বছরের শেষ বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ কাল

108

চলতি বছরের তৃতীয় ও সর্বশেষ বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘটবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার। এবার বিশ্ববাসী অন্তত আড়াই ঘন্টা ধরে এমন এক সূর্যগ্রহণ দেখবে, যা শেষবার দেখা গিয়েছিল একশ’ ৭২ বছর আগে। বছরের আগের দুটি সূর্যগ্রহণ বাংলাদেশসহ উপমহাদেশীয় অঞ্চলের মানুষের দৃষ্টিগোচরে না এলেও এবারকার বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণটি দেশে আংশিকভাবে দেখা যাবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে আকাশে জমতে থাকা মেঘ ও বায়ুমন্ডলের বিরাজমান কুয়াশার কারণে দেশের ভূ-পৃষ্ঠ থেকে সূর্যগ্রহণ দৃষ্টিগোচর হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। এটি সবচেয়ে ভালো দেখা যাবে মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আব্দুর রহমান পূর্বদেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশের আকাশে এবারের বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সর্বোচ্চ সময়কাল হচ্ছে সকাল আটটা ৫৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড থেকে দুপুর ১২ টা ১৫ মিনিট ১২ সেকেন্ড পর্যন্ত। বিদ্যমান আবহাওয়ার অবস্থায় আকাশে মেঘের উপস্থিতি বাড়ছে। তার সাথে বায়ুমন্ডলে রয়েছে চলতি শীত মৌসুমের মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশার চাদর। তাই সূর্যগ্রহণ দেশের ভূ-পৃষ্ঠ থেকে আংশিক দৃশ্যমান হওয়ার কথা থাকলেও তা নির্ভর করছে আকাশের অবস্থা ও কুয়াশার গতিপ্রকৃতির ওপর।’
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বছরের শেষ বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণটি ইউরোপ, এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলো থেকে দেখা যাবে। চলতি বছরের গত ৬ জানুয়ারি ও ২ জুলাই আরও দুটি সূর্যগ্রহণ ঘটলেও সেগুলো উপমহাদেশীয় অঞ্চলের মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়নি। এবারের গ্রহণ চলাকালীন সময়ে সূর্যের চারপাশে থাকবে আগুনের বলয়। মহাকাশ বিজ্ঞানীরা যাকে বলেন, ‘রিং অব ফায়ার’। তারা বলছেন, এবার আড়াই ঘণ্টা ধরে চলবে এই মহাজাগতিক দৃশ্য। ওই সময়ে সূর্যকে ৯০ শতাংশের বেশি ঢেকে ফেলবে চাঁদ, যা পৃথিবীবাসীর খালি চোখে অবলোকনের সুযোগ থাকলেও রোদচশমা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
দেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সূর্যগ্রহণের কেন্দ্রীয় গতিপথের বিবরণে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটায় আরব সাগরে ওমানের রাস মাদ্রাকাহ- এর দক্ষিণ পশ্চিম দিক থেকে সূর্যগ্রহণ শুরু হবে। সূর্যের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গ্রহণ ঘটবে ১১ টা ১৭ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে মালয়েশিয়ার মালাক্কা প্রণালীর রুপাথ দ্বীপের দক্ষিণ-পূর্বদিকে অবস্থানকালীন সময়ে। কেন্দ্রীয়ভাবে ১২ টা ৫৯ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে সূর্যের অবস্থান ফিলিপিন্স সাগরের ওয়েক দ্বীপের পশ্চিম দিকে অবস্থানকালীন সময়ে। দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের মধ্যে চট্টগ্রামে সূর্যগ্রহণ দৃষ্টিগোচর হওয়ার সময় সকাল আটটা ৫৫ মিনিট ৩৬ সেকেন্ড থেকে ১১ টা ৫৮ মিনিট পর্যন্ত।
এদিকে, অঞ্চলভেদে মানবসভ্যতার সংস্কার ও ধর্মীয় বিশ্বাসগতভাবে সূর্যগ্রহণের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নানা ধরণের মত প্রচলিত থাকলেও সেগুলোর এখন পর্যন্ত কোনও ধরণের গ্রহণযোগ্য বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। কেউ বলেন, ওই সময়টায় খাবার খাওয়া ঠিক নয়। কেউবা বলেন, গ্রহণ শেষ হলে স্নান করা বিধেয়। ওই সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের সাবধানে থাকার পরামর্শও দিয়ে থাকেন অনেকে। এসব সংস্কার অনেক দেশেই রয়েছে। কোথাওবা গ্রহণকালীন সময়ে গর্ভবতী মহিলাদের ঘরের বাইরে বের হওয়াই বারণ। তাতে অনাগত সন্তানের মুখ বিকৃত হতে পারে কিংবা দেহে খারাপ জন্ম-চিহ্ন থাকতে পারে বলেও কেউ কেউ প্রচার করেন। তবে এসবের কোনটিরই বাস্তবসম্মত বা বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা মেলে না। সূর্যগ্রহণ খালি চোখে দেখতে গেলে যে কারও ক্ষেত্রেই ক্ষতির ঝুঁকি থাকে। তাই রোদচশমা ব্যবহারের মাধ্যমে সরাসরি অবলোকন এড়ানোর সুযোগ রয়েছে। গ্রহণের সময় গর্ভবতী মহিলাদের বিছানার উপর চিৎ হয়ে শুয়ে থাকারও পরামর্শ দেন অনেকে। কিন্তু গাইনোকলজিস্টদের দাবি, গ্রহণের সাথে গর্ভের সন্তান ধারনের কোনও লড়াই নেই। তাই এই ধরনের পরামর্শে কান দেয়ার কোনও দরকারই নেই। গ্রহণের সময়ে রান্না করে রাখা খাবার না খাওয়ার কথাও বলা হয়। যুক্তি হিসেবে বলা হয়, সূর্যগ্রহণের সময় অনেক জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে আমাদের পরিবেশে। তার ফলে রান্না করে রাখা খাবার বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। এই সময় না খাওয়ারও নিদান থাকে। এগুলিরও গ্রহণযোগ্য কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা মেলেনি।