বাঁশখালীতে আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারে দরপত্র আহবান

28

বাঁশখালীতে ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারে বড় ধরনের অনিয়মের রেশ না কাটতেই আরো ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারের তোড়জোড় শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন। গত ৮ মার্চ নতুন করে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সংস্কারে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আজ সোমবার থেকে আগামি বুধবার পর্যন্ত দরপত্র বিক্রি করা হবে। আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কারের ৯টি প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৪৬ টাকা। সংস্কার কাজগুলো ভাগিয়ে নিতে বরাবরের মতো এবারো তৎপরতা শুরু করেছেন বাঁশখালী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় ভিত্তিক ঠিকাদার সিন্ডিকেট। যারা দীর্ঘসময় ধরেই এই অফিসের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন।
বাঁশখালী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবুল কালাম মিয়াজী পূর্বদেশকে বলেন, ‘নতুন করে ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কার করা হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পছন্দ করেছেন ইউএনও ম্যাডাম। উনি দেখেই যেসব আশ্রয়কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ এগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। দু’টি স্বনামধন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে। কোনো সিন্ডিকেটকে কাজ দেয়ার সুযোগ নেই। যে কেউ চাইলে দরপত্রে অংশ নিতে পারবে। কাজগুলো যাতে স্বচ্ছ হয় সেজন্য আমরা সচেষ্ট থাকবো’। বিগত সময়ে সংস্কার করা আশ্রয়কেন্দ্রে অনিয়মের পরেও টাকা ছাড় দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আগে যে কাজগুলো হয়েছে সেখানে কিছুটা ভুলভ্রান্তি ছিল। এরপরেও সবকাজ বুঝে নিয়ে বরাদ্দ ছাড় দেয়া হয়েছিল’।
জানা যায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র মেরামত প্রকল্পের আওতায় ৯টি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এরমধ্যে পূর্ব রায়ছটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারে চার লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা, উত্তর কদমরসুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারে চার লক্ষ ৯৮ হাজার ৫৪৭ টাকা, পূর্ব কাহারঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারে চার লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা, উত্তর সরল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন সেন্টারে চার লক্ষ ৯৮ হাজার ৪৫৬ টাকা, তোতকখালী খুদুকখালী আশ্রয়কেন্দ্রে চার লক্ষ ৯৭ হাজার টাকা, মহাজের পাড়া খুদুকখালী আশ্রয়কেন্দ্রে চার লক্ষ ৯৮ হাজার ৩০২টাকা, ১নং খুদুকখালী রেড ক্রিসেন্ট আশ্রয়কেন্দ্রে চার লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা, পশ্চিম বাহারছড়া রতœপুর ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্রে চার লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা, পশ্চিম বাহারছড়া ১নং ওয়ার্ড ইফাদ সাইক্লোন সেন্টারে চার লক্ষ ৯৮ হাজার ৯০০ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আগামি ১৯ মার্চ (বৃহস্পতিবার) দুপুর ১টা পর্যন্ত এসব প্রকল্পের দরপত্র জমা নিয়ে একইদিন দুপুর ২ টায় দরপত্র উম্মুক্ত করা হবে। এলটিএম পদ্ধতিতে দেয়া এসব প্রকল্পের দরপত্র মূল্য হার ৫০০ টাকা।
দুইজন ঠিকাদার জানান, ‘প্রকল্পগুলো এমন জায়গায় পছন্দ করা হয়েছে যেখানে কয়েকজন প্রভাবশালী ঠিকাদার আছেন। যারা পিআইও অফিসে অতীতেও দরপত্রের নিয়ন্ত্রণ করেছেন। যারা এর আগে ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কার কাজ প্রশাসনের ছত্রছায়ায় গোপনে টেন্ডার করে ভাগিয়ে নিয়েছেন। এবারো তাদেরকে বিশেষ সুবিধা দিতে কাজগুলো পছন্দ করা হয়েছে। এর চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বেশি এমন আশ্রয়কেন্দ্র বাঁশখালীতে আছে। সরেজমিনে পরিদর্শন না করে বিশেষ ব্যক্তিরা যেসব আশ্রয় কেন্দ্রের নাম দিয়েছে সেগুলোই দরপত্রে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। প্রশাসনের ইন্ধনে আগের অনিয়ম ধামাচাপা দিতে পেরে আবারো সিন্ডিকেটটি কাজ পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে। গত অর্থ বছরের ৯টি প্রকল্পের অনিয়ম ধামাচাপা দিতে কয়েকজন স্থানীয় সাংবাদিকের সাথেও গোপন বৈঠক করেছিলেন প্রশাসনের লোকজন’।
প্রসঙ্গত, গত অর্থ বছরে ৯টি আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কার কাজের দরপত্র গোপনে আহবান করে বড় ধরনের জালিয়াতি করা হয়। অন্য ঠিকাদারদের অগোচরে একই সিরিয়ালে একই ব্যাংক থেকে ব্যাংক ড্রাফট জমা দিয়ে অনিয়ম করা হয়। প্রাথমিকভাবে কাজের অনিয়ম ধরা পড়লেও পরে গোপনে ঠিকাদারদের বরাদ্দের ছাড় দেয়া হয়।