বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী ও শহীদÑ মৌলভী সৈয়দ আহমদ

82

ড. নাছির উদ্দিন

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেন নাই, মেনে নেওয়ার কথাও না। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের ঘোষণা দিলেন। বললেন ‘প্রতিশোধ নেব।’ কিছু বিশ্বাসঘাতক যখন ১৫ই আগস্টে মুজিব কোর্ট খুলে, ড্রয়িং রুমে বঙ্গবন্ধুর ছবি নামিয়ে ফেলে খন্দকার মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগদানের জন্য রেডি, অনেক নেতা যখন ভয়ে চুপসে যান, তখনই আলেম বীর মৌলভী সৈয়দ ঝটিকা মিছিল করেন। বস্তুত এই মুজিব ভক্তই হলো বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী।
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হকের পৈতৃক বাড়ি আগ্রাবাদের ‘সৈয়দ নিবাস’ বর্তমানে ভান্ডার মার্কেট এ গোপন আস্তানা গড়ে তোলে একটি নিয়মিত সামরিকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্রপ্রতিশোধ যুদ্ধ শুরু করেন। একাত্তরের পর আবারো অস্ত্র হাতে তুলে নেন এই বীর। কয়েকটি থানায় আক্রমণ করেন। রাজনৈতিক সহকর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে নিয়মিত গোপন বৈঠক ও আক্রমণ চালাতে থাকেন। অস্ত্র ও গ্রেনেড হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন দেশের বিভিন্ন স্থানে সামরিক চৌকিতে। বেইমান খন্দকার মোস্তাকের প্রাণনাশের পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন। যদিও এ কাজে সফল হননি। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে তিনি বেশ কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করেন। ৩রা নভেম্বর খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে খন্দকার মোস্তাকের পতন হলে তিনি অন্যতম উদ্যোক্তা হয়ে খালেদ মোশারফের পক্ষে ঢাকায় সমাবেশ করেন। তিনি নভেম্বরে কয়েকটি সফল অপারেশন পরিচালনা করেন। ৭ই নভেম্বর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পালটে গেলে, জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি প্রতিকূলে চলে গেলে, তিনি সামরিক স্বৈরশাসক জিয়ার সামরিকবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং ভারতে চলে যান।
চট্টগ্রামের দেওয়ান হাটের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ের সাথে সেই সময়ে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। তিনি চিঠি লিখে জানিয়ে দেন ‘এখন বিয়ে করা সম্ভব নয়। আর ফিরব কিনা তাও জানি না।’ বিয়ে আর করা হয়নি তাঁর। তাঁর বাহিনীর অনেকে বিভিন্ন সময়ে ভারতে গিয়ে সেখানে তাঁর সাথে যোগ দেন। ভারতে বসে তিনি ১৯৭৩ সালে নির্বাচিত সংসদসদস্যদের সমন্বয়ে “প্রবাসী সরকার” গঠনের উদ্যোগ নেন। এ কাজে তিনি সফল হননি। তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদের অংশ হিসাবে পূর্বনির্ধারিত বিভিন্ন নিশানায় সশস্ত্র আক্রমণ চালাতে থাকেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন সময়ে, তাঁর খোঁজে বাঁশখালীর গ্রামের বাড়িতে সেনাবাহিনীর লোকজন অভিযান চালায়। ১৯৭৫ সালের অক্টোবর মাসে সামরিক আইনে সাবেক মেয়র চট্টল বীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রেফতার হয়ে বিনা বিচারে ৬ মাস জেল খাটার পর মুক্তি পেয়ে অনেককে সাথে নিয়ে ১৯৭৬ সালের মার্চের দিকে ভারতে মৌলভী সৈয়দের সাথে যোগ দেন। কাদের সিদ্দিকীও সদলবলে ভারতে গেলে সেখানে সবাই একজোট হন।
১৯৭৬ সালের ৭ নভেম্বরে চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা: মামলা-১, মামলা-২, মামলা-৩ নামে ১৬ জন বিপ্লবী নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয় মৌলভী সৈয়দ আহমদকে এবং ২ নম্বর আসামি করা হয় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে। ৭ই নভেম্বর সৈয়দ নিবাস (বর্তমানে ভান্ডার মার্কেট) থেকে সৈয়দ আবু সিদ্দিক, সৈয়দ মাহমুদুল হক, সৈয়দ আবদুল গণি ও মো. জাকারিয়া এবং শহরের বিভিন্ন জায়গা হতে জামাল আহম্মদ, অ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন হারুন, দীপেন চৌধুরী, মো: ইউনুস, সুভাষ আচার্য, শফিকুল ইসলাম এবং কেশব সেনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের ঢাকা ও চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়।
১৯৭৭ সালে ভারতের রাজনীতিতে পরিবর্তন আসে। ১৯৭৭ সালের মার্চের ১৬-২০ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধি ও তাঁর দল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল কংগ্রেস (ওঘঈ), বিরোধী দলগুলোর জোট-জনতা পার্টির নিকট পরাজিত হলে ক্ষমতায় আসে মেরারজি দেশাই। ২৪শে মার্চ ক্ষমতা গ্রহণ করে ভারত সরকার, ভারতবাংলাদেশ সীমান্তে সব ধরনের কার্যকলাপ বন্ধের ঘোষণা দেয়। তারই অংশ হিসেবে মৌলভী সৈয়দসহ কমপক্ষে ৭-৮ জনকে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) ময়মনসিংহ বর্ডার দিয়ে ১৯৭৭ সালের ৬ই আগস্ট পুশ-ব্যাক করে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর) এর হাতে তুলে দেয়।
সে সময় বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ভারতে থেকে যেতে সক্ষম হন (হামিদ উল্লাহ, ২০২০)। আশির দশকে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং ১৯৯০ সালে কাদের সিদ্দিকী দেশে ফেরেন। বিডিআর মৌলভী সৈয়দসহ অন্যান্যদের গ্রেফতার করে নিকটবর্তী বিডিআর ক্যাম্পে রাখলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে আসে। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয় মৌলভী সৈয়দকে? কেউ স্বীকার না করায় সেখানে জয়েন্ট ইন্টরোগেশন সেলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করা হয় সকলকে। ব্যর্থ হয়ে ভিন্ন কৌশল নেয় সামরিক স্বৈরশাসক। ১৯৭৭ সালের ৮ আগস্ট মওলানা সৈয়দের গ্রামের বাড়িতে আসেন বাঁশখালী থানার ওসি। তিনি তাঁর বাবাকে ডেকে প্রথমে থানায় নিয়ে যায়। পরে জিয়াউর রহমান ডেকেছেন বলে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেইদিন রাতেই নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে চোখ বেঁধে রাখা লোকদের মধ্য থেকে মৌলভী সৈয়দের বাবা একরাম সিকদারকে মৌলভী সৈয়দকে নিয়ে যেতে বলেন। একরাম সিকদার প্রিয় পুত্র মৌলভী সৈয়দকে চোখ বাঁধা অবস্থায় চিনতে পারেন এবং জড়িয়ে ধরে বলেন, “চলো বাপ বাড়ি যাই।” একথা শুনে মৌলভী সৈয়দ তাঁর বাবাকে কানে কানে বললেন, “বাবা অনেক বড়ো ক্ষতি করে ফেললেন।” তারপর একরাম সিকদারকে পৃথক রুমে থাকতে দেন এবং মৌলভী সৈয়দকে তাঁর কাছে ছেড়ে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। ১৯৭৭ সালের ১১ই আগস্টে ব্রাশফায়ার করে মৌলভী সৈয়দকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়। চিরতরে বন্ধ করে দেন বঙ্গবন্ধু প্রেমিক এই বীরের প্রতিশোধ যুদ্ধ। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়ার সময়ে বিচারের নামে প্রহসন করে কর্নেল তাহেরসহ অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। ১২-১৩ টি লাশের মধ্যে থেকে মৌলভী সৈয়দের লাশ খুঁজে নিতে বলে। বাবা একরাম সিকদার লাশগুলোর মধ্যে থেকে এক এক করে লাশ উলটিয়ে মৌলভী সৈয়দকে খুঁজতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে খুঁজে পান। সেনাবাহিনীর একজন মেজর বললেন, রাতেসে আত্মহত্যা করেছে। অথচ বাবা দেখলেন, তাঁর দেহ রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত, ছিন্নভিন্ন যেমন দেখা যায় পোস্টমর্টেমের পর। সামরিক স্বৈরশাসক জিয়া কত নির্মম ছিল তা কল্পনাকেও হার মানায়। অনেক লাশের মধ্যে থেকে খুঁজে নিতে বললেন পিতাকে তাঁর পুত্রের ছিন্নভিন্ন, ক্ষতবিক্ষত লাশ। কী নির্মম, বীভৎস।
একরাম সিকদারকে সেনাবাহিনী মৌলভী সৈয়দের লাশসহ হেলিকপ্টারে করে বাঁশখালীতে পাঠিয়ে দেন। হেলিকপ্টার নামে ছনুয়া ইউনিয়নের নিয়াজী স্কুলের মাঠে। সেখান থেকে গানবোটে করে নেওয়া হয় এক কিলোমিটার দূরে মৌলভী সৈয়দের বাড়িতে। লাশ দাফনের পর, জিয়া সরকার পুলিশ দিয়ে একমাস কবর পাহারা দেয় যাতে কেউ প্রতিক্রিয়া দেখাতে না পারে। এতে বুঝা যায়, সামরিক সরকার তাঁকে কী পরিমাণ ভয় পেত। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যোগদানের মাধ্যমে যে জীবন শুরু, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ সংগ্রামের মাধ্যমে সে জীবন শেষ।
মৌলভী সৈয়দকে হারিয়ে সৈয়দের বাবা-মা পাগলের মতো হয়ে যান। নির্মম কষ্ট বুকে নিয়ে পাগলের মতো অবস্থায় ১৯৮৭ সালে তাঁর বাবা ইন্তেকাল করেন। মা প্রায় উন্মাদ অবস্থায় ১৯৯০ সালে মারা যান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সৈয়দের বাবা-মার মুখে থাকত শুধু একটা নামÑ সৈয়দ। অবর্ণনীয় কষ্ট বুকে ধারণ করে ২০২১ সালে ৮৯ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন মৌলভী সৈয়দের বড়ো ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ চৌধুরী।
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও তাদের সমর্থকরা হত্যা সম্পর্কে বিভিন্ন অপপ্রচার চালান। যে অপপ্রচারটি সবচেয়ে বেশি চালানো হয়Ñ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কোনো প্রতিবাদ হয়নি, মিছিল হয়নি। সামরিক জান্তা কর্তৃক সামরিক আইন জারি করে রাখা এবং অলিখিত বিধিনিষেধের মাধ্যমে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির মধ্যে ধরতে পারলে মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সেদিন সামরিক জান্তার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে কাদের সিদ্দিকী কর্তৃক যুদ্ধ ঘোষণা, হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গি মিছিল করা, জেলখানায় খুনিদের দেওয়া মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে জাতীয় চার নেতার মৃত্যুকে মেনে নেওয়ার কথা কারো অজানা নয়। চট্টগ্রামে যাঁরা প্রতিবাদে সশস্ত্র যুদ্ধঘোষণা, প্রতিবাদ মিছিল ও যুদ্ধ করেন তাদের মধ্যে অন্যতম মৌলভী সৈয়দ, এস এম ইউসুফ এবং এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সুলতানুল কবির চৌধুরী, বর্তমান সিটি মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুলী, কাজী ইনামুল হক দানুর কথাও কারো অজানা নয়। আরো অজানা নয়Ñ বগুড়া জেলা যুবলীগের আহŸায়ক মো. আবদুল খালেক মিয়া খসরুর কাদের বাহিনীতে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করা ও স্বৈরশাসক জিয়ার হেলিকপ্টার হামলায় নিহত হওয়া। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এরকম অনেকেই। তবে সবার মধ্যে মৌলভী সৈয়দ ছিলেন অতিমাত্রায় সাহসী। মৌলভী সৈয়দ ছিলেন অত্যন্ত পড়ুয়া ও মেধাবী। তাঁর ছিল একটি ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। তিনি ছিলেন অনলবর্ষী বক্তা। তাঁর উপযুক্ত তথ্যসমৃদ্ধ বক্তৃতা শুনে চট্টগ্রামে অনেক মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। তিনি চমৎকার গান গাইতে পারতেন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ এর সাবেক কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হকের উত্তর আগ্রাবাদের মিস্ত্রী পাড়ার সৈয়দ নিবাসে (বর্তমানে ভান্ডার মার্কেট) তাঁর চট্টগ্রামকেন্দ্রিক ঘাঁটি ছিল। এখান থেকেই অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ যুদ্ধে।
পুণ্যভ‚মি বীরপ্রসবিনী-বীর চট্টলার বীরপুরুষ, বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তি, চট্টলার অহংকার, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুজিব অন্তঃপ্রাণ, অসীম দেশপ্রেমিক, প্রতিবাদের আইকন, মুক্তিযুদ্ধের হিরো, চিরকুমার মৌলভী সৈয়দ আহমদ চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন চট্টগ্রামের সমুদ্র উপকূলীয় উপজেলা বাঁশখালীর সমুদ্রঘেঁষা শেখেরখীল ইউনিয়নের লালজীবন গ্রামে। সেখানকার মানুষের কাছে, গর্ব আর সাহসের আরেক নাম মৌলভী সৈয়দ। তাঁরা নিজেদের গর্ব এবং সাহসের পরিচয় দিতে গিয়ে বলে থাকেন ‘আমরা মৌলভী সৈয়দের এলাকার লোক’। ১৯৭১ সালের মার্চের অত্যন্ত প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে গঠিত হয় ‘জয় বাংলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী।’ মৌলভী সৈয়দ আহমদ সভাপতি এবং এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। মার্চের ১ তারিখে চট্টগ্রামের।
চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালীন সময়ে একটি অনুষ্ঠানে মৌলভী সৈয়দ আহমদ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয় পরের দিন লালদীঘি ময়দানে জয় বাংলা বাহিনীর মার্চপাস্ট আয়োজন করা হবে; সেখানে পাকিস্তানের পতাকা পোড়ানো হবে এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হবে। মৌলভী সৈয়দ বীরদর্পে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে ফেলেন এবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু বাকশাল ঘোষণা করলে মৌলভী সৈয়দ আহমদকে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার যুগ্ম সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাতকানিয়া থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি মরহুম জননেতা এম সিদ্দিক আহমদকে। আরো যাঁরা যুগ্ম সম্পাদক এর দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা হলেনÑ মরহুম জননেতা আতাউর রহমান খান কায়সার, সাতকানিয়ার কৃতী সন্তান এম আবু সালেহ, মরহুম একেএম আব্দুল মান্নান ও নাজিম উদ্দীন। তাঁর আত্মত্যাগের বীরসুলভ অবদান যেন এক লুকানো অধ্যায়। এ যেন একজন পরলোকগত বীরকে যথাযথ সম্মান দিতে না পারার দরিদ্রতা, হীনম্মন্যতা। ডিজিটাল চাকচিক্য ও এসি রুমের রাজনীতির এ যুগের তরুণ প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এ দেশপ্রেমিক মৃত্যুঞ্জয়ী বীরের গল্প না জেনেই। সেজন্য কিছু করার সময় এখনই।
লেখক : সহ-সভাপতি
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা