বাঁশখালীতে মালিক-চালকের ‘কৌশলে’ তীব্র গাড়ি সংকট

78

দশ মিনিট পরপর কাউন্টারে আসার কথা স্পেশাল সার্ভিসের বাস। আধঘণ্টা পরপর আসার কথা সুপার সার্ভিস। বছরজুড়ে এ নিয়মে বাস চললেও ঈদ ও দীর্ঘ ছুটিতে এ নিয়ম মানা হয় না। বাঁশখালী পরিবহন মালিক ও চালকরা কৌশলে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। স্পেশাল ও সুপার সার্ভিসের বাস কমিয়ে দেন। যে কারণে ঘন্টাখানেক পরপর একটি গাড়ি আসে। এতে বাধ্য হয়েই যাত্রীরা লোকাল বাসে চড়েন। আর স্পেশাল ও সুপার সার্ভিস হয়ে চলা বাসগুলোই বাড়তি ভাড়া আদায়ে লোকাল বাস হয়ে যায়।
যাত্রীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বাস মালিক-চালকদের এমন কৃত্রিম সংকটের সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন সিএনজি অটোরিকশা চালকরাও। যাত্রীর চাপের সুযোগে বাঁশখালী উপজেলা সদর থেকে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু পর্যন্ত আদায় করছেন ১৫০-২০০ টাকা। লোকাল বাসে আদায় করছেন ১০০-১৫০ টাকা। মানুষ বেশি দেখলেই বাসমালিক, গাড়িচালক, লাইনম্যান সবার চরিত্র এক হয়ে যায়। শহর এলাকায় বিআরটিএ বাড়তি ভাড়া আদায় করা বাসে জরিমানা করলেও উপজেলায় প্রশাসনের তেমন হস্তক্ষেপ না থাকায় বেপরোয়া আচরণ করেন বাঁশখালীর মালিক-চালকরা। তাদের কাছে যেন বাঁশখালীবাসী জিম্মি।
এ বিষয়ে জানানো হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার পূর্বদেশকে বলেন, ‘আমি বিষয়টির খোঁজ নিচ্ছি। বাড়তি ভাড়া আদায় করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
গতকাল সরেজমিনে জলদী বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারে যাত্রীর ব্যাপক চাপ। কাউন্টার ক্লার্ক টিকিট বিক্রি করলেও গাড়ি আসছে ঘণ্টাখানেক পরপর। নির্ধারিত সময়ে গাড়ি না আসায় যাত্রীর চাপে হিমশিম খাচ্ছিলেন কাউন্টার ক্লার্ক। প্রতিঘণ্টায় কমপক্ষে পাঁচটি করে গাড়ি না আসায় যাত্রীর চাপ বাড়তে থাকে। একটি স্পেশাল ও সুপার সার্ভিসের বাস আসলেও আরো চারটি গাড়ি কাউন্টার পাশ কাটিয়ে লোকাল যাত্রী নিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এমনকি স্পেশাল ও সুপার সার্ভিসের চালক-হেলপাররা কাউন্টারে ফোন করে টিকিট না দিতে জানিয়ে দেন। তারা পথিমধ্যেই বাড়তি ভাড়ায় যাত্রী তুলে নির্ধারিত কাউন্টার থেকে যাত্রী না নিয়ে চলে যান শহরে। যে কারণে প্রতিটি কাউন্টারে শতশত যাত্রী আটকা পড়েন। বিষয়টি যাত্রীরা মালিক সমিতির নেতাদের জানালেও কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। হঠাৎ করে কৃত্রিম গাড়ি সংকটের বিষয়েও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
সূত্র জানায়, বাঁশখালী রুট ব্যবহার করে চকরিয়া-পেকুয়া থেকে নতুন একটি বাস সার্ভিস চালু নিয়ে মালিকপক্ষ ব্যস্ত আছে। এ রুটে অন্য কোন পরিবহন না থাকায় ভালোভাবেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে তারা। নিত্য নতুন নামে সার্ভিস চালু করলেও সেবার মান যাচ্ছেতাই বাঁশখালী পরিবহনের। আবার নতুন করে চালু হতে যাওয়া গাড়িগুলো বাঁশখালী সড়ক ব্যবহার করলেও বাঁশখালী থেকে কোন যাত্রী নিবে না। পুরানো মোড়কে নতুন বাস নামানোর এমন কৌশল প্রতিহত করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন যাত্রীরা। এছাড়াও যাত্রী হয়রানি বন্ধের উদ্যোগ নিতে জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ চান বাঁশখালীবাসী। ঈদের সময় কয়েকটি গাড়ি সাহেবের হাট এলাকায় আটকিয়ে বাড়তি ভাড়া ফেরত নিতে বাধ্য করেছিল যুবকরা।
বাঁশখালীর যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম ও ইসমাইল হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, বাস মালিক-চালকরা ঈদের সময় কাউন্টার থেকেই বাড়তি ভাড়ায় টিকিট বিক্রি করেছে। শহর থেকে বাঁশখালী যেতে প্রতিটি কাউন্টারে প্রেমবাজার পর্যন্ত ভাড়া আদায় করেছে। যেখানেই যাত্রী নেমেছে ভাড়া দিতে হয়েছে প্রেমবাজার পর্যন্ত। ফিরতি পথে কাউন্টারে বাড়তি ভাড়া না নিলেও গাড়ি সংকট দেখিয়ে তা পুষিয়ে নিয়েছে লোকাল বাস চালিয়ে। এটা মালিকদের কৌশল। এরা প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এমন অপকর্ম চালায়। এদের প্রতিহত করা না গেলে বাঁশখালীবাসীর দুর্ভোগ শেষ হবে না। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও এগিয়ে আসতে হবে।