বাঁশখালীতে সংঘাতে চার জনপ্রতিনিধি

115

বাঁশখালীতে পৃথক দুটি ঘটনায় চারজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি একে অপরের সাথে সংঘাতে জড়িয়েছেন। গত শুক্রবার বিকেল ও গতকাল শনিবার সকালে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড এবং শীলকূপ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডে ঘটনা দুটি ঘটে। জনপ্রনিধিরা নিজেরাই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দুটি ঘটনাতেই একে অপরের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন চার জনপ্রতিনিধি। সংঘাতে জড়ানো জনপ্রতিনিধিরা হলেন, পৌর মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী, কাউন্সিলর নজরুল কবির সিকদার, শীলকূপের ইউপি সদস্য মো. ফিরোজ সিকদার ও মহিলা সদস্য রাবেয়া বেগম।
বাঁশখালী থানার ওসি মো. কামাল হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, দুটি ঘটনাই আমি শুনেছি। কিন্তু কেউ এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলেই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা যায়, বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী ও ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল কবির সিকদারের মধ্যে আগে থেকেই দ্ব›দ্ব চলে আসছিল। দুইজনের বাড়িই একই ওয়ার্ডে।
গত শুক্রবার বিকেলে গাড়ি নিয়ে কয়েকজন সঙ্গীসহ মেয়র বাড়িতে যাওয়ার সময় কাউন্সিলর নজরুল কবির সিকদারের বাড়ির সামনে হামলার শিকার হন। এসময় গাড়িটির কিছু অংশ ভাঙচুর করে গাড়িতে থাকা আনছার নামে মেয়রের এক সমর্থককে বেদম মারধর করা হয়। কাউন্সিলর নজরুল কবির সিকদার ও তাঁর ভাইয়েরা মিলে হামলার ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে দাবি করেছেন মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী।
বাঁশখালী পৌরসভার মেয়র শেখ সেলিমুল হক চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমাকে এক মহিলা কাউন্সিলরের মাধ্যমে নজরুল জানায় প্রতিজন কাউন্সিলরকে এক লক্ষ টাকা করে দিতে হবে। অন্য কোনো কাউন্সিলর বিষয়টি নিয়ে কথা না বললেও নজরুল টাকা দাবি করতে থাকে। না দেয়ায় তার ভাইদের নিয়ে আমার গাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এলাকায় কেউ মাটি কাটলে, গাছ কাটলেও তাদের কাছ থেকে সে টাকা দাবি করে। টাকা না পেলে সে পাগল হয়ে যায়। টাকা না পেয়ে আমিসহ কয়েকজন গাড়িতে করে বাড়ি যাওয়ার সময় হামলা চালিয়েছে। আমি এ ঘটনায় নজরুলসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছি।’
কাউন্সিলর নজরুল কবির সিকদার পূর্বদেশকে বলেন, ‘মেয়র আমার চাচা। একই বাড়ি। তেমন কিছুই হয়নি। উনি যখন আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনেছেন কিছু কথা বলতেই হয়। উনি টেন্ডারের কাজ নিজেই ছয়টি রেখে দিয়েছেন। কাজগুলোতে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। একজনের জায়গায় পিলার বসিয়ে দিয়ে বিচার করেছেন। আমি মুখ খুললে উনার মেয়রগিরি নিয়ে টানাটানি হবে। আমরা কাউন্সিলররা উনার অনিয়ম সাড়ে তিন বছর ধরে সহ্য করেছি। পৌরসভার সামনে দোকান নিয়ে কি অনিয়ম হয়েছে তদন্ত করলে বের হবে। মিথ্যা মামলা হলে আমরা কোনোভাবেই ছাড় দিব না।’
অপর ঘটনাটি ঘটেছে শীলকূপ ইউনিয়নে। ৯নং ওয়ার্ডে ব্র্যাকের ঘরণী প্রোগ্রামের মশারী বিতরণকালে মেম্বার মো. ফিরোজ সিকদার ও মহিলা মেম্বার রাবেয়া বেগমের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। মশারী বিতরণ নিয়ে দুই পক্ষের বাকবিতÐার এক পর্যায়ে রাবেয়াকে উদ্দেশ্য করে মোবাইল নিক্ষেপ করেন মেম্বার ফিরোজ। তাৎক্ষণিক মুঠোফোনটি নিয়ে ফিরোজের উদ্দেশ্যে নিক্ষেপ করলে এতে ফিরোজের চোখের নিচে লেগে রক্ত বের হয়। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শীলকূপ ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য রাবেয়া বেগম পূর্বদেশকে বলেন, ‘৮নং ওয়ার্ডে মশারীর স্লিপ বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন মেম্বার ফিরোজ। আমার ওয়ার্ডের কয়েকজন মহিলা মশারী পাচ্ছেন না বলে জানালে আমি সেখানে যাই। মশারী যারা দিচ্ছেন তাদেরকে বললে ফিরোজ ক্ষমতা না দেখাতে বলে আমাকে। এক পর্যায়ে আমার হাতে থাকা একটি স্লিপ নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে। আমি এর প্রতিবাদ করলে তার মোবাইলটি আমার দিকে ছুঁড়ে মারে। আমি তাৎক্ষণিক মোবাইলটি পুনরায় তার দিকে ছুঁড়ে মারি। বিষয়টি আমি থানায় জানিয়েছি।’
শীলকূপ ইউপির ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য ফিরোজ সিদকার পূর্বদেশকে বলেন, ‘টেবিলে রাখা আমার মোবাইলটি ছুঁড়ে মেরেছেন মহিলা মেম্বার। এতে আমার চোখের উপর-নিচে লেগে আমি আহত হয়েছি। আমি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে এসেছি। আমি কোনো স্লিপ ছিঁড়ি নাই। ওর উপর হামলা চালিয়েছি বললে আঘাতের চিহ্ন দেখাতে বলেন। ব্র্যাকের লোকজন ঘটনাটি দেখেছে। এ ঘটনায় মামলা করার চিন্তা করছি।’
বাঁশখালী থানার উপ-পরিদর্শক মো. ফারুখ উদ্দিন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে যায়নি। ফিরোজ মেম্বার আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে পূর্বপরিচিত হওয়ায় থানার সামনে এসে ফোন দিলে বের হই। আমি ঘটনাস্থলে গেছি বলে ফিরোজ যে দাবি করছে তা মিথ্যা। ওরা যখন দুইজনই জনপ্রতিনিধি, নিয়ম অনুযায়ী যা হবার তাই হবে। এখানে আমার করার কিছু নাই। বিষয়টি ইউএনও স্যার ও ওসি স্যার দেখবেন।’