বন্দর ব্যবহারকারী ও সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময়ে সংসদীয় কমিটির সভাপতি বন্দরের সংকটের মূলে দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা

36

চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে দুই মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। যেসব সমস্যা আছে সেগুলো সমাধান করা খুব কঠিন কাজ না। বন্দরের সঙ্গে দুই মন্ত্রণালয় জড়িত। নৌপরিবহন ও অর্থ মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী সমস্যা জিইয়ে থাকুক, সেটা চান না। দুই মন্ত্রী যদি একমত হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যান, সমস্যার দ্রæত সমাধান হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সমন্বয়টা নেই।
গতকাল রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর ভবনে বন্দর ব্যবহারকারী ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের সাথে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর রফিকুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এসময় সংসদীয় কমিটির অন্যন্য সদস্য ও বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, আগামী ৫০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে আগামী ৫০ বছর পর কতগুলো জাহাজ আসতে পারে, তার জন্য কতগুলো জেটি দরকার এসব বিষয় নিয়ে এখনই পরিকল্পনা দরকার। যেহেতু ডেল্টা প্ল্যানের কথা বলছি, তাই এর পরের ৫০ বছরের কথাও মাথায় রাখতে হবে।
যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা রাখার তাগিদ দিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়েছে। কিছু যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যত যন্ত্রপাতি কেনার প্রয়োজন আছে, সেটা অবশ্যই সরকারি ক্রয়ের যে নীতিমালা পিপিআর আছে সেটা অনুসরণ করে কিনতে হবে। আমরা কেনাকাটায় কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করিনি, পূর্ণ স্বাধীনতা আছে চট্টগ্রাম বন্দরের। তবে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে। কারণ চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তেমনিভাবে প্রধানমন্ত্রীরও বিশেষ নজর রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর।
চলমান প্রকল্প শেষ হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের পরিপূরক হচ্ছে পায়রা এবং মোংলা বন্দর। যখন মাতারবাড়ি বন্দরের নির্মাণ কাজ শেষ হবে, তখন আমাদের সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া নির্মাণাধীন প্রকল্প বে-টার্মিনালকে সীতাকুÐের কুমিরা পর্যন্ত স¤প্রসারণের ঘোষণা দিয়ে এখনই এখনই গেজেট করা দরকার যে, বে-টার্মিনাল কুমিরা পর্যন্ত যাবে। এখানে কেউ যেন নতুন কোনো স্থাপনা না করে।
পণ্যবাহী যানবাহন চলাচলের জন্য আলাদা বিশেষায়িত সড়ক ও রেলসড়ক নির্মাণের কথা উল্লেখ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুধু সড়ক করলে হবে না, সেটা শুধুমাত্র কার্গো পরিবহনের জন্য ডেডিকেটেড রোড কিংবা রেলপথ করতে হবে। তাহলেই বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। ৫০ বছরের পরের কথা ভাবতে হলে ডেডিকেটেড সড়কের কথাও আমাদের ভাবতে হবে।
কর্ণফুলী নদীর দুইতীর বিভিন্ন স্থাপনার জন্য ইজারা দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে বেঁধে ফেলা হয়েছে। এই নদী রক্ষা করতে না পারলে, বন্দরকে বাঁচানো যাবে না। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরকে অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কাস্টমসের নিলাম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে রফিকুল ইসলাম বলেন, একটা বন্দরে অকশন এভাবে চলতে পারে না। আমি ছবি নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে আমি ছবিগুলো দেখাব। চিঠিও দেব।
বন্দরের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করে তিনি বলেন, সংসদীয় কমিটি যখন উন্নত বন্দর ভিজিট করতে যায়, কাস্টমসের পলিসি মেকিংয়ে যারা থাকেন, তাদেরও যেন পাঠায়। তারা সেখানে গিয়ে দেখুক, উন্নত দেশের কাস্টমস কিভাবে কাজ করে। না দেখলে তাদের চিন্তার পরিবর্তন আসবে না।
অনুষ্ঠানে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়াল এডমিরাল জুলফিকার আজিজ চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান সক্ষমতা সম্পর্কে তথ্যচিত্র তুলে ধরেন। আর বন্দরের উন্নয়নে সংসদীয় কমিটির ভূমিকাকে ইতিবাচক উল্লেখ করে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর আগামীতে ৫৭তম অবস্থানে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন বন্দর চেয়ারম্যান।
এসময় চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, মেট্রোপলিটন চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এএম মাহবুব চৌধুরী, বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম, সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী, পরিচালক শাহেদ সরওয়ার, বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী, বাফার পরিচালক খায়রুল আলম সুজন, কাস্টমসের সহকারী কমিশনার, বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম।
অন্ষ্ঠুানে কমিটির সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, মাহফুজুর রহমান, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, এসএম শাহজাদা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আব্দুছ ছাত্তার, উপ সচিব বেগম মালেকা পারভীন, ড. দয়াল চাঁদ মÐল, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপ পরিচালক আবদুল জব্বার, সিনিয়র সহকারী সচিব এসএম আমিনুল ইসলাম, বন্দরের সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন মহিদুল হাসান চৌধুরী, হারবার মেরিন কমডোর শফিউল বারী, চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান, সচিব মো. ওমর ফারুক, ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান, উপসচিব আজিজুল মওলা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।