বহুদলীয় গণতন্ত্র হুমকির মুখে : জি এম কাদের

24

প্রাদেশিক সরকার ও উপজেলা শাসন পদ্ধতি ‘সঠিকভাবে’ চালু না হওয়ায় বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ‘হুমকির মুখে’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টিরব চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ জনতা লীগ আয়োজিত জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্মরণসভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ থাকলেও তা জাতীয় রাজনীতিতে খুব উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন না জি এম কাদের। খবর বিডিনিউজের
তিনি বলেন, আজকে ছোট ছোট রাজনীতিক দলগুলোর ভোট হয়ত কোথাও ১ পারসেন্ট, কাল ৫ পারসেন্ট বা ৪০ থেকে ৫০ পারসেন্টও হতে পারে। সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। আমরা আনুপাতিক হারে রাজনীতির কথা বলছি। এখন তা করা হচ্ছে না বলে এই দলগুলো বড় দলে এসে মিশে যাচ্ছে। নিজেদের আদর্শ ও এজেন্ডা বিলুপ্ত করে দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে বহুদলীয় গণতন্ত্র। উপজেলা পদ্ধতি ‘সঠিকভাবে’ চালু না হওয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রশাসনের ‘সংঘাত’ তৈরি হচ্ছে বলে এই সভায় মন্তব্য করেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, উপজেলা পদ্ধতি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা গেলে, তাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা আরও নিশ্চিত করা যেত। এখন ৩০০ বা ৩৫০ আসনে যারা (এমপি) নির্বাচিত হয়ে আসছেন, তাদের অনেকেই স্থানীয় পর্যায়ে তেমন যান না। আবার তারা যখন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের বিষয়ে কথা বলতে বা নাক গলাতে যান, তখন উপজেলা চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের দ্ব›দ্ব তৈরি হয়। এই আমলাতন্ত্র কখনও কখনও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপরে উঠে যেতে চায়। উপজেলা নির্বাচন হলেও উপজেলা চেয়ারম্যান ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা চলেন, জেলার ডিসি বা ইউএনওর নির্দেশে। প্রাদেশিক সরকার ও উপজেলা পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থা চালু করা গেলে দলবাজি ও সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টি তাদের সব আদর্শ বিকিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে একীভ‚ত হয়ে গেছে- এমন সমালোচনার জবাবও দেন জি এম কাদের। তিনি বলেন, আজকে অনেকে বলছেন, জাতীয় পার্টি সুবিধাবাদী। তারা ক্ষমতার দিকে যায়। তারা বলছে, জাতীয় পার্টির আদর্শ বলতে কিছু নেই। কিন্তু আমরা তো কমিউনিস্ট পার্টি বা জামায়াতে ইসলামী নই, যে আমাদের নির্দিষ্ট আদর্শ বলতে কিছু থাকবে। কমিউনিস্ট পার্টি সমাজতন্ত্রের ভিত্তিতে আর জামায়াতে ইসলামী ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায়।
তবে আমাদের তেমন কোনো আদর্শ নেই। আমরা কর্মসূচিভিত্তিক রাজনীতি করি। আমাদের কর্মসূচি হল সুশাসনভিত্তিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা। এখন সেটা ক্ষমতার সাথেই হোক বা ক্ষমতার বিপরীতে থেকেই হোক না কেন।
জাতীয় পার্টির সমালোচকদের উদ্দেশে জি এম কাদের বলেন, শুধু আমাদের কেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপিরও কোনো ফিক্সড ফর্মুলা বা আদর্শ নেই রাজনীতির। দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকায় তরুণরা অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে বলে মনে করেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। বেকার সমস্যা সমাধানে জরুরি ব্যবস্থা নিতেও সরকারের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
এরশাদকে ‘স্বৈরশাসক’ ও ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে রাজনীতি মহলের অনেকে সমালোচনা করেন উল্লেখ করে ভাই জি এম কাদের তাদের উদ্দেশে বলেন, রাজনীতি সব সময় সাদা হয় না। সবার রাজনীতিতেই কিছুটা গোপনীয়তা ব্যবহার করা যায়। এটা রাজনীতিতে খোলামেলা হওয়া উচিৎ ছিল না কখনও। অনেকে বলেন, ৯০ সালে এরশাদের পতন হয়েছিল। তবে আমরা বলছি, তার স্থান পরিবর্তন হয়েছিল কেবল। এটাই বাস্তবতা। তিনি ক্ষমতার গন্ডি থেকে বেরিয়ে জনগণের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন, ঠাঁই করে নিয়েছিলেন জনগণের অন্তরে। এটাই ঐতিহাসিক সত্য।
বাংলাদেশ জনতা লীগের চেয়ারম্যান শেখ ওসমান গণি বেলালের সভাপতিত্বে এই স্মরণসভায় প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ শহিদুজ্জামান।