারে? সরকারি সংস্থাতে চাকুরী পদসৃজন হলে বিরাট অংকের উৎকোচ প্রদান করে চাকুরী প্রাপ্তি আকাশকুসুম কল্পনা। গোল্ডেন প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা স্থান করে নিতে পারছেনা শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করে সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ হয়ে পড়ায় চাকুরীর ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটা বন্ধ্যতাভাব বিরাজ করে আসেছ। এর পশ্চাতে কারণ হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। জনগণের অর্থ সঞ্চয় হিসেবে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হচ্ছে ব্যাংক। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর নেগেটিব আচরণ আমাদের উদীয়মান অর্থনীতির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে পড়েছে।
সঞ্চয় হচ্ছে আয়ের একটি অংশ যা ভোগব্যয়ে ব্যবহৃত হয়না। তা সাধারণ জনগণ ভবিষ্যৎ প্রভাবিত খরচাপাতির জন্য ব্যাংকে গচ্ছিত রাখে। এ সঞ্চয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মূলধনের উৎস। দরিদ্র মানুষের রক্ষিত অর্থদিয়ে ধীরে ধীরে ব্যাংকের মূলধন গড়ে ওঠে তা ঋণের আকার ধনী লোকদের পকেটভারী করে তুলে। তবে আমি ঢালাও অভিযোগ করবোনা যারা ব্যাংক থেকে অর্থ ঋণের মাধ্যমে বিনিয়োগের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের জন্য আমাদের জিডিপি রপ্তানী এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে তাদেরকে জানাই অভিনন্দন। কিন্তু যারা ভুল তথ্যের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহণ করে ব্যাংক খাতকে ফতুর করে আসছে তাদেরকে ধিক্কার জানানই। সম্প্রতি পত্রিকার সুদে জ্ঞাত হই। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যাবত দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণের পরিমাণ ৪৪ হাজার ১৮৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা। শুধু সোনালী ব্যাংকে ঋণের অংক ১২ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। জনতা ব্যাংক ১২ হাজার ২২ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংক ৮ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংকে ৫ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, রূপালি ব্যাংকে ৪ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা বাংলাদেশে ডেভেলাপমেন্ট ব্যাংক ৭৭৯ কোটি টাকা। ডিসেম্বর ২০১৮ এর ডিসেম্বর পযৃন্ত বাংলাদেশে সর্বমোট ঋণ খেলাপীর ২ লাখ ৬৬ হাজার ১১৮ জন্য। ঋণ খেলাপী প্রতিষ্ঠানের নাম পত্রিকায় দৃশ্যমান হলেও এসব এলিট শ্রেণী ব্যক্তির নাম মান-সম্মান বিবেচনা সাপেক্ষে পত্রিকায় আসেনি। পুকুরচুরির পরিবর্তে এরা বড়ো বড়ো দীর্ঘচুরির পর্যায়ভুক্তলোক। বাংলাদেশে নব্বই এর দশক থেকে ব্যাংক খাতে অব্যবস্থা চালু আছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠির টাকা নিয়ে এভাবে তেলেশমাতি কার্যকলাপ গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। বাংলাদেশে বর্তমানে বৈদেশিক সাহায্য নয় উন্নয়ন কর্মকান্ড যথেষ্ট বৈদেশিক ঋণ যুক্ত। তা পরিশোধের সক্ষমতা বিবেচনা করে দেয়া হচ্ছে। এর অর্থ এ নয় আমরা ছোট-বড়-মাঝারী ও বড়ো প্রকল্পে ঢালাও ভাবে বৈদেশিক ঋণে জালে আবদ্ধ হবো। আমাদের মাথাপিছু আয় ১৯০০ ডলারে এসে ঠেকেছে। পক্ষান্তরে মাথাপিছু ঋণের বোঝা ৩,০০০ ডলার। এদুয়ের মধ্যে পার্থক্য ৯০০ ডলার। প্রতি বছর সরকার বৈদেশিক ঋণ এবং ঋণের সুদের বাবত জাতীয় রাজস্ব থেকে বিরাট অংক ব্যয় করে আসছে। এ টাকা সরকারকে জনগণের থেকে যেকোন কৌশলে আদায় করে নিতে হয়। বিশ্বব্যাংক থেকে আই এম এফ থেকে বা এডিপি থেকে সরকার ঋণ গ্রহণ করে সুতরাং তাদের অর্থ পাইপাই করে বুঝিয়ে দিতে হলে তাদের ব্যবস্থাপত্র অনুসারে বাজেট তৈরি করতে হয়। সরকারের উচিত হবে অনুৎপাদন থাকে ব্যায় নিরুৎসাহিত করতে হবে। বৈদেশিক ঋণগ্রহণের মাধ্যমে বড়ো বড়ো ম্যাগা প্রকল্পের পরিবর্তে নতুন নতুন ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকতে হভে। আমদানীর ক্ষেত্রে সব সময় শিল্প সংরক্ষণ নীতি অনুসরণ করতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ সিরামিক উৎপাদনে বাংলাদেশ যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে তাই সম্পূর্ণভাবে বিদেশ থেকে সিরামিক পণ্য নিষিদ্ধ করতে হবে। তাহলে বাংলাদেশি এ পণ্যটার স্বার্থ সংরক্ষিত হতে বৈদেশিক প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা পাবে। ম্যানুফ্যাকচারিং পণ্যে উৎপাদনে আমাদের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। আমাদের লোকের মেধা আছে কিন্তু সুযোগ নেই। বাংলাদেশ জাহাজ তৈরিতে যথেষ্ট সক্ষমতা অর্জন করেছে। তারপর ও শিপিং কর্পোরেশনের জন্য চীন থেকে জাহাজ আমদানির কি যৌক্তিকতা থাকতে পারে এ ধরনের সিদ্ধান্তের অর্থ হচ্ছে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারার সামিল ক্ষুদ্র এক লেদমেশিনের ওয়ার্কশপে দেখলাম ইটালির ব্যাসপা টেম্পুর অন্যতম জটিল জটিল পার্টস তৈরি হচ্ছে। তা দিয়ে ৮০ দশকে ইটালীয়ান টেম্পে আজো রাস্তায় চলছে। এসব দক্ষ হাত খুঁজে বের করতে হবে। বিসিক শিল্প এলাকায় তাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে। এদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনা দেশ। এদেশেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেশেপ্রেমের প্রয়োজন। দেশের স্বার্থরক্ষাকে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিলে আমরা সাফল্যের স্বর্ণদ্বার উন্মোচন করতে পারবো।
লেখক : কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক