বদলে গেছে নগরীর দুই প্রবেশপথের পরিবেশ

135

যানজটমুক্ত হয়েছে নগরীর দুই প্রবেশমুখ শাহ আমানত সেতু মোড় এবং সিটি গেট। বাকি আছে পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ির প্রবেশপথ অক্সিজেন মোড়। তবে অক্সিজেন মোড়ে উন্নয়নের কাজ চলায় সেটি এখনো সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত হয়নি। কিছুক্ষণ পর পর যানজট লেগেই থাকে। উন্নয়ন ও রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শেষ হলে সেটিও যানজটমুক্ত হবে বলে আশ্বাস দিলেন ট্রাফিক বিভাগ।
কিন্তু শাহ আমানত সেতু সংযোগ মোড় ও অলংকার, এ কে খান, সিটি গেট এলাকা এখন সম্পূর্ণ যানজটমুক্ত। যার ফলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী যাত্রীগণ দুর্ভোগ ছাড়াই শহরে প্রবেশ এবং বের হতে পারছেন। যাত্রীরা বলছেন, ট্রাফিক বিভাগের তৎপরতায় এটি সম্ভব হয়েছে, যেটি আরও আগে করা উচিত ছিল। এ কাজের ফলে পুলিশের যে পরিবর্তন তা এখন দৃশ্যমান।
ঢাকা থেকে নিয়মিত কক্সবাজার যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী কামরুল হাসান। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে চট্টগ্রামের ট্রাফিক বিভাগের কাজ দেখে আমি অবাক। আগে নগরীতে প্রবেশ এবং বের হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেগে যেতো, বর্তমানে যানজট না থাকাতে তেমন সময়ক্ষেপন হচ্ছে না। তাই নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছি। আসলে আন্তরিক হলে সবকিছুই সম্ভব। ট্রাফিক বিভাগের এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে প্রবেশ পথের এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
সরেজমিনে শাহ আমানত সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আগে একটি বাসের পাশে আরেকটি বাস দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করতো। মনে হতো এটি যেন অস্থায়ী এক টার্মিনাল। প্রত্যেকটি বাস একই সময়ে যাত্রী উঠানামা করানোর কারণে হারহামেশা যানজট ও যাত্রীদের দুর্ভোগ লেগে থাকতো। পুলিশ বিভাগ ও মালিক সমিতির লোকজন বিষয়গুলো দেখেও না দেখার ভান করতেন। কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
তবে গত কয়েকদিন ধরে পাল্টে গেছে শাহ আমানত সেতু সংযোগ মোড় এলাকা। আগের মত বাস এখন দাঁড়াতে পারছে না, বাস দাঁড়ালেই মামলা দিচ্ছেন দায়িত্বরত সার্জেন্টরা। তাই মামলার ভয়ে এখন বাস দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে না।
বাকলিয়া ট্রাফিকের পরিদর্শক সামছুদ্দিন পূর্বদেশকে জানান, পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে আমরা মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বসেছি। বাসগুলো যাতে নতুন ব্রিজ এলাকায় না দাঁড়ায় সে ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আসি। যদি অবৈধভাবে দাঁড়ায় তবে আমরা ‘রং পার্কিং’ মামলা দিবো বলে জানিয়ে দিই। যার ফলে এখন পুরো শাহ আমানত সেতু সংযোগ মোড় এখন যানজটমুক্ত। আর আমরা সার্বক্ষণিক অবজার্ভ করছি যাতে কোন রকম যানজট না থাকে।
অক্সিজেন মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, উন্নয়নের কাজ চলমান থাকায় বরাবরের মতই যানজট লেগেই রয়েছে। পুলিশ কিছুক্ষণ পর পর যানজটমুক্ত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে উন্নয়ন ও রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ সমাপ্ত হলে যানজট নিরসন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ট্রাফিক পরিদর্শক।
সিটি গেট, এ কে খান ও অলংকার এলাকায় দেখা যায়, সিটি গেট থেকে অলংকার মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে দূরপাল্লার ও লোকাল বাস, কৈবল্যধাম থেকে সিটি গেট পর্যন্ত প্রাইভেট কার ও অন্যান্য গাড়ি, আলিফ গলিতে রাস্তার দু’পাশে বাসের সারি, সাগরিকা থেকে বিটাক মোড় পর্যন্ত আবার বিটাক মোড় থেকে আলিপ গলির পশ্চিম মাথা পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে কাভার্ড ভ্যান লং ভেহিক্যালের সারি লক্ষ্য করা যেত যা এ কয়েকদিনের মধ্যে তা আর দেখা যায়নি।
অলংকার থেকে সিটি গেট ও আলিফ গলিতে গাড়িগুলো বর্তমানে এক সারিতে সুশৃঙ্খলভাবে রাখায় এখন এই এলাকায় যানজট নেই বললেই চলে। তারা এ কে খান মোড় ও অলংকার মোড়ের এমন পরিবর্তনে এই রাস্তা ব্যবহারকীরা ট্রাফিক পুলিশের প্রশংসা করেছেন।
স্থানীয় দোকানদার আজিম উদ্দিন বলেন, এলাকার এভাবে পরিবর্তন হবে তা আমরা ভাবতেই পারিনি। আসলে পুলিশ আন্তরিক হলে অনেক কিছুই সম্ভব। যার প্রমাণ এই এ কে খান মোড় এলাকা। এভাবেই যেন শহরের প্রত্যেকটি এলাকায় পরিবর্তন হয়।
আকবরশাহ এলাকার ট্রাফিক পরিদর্শক এস এম শওকত হোসাইন বলেন, আমরা সিটি গেট, এ কে খান, আলিফ গলিসহ কয়েকটি জায়গায় অবৈধ পার্কিং এর বিষয়টি লক্ষ্য করে আসছিলাম। কিন্তু গাড়ির চালক-মালিকরা আন্তরিক না হওয়ায় সেটি সম্পূর্ণরূপে নিরসন করা একটু কষ্টকর হয়েছিল। পরে গত দু’মাস যাবৎ ট্রাফিক পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন এই এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের নিয়মিত অভিযান, মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রত্যক্ষ সহযোগিতার ফলে সুশৃঙ্খল পরিবেশ ও যানজট নিয়ন্ত্রণে উন্নতি করা সম্ভব হয়েছে। আমাদের এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের ট্রাফিক পশ্চিম জোনের উপ-কমিশনার জয়নুল আবেদিন পূর্বদেশকে বলেন, নগরীর পশ্চিম জোনের আওতাধীন এলাকাসমূহে যানজট নিরসনে আমরা সবসময় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য নিয়মিত মামলা, গাড়ি জব্দসহ আইনগত প্রক্রিয়া আমাদের চলমান রয়েছে। আসলে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে আন্তরিক হলে আমরা আরও সুন্দর পরিবেশ উপহার দিতে পারবো। তিনি আরও বলেন, নগরীতে স্থায়ী কোন বাসস্ট্যান্ড না থাকায় যত্রতত্র বাসের পার্কিং বেড়ে গেছে। আমি গত বিভাগীয় সমন্বয় সভায় বলেছি যে, সিটি গেটের বাইরে একটি বড় জায়গা নিয়ে স্থায়ী এক বাস টার্মিনাল নির্মাণ করার, যাতে দেশের ৬১ জেলার বাস আসলে যেন পার্কিং করতে পারে। এখন বাস টার্মিনাল না থাকার ফলে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ী বাস টার্মিনাল হয়েছে, ফলে যানজট নিরসন করতে ট্রাফিক বিভাগের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, করোনা প্রাদুর্ভাবের ফলে দু’মাস সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ থাকার পর যখন পুনরায় চালু হয় তখন মানবিকতা ও করোনা মহামারির কথা বিবেচনা করে ট্রাফিক পুলিশ সহানুভূতিশীল দায়িত্ব পালন করেছে। যার কারণে অনেকটা ঢিলেঢালা পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে পুরো নগরজুড়ে। তবে ট্রাফিক বিভাগ এখন পুরোদমে তৎপর। পূর্বের চেয়ে বর্তমানে আরও কঠোর অবস্থানে রয়েছে।