বাঁশখালীতে ‘এডিট’ করা ছবি নিয়ে বিপাকে পুলিশ

71

বাঁশখালীর চাম্বলের পাহাড়ে জায়গা দখল ও গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলছে। কয়েকদফা গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। একপক্ষ অপর পক্ষকে ফাঁসাতে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে চাম্বলের তালুকদার মার্কেটে আবারো দুই পক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। সেদিনের ঘটনাকে পুঁজি করে বিরোধীয় একটি পক্ষ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশল নিলে উল্টো বিপাকে পড়ে পুলিশ।
সূত্র জানায়, চাম্বলের শহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি পাশে অস্ত্র রেখে চিকিৎসা নিচ্ছেন এমন একটি ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। পরে জানা যায়, ছবিটি ছিল নকল। বিরোধীয় পক্ষ প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এমন এডিট করা ছবি সাংবাদিকদের সরবরাহ করেছেন। আর এ ছবি পত্রিকায় ছাপানোর পরপরই প্রকৃত ছবিটি সামনে আসে। পুলিশও বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের চেষ্টা চালায়।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, ঐদিনের ঘটনার ছবি এটা না। সেদিনের ঘটনায় কোন আহত ছিল না। এটা পূর্বের কোন ছবি। দুইটা ছবিই আমাদের কাছে আসছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। আপনারা (সাংবাদিকরা) সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য দিতে না পারলে আমরা বেকায়দায় পড়ি। কারণ আপনাদের অনেক তথ্যই আমরা গুরুত্ব সহকারে নিই।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এমডি সাইদুল ইসলাম আকাশ নামে একজনের ফেসবুক আইডিতে গত বছরের ২৮ নভেম্বর আহত শহিদুল ইসলামের ছবিসহ সুস্থতা কামনা করে পোস্ট দেওয়া হয়। সে সময় পোস্ট করা ছবির পেছনে ঔষুধের টেবিল ও ঝাড়– রাখা ছিল। টেবিলের উপর ব্যান্ডেজকৃত পা রাখা শহিদের সামনে ছিল সাদা রঙের মোবাইল সেট। কিন্তু গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে শহিদের শারীরিক গঠন ও পোশাক একই হলেও সামনে রাখা মোবাইলের পাশে একটি পিস্তল রাখা হয়। একইসাথে শহিদের পেছনের দৃশ্যপটও ঝাপসা দেখা যায়। যে কারণে প্রকাশিত ছবিটিতে পেছনের টেবিল দেখা যাচ্ছে না।
চাম্বলের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম পূর্বদেশকে বলেন, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে আমি চাম্বল বাজারে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হই। এতে আমার পায়ে ব্যান্ডেজ করতে হয়। আমি যখন ফার্মেসিতে ব্যান্ডেজ করছিলাম তখনি আমর এক ছোট ভাই ছবিটি ফেসবুকে দেয়। এ ছবিটি নিয়েই ষড়যন্ত্রকারীরা এডিট করে পাশে পিস্তল বসিয়ে দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে। থানাকে বিষয়টি অবহিত করেছি। ওরা আমাকে মেরে ফেলার সবধরনের চেষ্টা করছে।
এদিকে গত কয়েক মাস ধরে চাম্বলের পাহাড়ি এলাকায় দুটি পক্ষের মধ্যে কয়েকদফা গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। গত মাসে রিদুয়ান নামে এক ব্যক্তিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারের পরপরই মূলত দুটি পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা আরো বাড়তে থাকে। চাম্বলের ওই পাহাড়ি এলাকায় দুটি পক্ষ সন্ত্রাসীদের একত্র করে ব্যাপক অস্ত্রের ব্যবহার করছে। এমনকি প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে এক পক্ষ অপর পক্ষকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। সন্ধ্যা নামতেই সেখানে গুলাগুলির ঘটনা ঘটছে। গত কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে এক সন্ত্রাসী আড্ডা দিচ্ছে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। চাম্বলের দুই পক্ষের এমন উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেজাউল করিম মজুমদার পূর্বদেশকে বলেন, চাম্বলের বিষয় নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা নীতিগতভাবে অ্যাকশনে যাব। কাউকেই ছাড় দিব না। কোন গ্রুপ মানি না। অপরাধীর কোন গ্রুপ থাকতে পারে না। আমাদের কোন পক্ষ নাই। সে যেই হোক। মারামারি করলে অস্ত্রধারী থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিব। আমাদের কাছে সবাই সমান।