বাংলাদেশের পুঁজিবাজার-অর্থবাজার

99

গ্রাহকদের দাবি পূরণ করার সামর্থ্য সংরক্ষণের নীতিকেই বলা হয় তারল্য নীতি। আর গ্রাহকদের এ দাবি পূরণের অক্ষমতাকে বলা হয় তারল্য সংকট। প্রথম ক্ষেত্রে চাহিবা মাত্র চেকের বাহককে চেকের মধ্যে উল্লেখিত অর্থ চেকের বাহককে প্রদানে একটি ব্যাংক বাধ্য, যদি ঐ বাহকের হিসাবে প্রয়োজনীয় টাকা সংরক্ষিত থাকে অথবা যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাহকের বরাবরে চেকটা প্রদান করেছেন ঐ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হিসাবে প্রয়োজনীয় অর্থ ঐ ব্যাংকের হিসাবে মজুদ আছে যা দিয়ে চাহিবা মাত্র অর্থাৎ চেকটা উপস্থাপিত হবার পর চেকের তারিখ, চেক প্রদানকারীর স্বাক্ষর, টাকার অংকের সংখ্যা ও কথায় লিখিত অংকের টাকা পরখ করে সঙ্গে সঙ্গে নগদ অর্থ চেকের বাহককে প্রদানের বাধ্যবাধকতা আছে। তারল্যতা বলতে এমন কিছু একটা পাত্রে কিছু তরল পদার্থ সংরক্ষিত করে অন্য পাত্রে ঢেলে দেওয়া। একটা ব্যাংক পরের ধনে পোদ্দারি করে থাকে। সরল বিশ্বাসবোধ, অর্থের নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে ব্যাংক নামক প্রতিষ্ঠানে মানুষ টাকা গচ্ছিত রাখে। তাই ব্যাংক আমানত গ্রহণ, গ্রাহকদেরকে আমানতে প্রলুব্ধ করতে স্বল্প সুদের হারে সুদ প্রদান করে পক্ষান্তরে উচ্চ সুদের হারে (চক্রবৃদ্ধি সুদে) ঋণ প্রদান করে।
শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা যাবতীয় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাফল্য লাভের জন্য সমৃদ্ধ ও সুশৃঙ্খল অর্থবাজারের আবশ্যকতা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। অর্থ বাজারের ২টি শাখা একটি হচ্ছে মূলধন বাজার, অন্যটি হচ্ছে মুদ্রাবাজার অর্থাৎ ঈধঢ়রঃধষ সধৎশবঃ, সড়হবু সধৎশবঃ. মূলধন বাজারে মূলতঃ দীর্ঘমেয়াদী শেয়ার সিকিউরিটি কেনা বেচা হয়। পক্ষান্তরে মুদ্রা বাজারে স্বল্প মেয়াদী অর্থাৎ ১ বছর বা তার কম সময়ের জন্য অর্থ ও ঋণের আদায় হয়। মুদ্রাবাজারের বিভিন্ন ভাগ আছে, যেমন ক) ব্যাংকার এক্সেপটেন্স মার্কেট, ২) কমার্শিয়াল পেপার মার্কেট, গ) ট্রেজারী বিল মার্কেট, ঘ) কলমানি মার্কেট। এছাড়াও উন্নত দেশগুলোতে ইউরো ডলার মার্কেট, ইন্টারেস্ট রেইট ফিউচার মার্কেট ইত্যাদি।
মূলধন বজার এবং অর্থ বাজার পরস্পর পরিপূরক হিসেবে বিবেচ্য।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের আলোকে বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের অর্থবাজার এবং পুঁজিবার কোনটাই সুসংগঠিত এবং শক্তিশালি ভিত্তির ভিত্তিতে সুপ্রতিষ্ঠিত নয়। আমাদের মুদ্রাবাজার উন্নত দেশসমূহের মতো স্বতন্ত্রভাব স্বাধীনচিন্তা চেতনা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। উন্নত বিশ্বের দেশসমূহের মুদ্রাবাজারে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কমবেশি ২-৫ বৎসর মেয়াদের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঋণ দিয়ে থাকে, কারণ ব্যাংকের কাছে সব চাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তারল্য সংরক্ষণ করা। আমাদের দেশের মানুষের সঞ্চয়ের অভ্যেস এমনিতেই কম মানুষ চায় তার কষ্টের সঞ্চয়টুকু নির্ঝঞ্জাটে নিরাপদে ব্যাংকে সুরক্ষিত থাকুক। এ সঞ্চয় বাবদ প্রণোদনা হিসেবে ব্যাংক সঞ্চয়কারীকে কিছু মুনাফা দিক। এ প্রত্যাশায় মানুষ ব্যাংকে অর্থ জমা রাখে। কিন্তু মানুষের কষ্টের সঞ্চিত অর্থের ওপর যদি সরকার ট্যাক্সের ভ্যাটের ভাগ বসায়, সঞ্চয় প্রবণতা হ্রাস পাবে সন্দেহ নেই। সকলের সঞ্চয় বৃহত্তর মূলধনী তহবিল সৃজন করে। আমাদের সরকার বারবারই বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকে আকর্ষণ করে আসছে। এ আহবান অমূলক। বিদেশি ডাকাতদৃশ্য বিনিয়োগকারীর চাই দেশীয় কালো টাকার মালিক শতভাগ উত্তম। প্রতিবছর বাজেটে কালো টাকাকে সাদা টাকায় রূপান্তর করার ব্যাপারে একটা ব্যবস্থাপত্র জারি করা হয় তা অনুসৃত না হয়ে যদি এমন একটা নির্দেশনা জারি হতো যারা শিল্পউদ্যোগ গ্রহণ করে নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে তাদেরকে কর অব্যাহতি দেয়া হবে। তাহলে হয়ত এদেশে স্বল্প সময়ে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোমল পানীয় উৎপাদনে এগিয়ে আসবে। অর্থাৎ আমার পানি আমার চিনি মিশিয়ে ওতে ক্ষতিকারক গ্যাস যুক্ত করে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর আমাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন শর্ত আমরা আরোপ করতে পারি না। অনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে চীনের ব্যাপারে আমাদের স্বার্থযুক্ত কোন শর্তই তারা মানেনি। শুধু ৫৩,০০০ মানুষের চাকুরির সংস্থান হবে। বিদেশি বিনিয়োগকৃত শিল্পে আমাদের শ্রম আইনের শর্ত অনুসৃত হয় না। চাকুরির নিশ্চয়তা নেই। উঁচুস্তর থেকে নিম্নস্তর পর্যন্ত শ্রমশক্তি শোষণ হচ্ছে। বর্তমানে ইপিজেটগুলোতে উচ্চপদ থেকে নিম্নপদে ছাঁটাই চলছে তাদের উৎপাদন খরচা কমানোর জন্য। তাদেরকে আমরা ডেকে এনেছিলাম সস্তা শ্রমশক্তির লোভ প্রদর্শন করে। এখন যখন সর্বনিম্ন মজুরি ৮০০০ টাকা ধার্য হয় এখন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা তাদের স্বার্থ বিবেচনায় এনে বেকগিয়ারে চলতে শুরু করেছে। সুতরাং আমাদেরকে আমাদের স্বার্থে করণীয় স্থির করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য উন্নয়নশীল দেশ নয়, উন্নত দেশের কাতারে নিজেদেরকে সামিল করা। এ লক্ষ্য অর্জনের তাগিদে শিল্প বিপ্লবের আয়োজন করতে হবে। অমাদের নিজেদের বাজার নিজেদের হস্তের মুঠোয় সংরক্ষণ করতে হবে। যে কোন কিছুর বিনিময় স্বীয়শিল্পগুলোকে সংরক্ষণের দিকে তীক্ষè নজর রাখতে হবে। যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা এর সমজাতীয় পণ্য স্বদেশে প্রস্তুতের ব্যবস্থা করতে হবে। আমদানি নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। আমাদনি-রপ্তানির মধ্যে যদি সমতা বিধান করা যায়, তবে ব্যালেন্স অব পেমেন্টে সাম্যতা আসবে। আমাদের দেশ স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নত দেশে পরিণত হবে। রাজস্ব আয় প্রবৃদ্ধির জন্য আমদানিকে ঢালাওভাব উৎসাহিত করা ভুল।
আমার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে (১) পুঁজিবাজার, (২) অর্থবাজারকে নিয়ে। গত ২৮/৪/২০১৯ আমাদের মাননীয় অর্থমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে খোলামেলা বক্তব্য রেখে বলেন, পুঁজিবাজার অনিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে আছে। পুঁজিবাজারে লাইফ সাপোর্টের আবশ্যকতা আছে মন্ত্রী মহোদয়ের এ স্বীকারোক্তিই যথেষ্ট।
উন্নত দেশসমূহের অধিকাংশেরই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সংগঠিত হয়েছে সুসংগঠিত মূলধন বাজরের মাধ্যমে। ইউরোপ ও আমেরিকায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের ক্ষেত্রে মূলধন বাজার মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। মূলধন বাজারের দ্রæত জনপ্রিয়তা এবং দ্রæত ছন্দপতনকে যদি বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে বলা যা-এ বাজার পুতুল নাচের একটা ক্ষুদ্রমঞ্চ অন্ধকারে অবস্থানরত বড়ো বড়ো দুষ্টলোকের কালো সুতার টানে ছোট খাটো পুতুলগুলোকে মর্জিমাফিক নাচাতে নাচাতে কপরদহীন করে সর্বশান্ত করে ঘর ধরিয়ে দিয়েছেন। এতে করে পুঁজিবাজারে ধস নেমেছে। যারাই পুঁজিবারে লগ্নী করে বউয়ের হস্ত চুড়ি, কানে দুল এবং নাকফুল পর্যন্ত অবশিষ্ট না রেখে পুঁজিবাজারের জুয়াখেলায় সর্বশান্ত হয়ে টাকার বিনিময়ে শুধু মূল্যহীন শেয়ার সার্টিফিকেট নিয়ে রাজপথে কারবালার বিয়োগান্ত খটনার মতো মাতাম মিছিল করেছ তাদের জন্য দুঃখ হয়। যার কাছে শেয়ারবাজার। দেশের শিল্পায়ন ও বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করতে ব্যাপক পুঁজি বা মূলধন আবশক। এ ক্ষেত্রে সুদ নির্ভরশীলতার মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে অর্থায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ শিল্পায়নের জন্য, দীর্ঘ মেয়াদী পুঁজি আবশ্যক তা হতে হবে সুদহীন লগ্নী। তাই যৌথ মূলধনী শিল্প বা কারবার প্রতিষ্ঠান মূলধন বাজারে মূলতঃ দীর্ঘমেয়াদী সিকিউরিটি কেনাবেচা করে প্রাথমিক পর্যায়ে এভাবে সংগৃহীত হয় পুঁজি। অথবা নির্দিষ্ট সুদের হারে ঋণপত্র (ফবনবহঃঁৎব) বিক্রির মাধ্যমে পুঁজি।
অস্টাদশ শতাব্দীর শেষেরদিকে শিল্পবিপ্লবের সাফল্যে পশ্চাতে ছিলো পুঁজিবাজারের শতভাগ পৃষ্ঠপোষকতা। কারবার সংগঠনে দু’ধরনের কোম্পানির অস্তিত্ব দেখা যায়। (১) পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি (২) প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। শুধুমাত্র পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি জনসাধারণের নিকট প্রকাশ্যে শেয়ার বিক্রির অধিকার রাখে। কোম্পানি তার মূলধনকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে বিভক্ত করে। প্রতিটি এককে বিভক্ত করে। প্রতিটি এককে বলা হয় শেয়ার। পরিমেল নিয়মানবলীর বিধান অনুযায়ী এ সম্পদ হস্তান্তরযোগ্য। প্রাথমিকভাবে শেয়ার বিক্রির জন্য জনসাধারণের প্রস্তাব আহবান করা হয়। অত্যাধিক শেয়ার আবেদনপত্র জমা পড়লে কোম্পানি লটারির ব্যবস্থা করেন। ভাগ্যবান ব্যক্তিকে কোম্পানি শেয়ার অনুমোদন করে ঠিকানা বরাবরে চিঠি পাঠিয়ে প্রাথমিক শেয়ারের মালিক বা কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার রূপে গণ্য করে। প্রাথমিক শেয়ার নিয়ে চলে জুয়া খেলা। হয়তঃ ১ লট প্রাথমিক শেয়ারের ফেসভ্যালু ৫০০০ টাকা। হয়তঃ দেখা গেলো স্টক এক্সেচেঞ্জের মাধ্যমে মাধ্যমিক পর্যায়ে এ শেয়ারের ১ লটের মূল্য ৫০০০ টাকার স্থলে হয়ে গেলো ২৫০০০ বা ৫০০০০ টাকা তখন এ কোম্পানি শেয়ারের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়ে যেতে শুরু করে তখন কোটি টাকার রাঘব বোয়ালেরা এ শেয়ারের আরো কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে শেয়ার বাজারে কৃত্রিম চাহিদা বাড়াতে থাকে গরীব দুঃখী এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোকের আর্থিক লাভ প্রাপ্তিতে প্রলুব্ধ হয়ে এ শেয়ার কিনতে ওঠে পড়ে লেগে যায়। ধীরে ধীরে রাঘব বোয়ালরা তাদের রক্ষিত শেয়ার বাজারে ছেড়ে কোটি টাকার মুনাফা তুলে নেয় তখন ঝবপড়হফধৎু শেয়ারে বাজার সয়লাব হয়ে পড়ে এবং দরপতনের পালা। দর পতনের যাদুগরিতে অনেক সময় ভধপব াধষঁব র নিচে পর্যন্ত দরপতন হতে দেখা যায়। ততক্ষণে দারিদ্র এবং মধ্যবিত্তরা সর্বশান্ত হয়ে মাতাম শুরু করতে করতে রাজপথে নেমেছে। ধনিক শ্রেণী আরো ধনী হলো দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী আরো গরীব হলো। এ ফটকা কারবারকে রুধবার জন্য কেউ এগিয়ে আসলোনা। কোরআনে এক মূল্যবান উক্তি আছে ‘ যে সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই সে ক্ষেত্রে অনুমান দ্বারা পরিচালিত হইওনা ’। আন্দালিপ রহমান এক উঠতি তরুণ রাজনীতিবিদ। বক্তৃতা দিতে উঠলে কথায় কথায় শেয়ার বাজার নিয়ে তার প্রতিপক্ষ দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে শেয়ার মার্কেট নিয়ে উচ্চবাচ্যে সরগম করে তুলে । জুয়ারী যদি জুয়া খেলার সর্বস্ব হারিয়ে কর্পদহীন হয়ে যায় এতে সরকারের করার কি আছে ? কই আমি তো শেয়ার মার্কেটে এক আনা পায়সাতো গচ্চা দেইনি। ইউনিপে টু চমকদার লোভের টোপ দিয়ে আমার ক্ষতি কারতে পারেনি। ইসপিক এশিয়া আমার চুল পরিমাণও ক্ষতি করতে পারে নি, ক্ষতি করতে পারেনি ডেসটিনি ২০০০। তাই বিবেক বুদ্ধিহীন ভাবে স্টক মার্কেটে পুঁজি বিনিয়োগ করলে এর দায়ভার কিন্তু শতভাগ সরকারে স্কন্দে বর্তাবেনা তবে মুলধন বাজার যদি ঙৎমধহরুবফ ঈধঢ়রঃধষ গধৎশবঃ হতো বেশী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতো তবে শেয়ার মার্কেট অধিক শক্তি সঞ্চারে সক্ষমতা অর্জন করতে পারতো। একটা সুশৃঙ্খল স্টক মার্কেট অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রধান নিয়ামক শক্তিরুপে শিল্প বাণিজ্যের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করতে পারতো। শেয়ার বাজারের সে চাঙ্গাভাব নেই। এ ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র মাজারী বা সর্বস্তরের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি আস্থাহীনতার ভাব সৃষ্টি হয়েছে। তাই মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘ আমাদের এগিয়ে যাওয়ার থমতে যাবে যদি পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারি। তিনি আস্বস্থ করেছেন পুঁজিবারে বিদ্যমান সমস্যাগুলো একে একে সমাধান করবেন। তিনি বলেন, আর ১০টি দেশের পুঁজিবাজার যেভাবে চলে আমাদের পুঁজিবারও সেভাবে চলাবার চেষ্টা করা হবে।
মূলধন ও মুদ্রাবাজার পরস্পর পরিপূরক হলেও পুঁজিবাজার অসম্মান জনকভাবে আউট হয়ে ক্রীজের বাহিরে। এর আস্থা সৃষ্টির জায়গা পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হওয়া আবশ্যক। কিন্তু এখন ৬০টি সামনে ৬২তে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে যে ব্যাংকপাড়া আমাদের দেশে গড়ে উঠেছে তাও অনেক বদনাম নিয়ে বিদ্যমান। ব্যাংকখাত হচ্ছে অর্থনৈতিক মেরুদন্ড। ঋণখেলাপীদের কারণে ব্যাংক খাতটির মেরুদন্ড দুর্বল হয়ে ন্যূয়ে পড়েছে। ১৯৭২ সালে আমাদের তপসীলি ব্যাংকের সংখ্যা ৮টি যতা (১) সোনালী (২) জনতা (৩) অগ্রণী (৪) রূপালী (৫) কৃষি (৬) বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক (৭) পূবালী (৮) উত্তরা ব্যাংক। রাষ্ট্রয়ত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংক উল্লেখযোগ্য। ঋণখেলাপীদের কারণে ব্যাংক সমূহে তারল্য সংকট বিদ্যমান। সরকারী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি পূরণে সরকার গত ২০১২- ১৩ অর্থ বছর হতে ২০১৭-১৮ অর্থবছর অবধি এ ছয় বছরে ক্লোরোফর্ম হিসেবে নানা উপায়ে ১২ হাজার ৪৭২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা দিয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসব ব্যাংকের ঘাটতি পূরণে সাধারণ জনগণের ট্যাক্সের টাকায় মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য লাইফ সাপোর্ট হিসেবে আরো ১৫০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা আছে। ব্যাংকে রক্ষিত নিজের টাকা পেতে অপেক্ষা করতে হয়। এতে ব্যাংকের ওপরও সৃষ্ট হচ্ছে আস্থাহীনতা। বেসরকারী খাতের উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ সুবিধা আবশ্যক। এ মূল্যবান উক্তি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারী শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা। সালমান এফ রহমান সাহেবের ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদী ঋণের উপযুক্ত স্থান নয়। তা হলো অবস্থাদৃষ্টে মনে করা সংগত সাম্প্রতিক সময়ে অর্থবাজার ও পূঁজিবাজার বিভিন্ন কারণে ক্ষতবিক্ষত। এ দুটো খাতের ক্ষত সারাতে কাদাছোড়াছুড়ি নয় বরং একটা গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাপত্র তৈরী করে দুটি খাতের মধ্যে শৃঙ্খলা বোধ সৃজন আবশ্যক। কথা আছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে সামিল করা। একটা জিনিস না বললে নয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা ছিলো সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে বা এক অংকের ঘরে রাখা আবার অর্থমন্ত্রী বললেন আগামী বাজেটে ১০% সরলসুদ ধার্য ব্যাপারে তিনি প্রস্তাব রাখবেন সালমান এফ রহমান সাহেব বলেন শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গেলে আমাদের পুঁজিবাজারকে অবশ্যই কার্যকর রাখতে হবে। বিকাশমান অর্থনীতির ক্ষেত্রে একটা হচ্ছে উৎকৃষ্ট পন্থা। কিন্তু শেয়ার বাজারে লগ্নী করতে গিয়ে মানুষ যে ফতুর হয়ে দস্তুরমতো খেলার মাঠ থেকে ১,২ রাউন্ডে নক আউট হয়ে অবসর জীবনে অভ্যস্থ হয়ে পড়েছে। এখন ক্ষীণ আসায় ব্যাংক নাম প্রদীপ শিখা প্রজ্বলিত । এ খাতের ওপর যাতে কোন খল চক্ষু পতিত না হয়ে যাতে অস্তিত্বের লড়াই বিদ্যমান থাকে তই প্রত্যাশা করছি।
লেখক: অর্থনীতি বিশ্লেষক, কলামিষ্ট