‘বাংলাদেশের প্রতিটি বাড়িই আমার ঠিকানা’

42

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার চার দিনের মাথায় সবকিছু ছেড়ে চলে গেলেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আওয়ামী লীগের জয়ের আনন্দে মাতোয়ারা কিশোরগঞ্জ সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে হঠাৎ করেই ডুবে গিয়েছে বিষাদের অন্ধকারে।
সৈয়দ আশরাফকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে তার চাচাতো ভাই মো. ইলিয়াস বলেন, “বাড়িতে আসলে আমি আশরাফকে একবার জিজ্ঞেস করলাম, ভাই তুমি তিনবারের মন্ত্রী। ঢাকা শহরে তোমার কোনও বাড়ি নাই, কিশোরগঞ্জ শহরেও তোমার কোনও একটা বাড়ি নাই। গ্রামের বাড়িতেও একটা বাড়ি করতে পারলা না। তোমার তো কোনও ঠিকানাই নাই। তখন সে প্রতি উত্তরে বলল, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি বাড়িই আমার ঠিকানা, প্রতিটি ঘরই আমার ঘর।”
শপথের জন্য সময় চেয়েছিলেন অসুস্থ সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। কিন্তু সেই সময়টুকু পাননি তিনি। সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। কিশোরগঞ্জ শহরে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পোস্টার-ফেস্টুন। শপথ নিয়ে কবে ফিরবেন সৈয়দ আশরাফ, এমনই প্রহর গুনছিলেন কিশোরগঞ্জবাসী। কিন্তু সেই প্রহর আর শেষ হলো না। প্রিয় নেতার জয়ে উল্লসিত মানুষের চোখেমুখে এখন কেবলই হতাশা।
ইলিয়াস আরও জানান, ‘বাড়াবাড়ি রকম সৎ ছিলেন তিনি। তার অপছন্দের তালিকায় ছিল অনিয়ম-দুর্নীতি। এসব নিয়ে দলের সুবিধাবাদীরা ক্ষুব্ধ ছিল তার প্রতি। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অধিকারী এই নেতা এলাকায় কম গেলেও মানুষ তাকে ভালোবাসতো অন্ধের মতো। সৈয়দ আশরাফের সততা নিয়ে গর্ব করতো এলাকার মানুষ। দলমত নির্বিশেষে সবার পছন্দের রাজনীতিক ছিলেন তিনি।’
সৈয়দ আশরাফের ভাতিজা মো. পারভেজ বলেন, ‘পারিবারিকভাবে আমরা তাকে অত্যন্ত সজ্জন মানুষ হিসেবেই চিনি। আমাদের তিনি খুব আদর করতেন। আমরা আমাদের একজন অভিভাবককে হারালাম।’
স্থানীয়রা বলছেন, তার বাবা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের নামে স্থাপিত মেডিক্যাল কলেজসহ নিজের নির্বাচনি এলাকায় উন্নয়নগুলো মানুষের মনে তারার মতো উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বহুকাল।
কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহান বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জ তথা বাংলাদেশের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা কোনওভাবেই পূরণ হবে না। আমরা আমাদের অভিভাবক হারালাম।’
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফ বিতর্কের ঊর্ধ্বে একজন মানুষ। তিনি কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে এনেছিলেন। কিশোরগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি। আমরা তাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখি। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৭ বছর বয়সী সৈয়দ আশরাফ থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অসুস্থতার কারণে গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদ থেকে ছুটি নেন তিনি। দেশে না থাকলেও ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তাকে বিপুল ভোটে কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে জয়ী করে, ভালোবাসার প্রতিদান দেয় এলাকার মানুষ। আজ ৬ জানুয়ারি ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে দুপুর ১২ টায় নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।