বন্যায় ৩৫ হাজার বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত

27

টানা নয়দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় চট্টগ্রামের ৭৯৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত ৫ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ১৫ উপজেলায় বন্যার প্রকোপ থাকলেও সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, রাউজান ও ফটিকছড়িতে ক্ষতির মাত্রা বেশি। এ চার উপজেলার ৫০ থেকে ৯০ ভাগ এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় ১৫টি উপজেলায় ৩৪ হাজার ৫৫৪টি বসতঘর, ১৮৪৩ হেক্টর ফসলি জমি, ৮২৫ কিলোমিটার সড়ক, ২৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ও ৮২ কালভার্ট ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী সাঙ্গু, হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় আশপাশের উপজেলাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন গতকাল জেলা সমন্বয় সভায় বন্যা পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘যেসব স্থানে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল সেখানে পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন সার্বক্ষণিক প্রস্তুত ছিল। প্রাথমিকভাবে দুর্যোগের ধাক্কা সামাল দেয়া গেছে। মন্ত্রণালয় থেকে ১৮ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্রুত বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে।’
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার ১৬০টি ইউনিয়ন ও ১৭টি পৌরসভার ৭৯৪টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে অবিরাম ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার ৯০ ভাগ, চন্দনাইশে ৯০ ভাগ, রাউজানে ৬০ ভাগ ও ফটিকছড়ির ৫০ ভাগ এলাকা সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে। সবমিলিয়ে চট্টগ্রামের দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় ১৯ হাজার ৫৩২ পরিবার সম্পূর্ণ ও এক লক্ষ ২২ হাজার ১৯৮ পরিবার আংশিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছে। এসব পরিবারের প্রায় সাত লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। এছাড়াও সম্পূর্ণভাবে এক হাজার ৪৮৫টি ও আংশিকভাবে ৩৩ হাজার ৬৯ মিলিয়ে মোট ৩৪ হাজার ৫৫৪টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসলি জমি সম্পূর্ণ ৯৮১ দশমিক ৫ হেক্টর ও আংশিক ৮৬২ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাঁস-মুরগী মারা গেছে দশ হাজার ৮৫টি এবং ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও ৩০০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সড়ক সম্পূর্ণভাবে ৮৬.৬ কিলোমিটার, আংশিকভাবে ৭৩৯.৩ কিলোমিটার ও ৮২টি ব্রিজ/কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নদী ও সাগর উপকূলের বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে ৩.৬৫ কিলোমিটার ও আংশিকভাবে ২৩.২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও ১৪ হাজার ৮৪০টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গত ১৪ জুলাই থেকে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়।
এদিকে বন্যার্তদের সহায়তায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ১৮ লক্ষ টাকা, ৯০০ মেট্রিক টন জি.আর চাল, চার হাজার শুকনা ও অন্যান্য খাবার, ৫০০ সেট তাঁবু, ১০০ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহ নির্মাণে আরো তিন লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
চট্টগ্রামের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ পূর্বদেশকে বলেন, ‘বন্যায় আক্রান্তদের সহযোগিতায় মন্ত্রণালয় থেকে ১৮ লক্ষ টাকা ও ৯০০ মে.টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে। প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে এ পর্যন্ত ১৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ৬৯৬ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। স›দ্বীপ ছাড়া সব উপজেলায় এ বরাদ্দ বন্টন করা হয়েছে। এখনো কয়েকটি ইউনিয়নে পানি ও রাস্তাঘাটের সমস্যা থাকায় ত্রাণ পৌঁছানো যায়নি। সহসা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ পৌঁছে যাবে।’