বছরে ১০ লাখ পাখি প্লাস্টিক দূষণের শিকার

61

বছরে ৮০ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সমুদ্রে মেশার ফলে দূষণের শিকার হচ্ছে ১০ লাখের বেশি সামুদ্রিক পাখি। বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার রাজধানীতে এক আলোচনায় সভায় এই তথ্য জানিয়েছেন প্রাণীবিজ্ঞানী তপন কুমার দে।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ প্রাণীবিজ্ঞান সমিতি ও নেচার কনজারভেশন সোসাইটি এই আলোচনা সভা করে। খবর বিডিনিউজের
সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তপন কুমার দে বলেন, “প্রতি বছর সারা পৃথিবীতে ৩০০ মিলিয়ন টনের বেশি প্লাস্টিক সামগ্রী মানুষের দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি বছর আট মিলিয়ন (৮০ লাখ) টন প্লাস্টিক বর্জ্য নদী-নালা হয়ে সমুদ্রে পতিত হয়। “সমুদ্র সৈকতে আসা পাখির খাদ্য গ্রহণের সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে প্লাস্টিকের ছোট ছোট অংশ খাদ্যনালীতে চলে যায়। শুধু তাই নয়, পাখির ছোট বাচ্চাদের পেটে প্লাস্টিক কণা পেটে চলে যায় ও অকালে মারা যায়।”
৯০ শতাংশের বেশি সামুদ্রিক পাখির পরিপাকতন্ত্রে প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে এবং এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সালে ৯৯ শতাংশ পাখির পেটে প্লাস্টিক কণা পাওয়া যাবে বলে গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশের হাওরাঞ্চল, সুন্দরবনে প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি পরিযায়ী পাখি আসে জানিয়ে তপন কুমার বলেন, “এ সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। আকস্মিক বন্যা ও পরিবেশগত নানা কারণে ওইসব অঞ্চলে জলজ জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ বছর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।”
পরিযায়ী পাখি বাঁচাতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনের যথাযথ প্রয়োগের দাবিও জানান তপন।
ইউনাইটেড ন্যাশন এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম, কনভেনশন অব মাইগ্রেটরি স্পেসিসেস ও অন্যান্য সংস্থার উদ্যোগে ২০০৬ সাল থেকে প্রতি বছর ৯-১০ মে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে জাতীয়ভাবে বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস উদযাপিত হচ্ছে। ‘পাখি সুরক্ষায় প্লাস্টিক দূষণ বন্ধ করি’ এ প্রতিপাদ্যে দিবসটি সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে এবার।
তপন কুমার দে জানান, ইস্ট এশিয়ান-অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাইওয়ে পথে পৃথিবীর প্রায় ২৫০ প্রজাতির পাঁচ কোটি পরিযায়ী পাখি চলাচল করে। এর মধ্যে ২৮টি প্রজাতিকে আন্তর্জাতিকভাবে মহাবিপন্ন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
পাখি বিশারদ ইনাম আল হক বলেন, প্রতি বছর ৩০ কোটি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়, যার ৮০ লাখ টন যায় সমুদ্রে। গত বছর এ কারণে ১০ লাখ পাখি মারা গেছে।
সভার প্রধান অতিথি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার উপকূলীয় এলাকায় প্লাস্টিক দূষণের ভয়াবহতা স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, “প্লাস্টিকের কারণে সমুদ্র ও জলাশয় দূষিত হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে সরকারের এখনও তেমন পরিকল্পনা নেই। আমাদের জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। এখনও সময় আছে। জনগণকে সতর্ক করা গেলে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত প্লাস্টিক দূষণ আমরা কমিয়ে আনতে পারি।”
সভায় আরেক প্রাণী বিজ্ঞানী মো. মোস্তফা ফিরোজ জানান, বাংলাদেশে ৬৯০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি দেখা যায়, যার মধ্যে ৩৩৭টি দেশিয় প্রজাতির, ২০৮টি প্রজাতি শীতকালীন পরিযায়ী পাখি। এদের ১২ প্রজাতি আসে গ্রীষ্মকালে, ১৪ প্রজাতি ভ্রমণ পথের পরিযায়ী আর ১১৯ প্রজাতি ভবঘুরে বা অনিয়মিতভাবে আসে। দেশে পরিযায়ী পাখির মধ্যে মাত্র ৯০ প্রজাতি জলচর আর বাকি সবই স্থলচর।
তিনি বলেন, অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষিজমি বৃদ্ধি, সংকীর্ণ আবাসস্থল, শিকার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। এছাড়াও বাংলাদেশে এসে দেশীয় হাঁসের সঙ্গে বিচরণ করায় তাদের এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ারও শঙ্কা রয়েছে। পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ এলাকায় হাঁস-মুরগির খামার না করার পরামর্শ দেন তিনি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল্লাহ আল মোহসীন চৌধুরী, উপ-প্রধান বন সংরক্ষক জহির উদ্দিন আহমেদ, আইইউসিএনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রাকিবুল আমিন, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, প্রাণী বিজ্ঞান সমিতির সভাপতি গুলশান আরা লতিফা সভায় বক্তব্য দেন।