বাংলাদেশিদের জন্য শীঘ্রই খুলছে আমিরাতের শ্রমবাজার

282

প্রায় ৬ বছর ধরে বন্ধ থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের শ্রমবাজার শীঘ্রই বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে। দুবাইভিত্তিক অনটাইম গভর্নমেন্ট সার্ভিসেস তাদের কার্যক্রম ও অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে প্রসারিত করছে। ভিসাসহ সব ধরনের সেবা দিতে চট্টগ্রামসহ দেশের তিনটি জেলায় (বাকি দুটি ঢাকা ও সিলেট) শাখা খোলার পরিকল্পনা করেছে সংস্থাটি। এ সংস্থার কার্যক্রমের আওতায় বাংলাদেশি নাগরিকরা ‘ওয়ানস্টপ সার্ভিসের’ মাধ্যমে সেবা পাবেন। আগামী জুন-জুলাই মাসে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম শুরু হবে। এ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে ৪ লাখের বেশি বাংলাদেশিকে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হবে।
এই প্রথমবারের মতো সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভিসার যাবতীয় কার্যক্রম চট্টগ্রামেই সম্পন্ন করা যাবে। আগে আমিরাতের ভিসার জন্য বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষজনকে ঢাকায় দৌঁড়াতে হত। অনটাইমের মাধ্যমে কাজ শুরু হলে এখানকার ভিসা প্রত্যাশীদের চট্টগ্রামেই এ সেবা প্রদান করবে স্মার্ট গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এতে মানুষের ভোগান্তি ও অর্থের অপচয় বন্ধ হবে।
এদিকে ভিসা দেওয়া শুরু হলে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ দ্রæত হারে বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষরা।
রাজধানীর গুলশানে বাংলাদেশস্থ সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) দূতাবাসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। এ সময় অনটাইম গভর্নমেন্ট সার্ভিসেসের পক্ষে চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ওয়ালিদ বিন আবদেল কারিম ও বাংলাদেশে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থার পক্ষে স্মার্ট গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ও ইউনিক গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নূর আলী পৃথকভাবে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। এ সময় জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক সেলিম রেজা, ঢাকায় নিযুক্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত সাঈদ মোহাম্মদ আলী মেহেরি, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অভিবাসী অনুকল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে আমিরাতে রাষ্ট্রদূত সাঈদ মোহাম্মদ আলী মেহেরী বলেন, বাংলাদেশ ও আরব আমিরাতের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আগামীতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে। ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে অনটাইম গভর্নমেন্ট সার্ভিসেস ও বাংলাদেশে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে। আশা করি এতে সবাই উপকৃত হবেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী জুনেই অনটাইম ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে কার্যক্রম শুরু করবে। চট্টগ্রামে স্মার্ট গ্রæপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও ঢাকায় বোরাক ট্রাভেলস লিমিটেড অনটাইম গভর্নমেন্ট সার্ভিসেসের হয়ে কাজ করবে। এসব সংস্থা সম্পূর্ণ মানসম্মত এবং অনুমোদিত পরিবেশে সব ধরনের ভিসা, মেডিক্যাল, লাইসেন্সিং, কোম্পানি নিবন্ধন, প্রাক-ওরিয়েন্টেশন এবং টিকেটিং সেবা প্রদান করবে। অনটাইম থেকে সার্ভিসপ্রাপ্ত কর্মীর মেডিক্যাল মাত্র একবারই সম্পন্ন করা হবে। এছাড়া সব ধরনের ভিসা, অভিবাসী, গ্রাহক, ব্যবসায়ীরাও তাদের কাক্সিক্ষত সেবা পাবেন অনটাইম সার্ভিসেস থেকে।
সংবাদ সম্মেলনে দুই দেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জানানো হয়, অভিবাসনে সহযোগিতার লক্ষ্যে অনটাইম বাংলাদেশের জন্য ওয়ান স্টপ সেবা দেবে। যেখানে ভিসা খরচ এবং বিদেশে অভিবাসন আগের চেয়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন করা হবে। মেডিক্যাল হবে শুধু একবার এবং এটি করা হবে অনটাইম সেন্টারগুলোয়, যা কর্মীদের জন্য প্রসেসিং সময় কমিয়ে দেবে।
আরও জানানো হয়, গত দুই দশক ধরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি ও করপোরেট খাতে শীর্ষ সরকারি চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনটাইম কাজ করছে। প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানটি ২০ লাখের বেশি মানুষকে সেবা দিয়ে আসছে। ভালো মানের সেবার স্বীকৃতি হিসেবে এরই মধ্যে অনটাইম গভর্নমেন্ট সার্ভিসেস বেশকটি পুরস্কারও জিতেছে। এর মধ্যে রয়েছে-মোহাম্মদ বিন রশিদ এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, এসএমই ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং কোম্পানি অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট প্রফেশনাল সার্ভিস সেন্টার অ্যাওয়ার্ড, অল ওয়ার্ল্ড নেটওয়ার্ক অ্যারাবিয়া ৫০০ কোম্পানি অ্যাওয়ার্ড, মিডল ইস্ট ফাস্ট গ্রোথ ৫০০ কোম্পানি এবং জিসিসি ফাস্টেট গ্রোথ ১০০ কোম্পানি অ্যাওয়ার্ড। পুরো আরব আমিরাতে অনটাইম গভর্নমেন্ট সার্ভিসেস ২৭টির বেশি সার্ভিস সেন্টার পরিচালনা করে, যাতে ওয়ান স্টপ লোকেশনে বন্ধুত্বপূর্ণ, দক্ষ ও নিয়মিতদের সরকারি চাকরি প্রদান করা যায়। বিশেষ করে আরব আমিরাত ও বিদেশে সরকারি চাকরিপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালুতে আরব আমিরাতের প্রধানমন্ত্রী ও দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের যে ভিশন রয়েছে, সে অনুযায়ী অনটাইম গভর্নমেন্ট সার্ভিসেস সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, অনটাইম গভর্নমেন্ট সার্ভিসেস বাংলাদেশ সরকারকে যেমন সাহায্য করবে, তেমনি এখানকার অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সাহায্য করার লক্ষ্যে ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করা হবে, যেখানে ভিসার খরচ মেটানো থেকে শুরু করে বিদেশে অর্থ স্থানান্তর এবং জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপনও দেওয়া হবে। যাতে কোনো অভিবাসী শোষণের শিকার না হন। অনটাইম সেন্টার অভিবাসন প্রত্যাশীদের প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে সময় কমিয়ে আনবে। এ জন্য বাংলাদেশ সরকার, দূতাবাস, বায়রা, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং নিয়োগকারী এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কাজ করবে। এ ছাড়া শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার আগে অভিযোজন, সনদপ্রাপ্তি ও নিরাপত্তার বিষয়েও কাজ করবে অনটাইম। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি যে দেশে শ্রমিক যাবে সেখানকার আইন, ধর্ম, সংস্কৃতি, কাজ ও বেতনপ্রাপ্তি সম্পর্কে অভিবাসীদের সচেতন করবে।
সংস্থাটি একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বিজনেস লাইসেন্স প্রদান ও প্রক্রিয়াকরণের সময় বাঁচিয়ে সরাসরি ভিসা আবেদন এবং হোটেল, ফ্লাইটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে খরচ কমাবে।