বর্ণাঢ্য আয়োজনে রথযাত্রা উদযাপিত

55

হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল সতর্ক অবস্থায়। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইস্কন) প্রবর্তক মোড় ও নন্দনকানন থেকে পৃথক শোভাযাত্রা বের করে।
প্রবর্তক মোড় থেকে বের করা হয় সর্ববৃহৎ মহাশোভাযাত্রা। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের (ইস্কন) উদ্যোগে ইস্কন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির থেকে বিকাল ৪ টায় রথযাত্রার বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রা বের করা হয়। প্রবর্তক মোড় থেকে শুরু হয়ে এ শোভাযাত্রা নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সিনেমা প্লেস প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় চট্টগ্রাম জেলার ধর্মীয় সংগঠনের অংশগ্রহণের পাশাপাশি নামহট্ট, ভক্তিবৃক্ষ, ইয়ুথ ফোরাম, গীতা প্রচার বিভাগ, জাগ্রত ছাত্র সমাজ, সংর্কীতন, ফুড ফর লাইফ, নিত্যসেবা, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, জাগো হিন্দু পরিষদ, জাতীয় হিন্দু মহাজোট, শারদাঞ্জলি ফোরামসহ ১৫০টির অধিক ধর্মীয় সংগঠন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকরা বিভিন্ন পৌরাণিক সাজসহ অংশগ্রহণ করেন। মহাশোভাযাত্রায় লাখো ভক্ত সংকীর্তনানন্দে নগরীর রাজপথ পরিভ্রমণ করেন।
অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল মঙ্গলারতি, গুরুপূজা, ভাগবত পাঠ, ১০টি অগ্নিহোত্র বৈদিক যজ্ঞ, ভোগারতি ও সংকীর্তন। এতে প্রায় পঞ্চাশ হাজারেরও অধিক ভক্তের মাঝে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়।
শোভাযাত্রায় বিভিন্ন পৌরাণিক সাজের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ও বৈদিক সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সার্বিকভাবে তত্ত¡াবধান করেন সাধারণ সম্পাদক শ্রীমান দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী।
প্রবর্তক কৃষ্ণ মন্দিরের রথযাত্রা উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বেলুন উড়িয়ে প্রবর্তকে রথযাত্রা উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান সরকার কাউকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেওয়া মেনে নেবে না। জনগণ যার যার ধর্ম পালন করবে। কেউ যদি তার ধর্ম পালন করতে না চায় সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু অন্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অধিকার তার নেই। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনে বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। নিজ ধর্মের পাশাপাশি অন্যের ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে হবে এটাই বাস্তবতা।
তিনি বলেন, আকাশ সংস্কৃতির কারণে বর্তমান যুব সমাজের চারিত্রিক ও নৈতিক অবক্ষয় চরম আকার ধারণ করছে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শিক্ষাকে অবলম্বন করে ইসকন প্রতিষ্ঠাতা শ্রীল প্রভুপাদ লন্ডন, ইউরোপ, আমেরিকাসহ সারাবিশ্বে সনাতনী সংস্কৃতিকে দিকভ্রান্ত যুবসমাজের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে সঠিক আলোর পথে ফিরিয়ে এনেছেন। যার ফলাফল আজকের রথযাত্রায় অংশগ্রহণকারী হাজার হাজার যুবক যুবতীকে দেখে প্রতীয়মান হয়েছে। জাতিগত বিদ্বেষ, হিংসা, হানাহানি ধর্মীয় উন্মাদনায় সারা বিশ্ব আজ যখন বিভ্রান্ত, মানবতা ভুলুন্ঠিত তখন রথযাত্রা উৎসব বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্য সম্প্রতি প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। সুপ্রাচীনকাল থেকে শ্রী জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উড়িষ্যায় রাষ্ট্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। রথযাত্রা উৎসবকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন ইস্কন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য শ্রীল এসি ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ। আধুনিক কালে ইস্কনের উদ্যোগে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শহরে রথযাত্রা উৎসব উদযাপন করা হচ্ছে। এদের প্রয়াসকে আমি আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই।
চট্টগ্রাম ইস্কন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরসহ সারা বিশ্বে ইস্কনের উদ্যোগে এই উৎসব উৎযাপিত হয়। ভোরে মঙ্গলারতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার শুভ সূচনা হয়। শ্রীজগন্নাথের সন্তুষ্ঠি বিধানার্থে বিষ্ণুযজ্ঞ অনুষ্ঠানের সময় উপস্থিত ছিলেন ইসকনের অন্যতম সন্ন্যাসী শ্রীধাম মায়াপুর থেকে আগত শ্রীমৎ ভক্তি নিত্যানন্দ স্বামী মহারাজ। পরে তিনি ইসকন প্রবর্তক নবনির্মাণাধীন মন্দির পরিদর্শন করেন।
বিকাল ৩ টায় প্রবর্তক সংঘের সাধারণ সম্পাদক তিনকড়ি চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ‘জগন্নাথদেবের রথযাত্রার তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আমেনা বেগম, উপ পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক ও উপ-পুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়ারিশ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইস্কন চট্টগ্রামের কর্ণধার শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী। আরো উপস্থিত ছিলেন প্রবর্তক সংঘের সভাপতি এড. সুভাষ চন্দ্র লালা, প্রবর্তক সংঘের সদস্য ইন্দু নন্দন দত্ত, ড. জীনবোধি ভিক্ষু, সদস্য সুবোধ কুমার দত্ত , সদস্য রূপক ভট্টাচার্য, অব. উপ-সচিব ডি কে চৌধুরী, দীপেষ কুমার নাথ, তরুণ কান্তি বোস, স্বপন কান্তি দাস, অধ্যক্ষ দীপক দাস, উত্তম কুমার চৌধুরী, অজয় বণিক, অ¤øান চৌধুরী, কাউন্সিলর মো. মোরশেদ আলম, প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দাস ব্রহ্মচারী, পুÐরিক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চন্দন ধর, এড. অমর প্রসাদ ধর, নারায়ণ কৃষ্ণ গুপ্ত, মিন্টু দাস, প্রকৌশলী প্রিয়রঞ্জন পাল, সাধন বসাক, সমাজসেবক বাবু প্রণব সাহা প্রমুখ।
ইসকন নন্দনকাননও ব্যাপক আয়োজন করে। বিকাল তিনটায় নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এলাকায় কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উদযাপন কমিটির আয়োজনে রথপরিক্রমার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে এ উৎসব শুরু হয়।
ডিসি হিলে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার অনিন্দ্য ব্যানার্জী। অনুষ্ঠানের সূচনা করেন শ্রীমৎ অমিয় বিলাস স্বামী মহারাজ ও শ্রীমৎ ভক্তি নিত্যানন্দ স্বামী মহারাজ। বক্তব্য দেন শ্রীমৎ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। অতিথি ছিলেন প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, হাসিনা মহিউদ্দিন সহ জন্মাষ্টমী ও পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দ।
রথের পুকুর পাড়ে কেন্দ্রীয় রথযাত্রার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান। তুলসীধামের মোহন্ত শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রথযাত্রা উদযাপন কমিটির সভাপতি হরিশংকর ধর। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক বটন কান্তি দে। সুজন কান্তি দে’র সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সীতাকুÐ স্রাইন কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী ও শৈবাল দাশ সুমন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, সিএমপির উপ-কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) হারুনুর রশিদ হাযারী, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এমএম মেহেদী হাসান ও কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহসীন।