বনানীর ‘হিরো’ নাঈম হতে চায় পুলিশ অফিসার

74

দাউ দাউ করে জ্বলছে এফ আর টাওয়ার, আগুন নেভাতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ভয়াবহ ওই পরিস্থিতিতে কয়েক হাজার উৎসুক জনতা যখন হা করে তাকিয়ে ছিলেন জ্বলন্ত ভবনের দিকে, কেউ কেউ যখন মোবাইলে ছবি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন, ঠিক তখন ফায়ার সার্ভিসের ফাটা পাইপে পলিথিন জড়িয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করতে দেখা যায় এক শিশুকে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বনানীতে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সময় নাঈম ইসলাম নামের ওই বালকের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। অনেকেই শিশুটিকে প্রশংসায় ভাসিয়ে সেই ছবি শেয়ার করেন।
সামাজিক যোগযোগের মাধ্যমে ‘হিরো’ হয়ে ওঠা নাঈম গতকাল শুক্রবার আবারও বনানীর সেই পোড়া ভবনের সামনে এলে অনেকেই তাকে ধন্যবাদ জানান। বুদ্ধিদীপ্ত কাজের জন্য তাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন কেউ কেউ।-খবর বিডিনিউজের
পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া নাঈম সাংবাদিকদের বলে, ‘আমি দুপুরবেলা এসে দেখি এখানে আগুন লেগেছে, ফায়ার সার্ভিস অনেক কষ্ট করে আগুনটা নেভাতে চাইছে। আমি দেখি পাইপটা ফাটা, সেজন্য আমি পাইপটা চাপ দিয়ে ধরে রাখলাম, যেন পানিটা ভালোমত কাজে লাগে, আগুন নিভে যায়।’
পলিথিন কোথায় পেয়েছ- সেই প্রশ্নে নাঈম জানায়, একজন এসে পলিথিন দিয়ে গেলে সেটা দিয়েই ফাটা পাইপ চাপ দিয়ে ধরে রাখে সে। সবাই যখন ঘুরছিল, এই শিশু কেন ফাটা পাইপের পানি বন্ধের চেষ্টা করতে গেল?
নাঈমের উত্তর, ‘আমার মনে হচ্ছিল শতশত লোক মারা যাবে। আমি যদি পাইপটা ধরে রাখতে পারি তবে ফায়ার সার্ভিস পানিটা অগুন নেভানোর কাজে লাগিয়ে মানুষকে বাঁচাতে পারবে।’
রাজধানীর কড়াইল বৌ বাজারে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে নাঈম। বাবা ডাব বিক্রি করেন। আর তার মা মেসে রান্নার কাজ করেন। ছোট এক বোন আছে তার। তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালে।
বড় হয়ে কী হতে চাও- এই প্রশ্ন করতেই নাঈম জানালো, সে পুলিশ অফিসার হতে চায়। পুলিশ ফায়ার সার্ভিসকে অনেক সহযোগিতা করেছে। আর লোকজনকে দূর পাঠিয়ে দিয়েছে যেন তাদের ক্ষতি না হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাঈমের এই কাজ যে প্রশংসা পাচ্ছে সেই খবর বাড়িওয়ালার ভাগ্নের কাছ থেকে শুনেছে বলে জানায় নাঈম। বনানীতে এসে ওই কাজ করায় বাবা-মা বকা দেয়নি জানিয়ে নাঈম বলে, ওই কাজের জন্য কোনো পুরস্কার সে চায় না।
শুক্রবার কেন আবার পোড়া ভবনের সামনে এসেছে জানতে চাইলে নাঈম জানায়, সে দেখতে এসেছে, যদি কোনো কাজে লাগে। এর আগে গুলশান-১ নম্বরে একটি অগ্নিকান্ডের সময়ও ফায়ার সার্ভিসের পাইপ ধরে সহায়তা করেছিল বলে জানায় নাঈম। অনেক কষ্ট করে আগুন নেভানোয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ধন্যবাদ জানায় সে।
নাঈমের প্রসংশায় একটি ছড়া লিখে ফেসবুকে শেয়ার করেছেন লুৎফর রহমান রিটন। তার ছড়ার প্রথম দুটি লাইন- ‘অজস্র উৎসাহী বলদের ভিড়ে/চমকে উঠেছি দেখে এই মুখটিরে’।