বঙ্গবন্ধু, রাজনীতিকদের ক্যাপিট্যাল হলেও তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করা হচ্ছেনা

59

বঙ্গবন্ধু একটা অনন্য ক্যাপিট্যাল। সাম্প্রতিককালে তাঁর সুযোগ্য কন্যা তাঁর নাতি-নাতনিও রূপান্তরিত হয়েছে ক্যাপিটালে। এ বক্তব্য বলার পশ্চাতে যুক্তিসংগত হেতু বিদ্যমান। বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক অনন্যসাধারণ নেতা। তার অপ্রতিদ্ব›দ্বী নেতৃত্বে, তাঁর ব্যক্তিত্ব তাঁর ওঠা-বসা, হাঁটা-চলা, কথা বলা বডিল্যানগুস স্বকীয়তা এবং শারীরিক মোশান, চেহেরা মাধুয্যতা। কন্ঠস্বর, সুঠাম দেহ বেশভূষা অর্থাৎ কাপড়, চৌপড়ের সঙ্গে শরীরের অনবদ্য ম্যাচিং। তাঁর বিরামহীন ত্যাজদিপ্ত মনহরণ করা আবেগসমৃদ্ধ অগ্নিজডা বক্তৃতা দেয়ার মতো পাক্-বাংলা ভারত উপমহাদেশে বিরল বললে অতত্যুক্তি হবেনা। বাংলা, ঊর্দু এবং ইংরেজী বক্তৃতায় সমান পরদর্শী। ১৯৭০ সালে করাচীতে নির্বাচনী জনসভায় তাঁর বক্তৃতার প্রথম শুরু হয়ে। এভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিক বন্ধুরা বার বার পূর্বপাকিস্তানে গিয়ে ওয়াদা করেছেন সামনের বার আসনে বাংলায় ভাষণ দেবেন কিন্তু দিলেন কই? আজ আমি পাকিস্তানের ২য়ভাষা উর্দুতেই বক্তৃতা দেবো। উর্দুতে দেয়া তাঁর সেই বক্তৃতা দৈনিক ইত্তেফাকে আমি পাঠ করেছিলাম( অনুবাদরূপে)


পত্রিকা পাঠে একবার দৃষ্টিতে পড়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাকি চলচ্চিত্র হবে। কিন্তু চোখ ঘুরিয়ে চিন্তা করলাম উনার চালচলন কথা বচন ভঙ্গি অনুসরণ করার মোত ২য় কোন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমার জ্ঞাতস্বারে উনি যে সমস্ত ভালো আচরণ রপ্ত করেছেন আর যে দেশপ্রেমের মহৎগুণ অর্জন করেছেন তৎজন্য ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি নামের পূর্বে সংযুক্তিটা সত্যি যথার্থ। বঙ্গবন্ধুর এবং তাঁর কন্যার আলোকচিত্র সংযুক্ত করে বসন্তের কোকিলের পোস্টার ব্যানারে রমরমা উৎসবে মাতোয়ারা। নেতারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দেশপ্রেম বিষয়টা স্বীয় চরিত্রে ধারণ করতে সক্ষমতা অর্জন করেছে কিনা সন্দেহ আছে। নচেৎ বঙ্গবন্ধুর পোশাক আশাক ধারণ করে দুর্নীতি অনুশীলনে এতে ব্যতিব্যস্ত কেন? স্বাধীনতা উত্তরে স্বীয় দলের নেতা-নেত্রীর দুর্নীতি প্রত্যক্ষ করে অন্তর্জ্বালায় দগ্ধ হয়ে বলেছিলেন। আমি বরলো কি যেদিকে তাকাই সেদিকে চোখ। মাথার চুল দুই-একটা পাকা ধরলে চিমটি দিয়ে উপড়ে ফেলা যায়। কিন্তু সব যদি পেকে যায় তখন কি আর করার থাকে ? আবদুস সামাদ আজাদ তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর খন্দোকার মোস্তাক তখন বাণিজ্যমন্ত্রী। সিলেট জেলার জন্য বরাদ্দকৃত নারিকেল তেলের ড্রাম নারায়ণগঞ্জের এক ব্যবসায়ীর নিকট ঘুষ গ্রহণ (বাটার জুতার বাক্সে করে ঘুষের টাকা) মোস্তাক আহাং। বিষয়টা ফাঁস হলে আজাদ সাহেব বঙ্গবন্ধুর নজরে আনেন।
এর সামান্য কিছুক্ষণ পর মোস্তাক ঐ একই কক্ষে ঢুকে। তাকে দেখে বঙ্গবন্ধু তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন এবং বলেন, কি পেয়েছিস তুই। সিলেট জেলার বরাদ্দকৃত তেলের চালান কি করেছিস। তোদের দুর্নীতির জন্য দেশের আজ এদশা। আমি তোদের ওপর লাল ঘোড়া দাবরাবো। এসময় মোস্তাক নিরুত্তর লেখাটা মিজানুর রহমানের ‘খবর’ পত্রিকায় ওঠে। সেই মীর জাফর মোস্তাক ১৫ আগস্টের পর মীরজাফরী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রেসিডেন্ট রূপে প্রমোশন প্রাপ্ত হয় ৩ মাস মতো মার্শাল ম্যানদের রাবার স্টাম্পরূপে ছিলেন। বর্তমান রাজনৈতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শগুলো যেমন স্থানচ্যুতি হচ্ছে। শুধু পথ প্রাপ্তরে বঙ্গবন্ধুর এবং তাঁর যোগ্য কন্যার আলোকচিত্র জুড়িয়ে দিয়ে নিজেদের প্রচার প্রচারণায় ব্যবহার করে আসছে। দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে এসব সুযোগসন্ধানী লোকগুলো পার্টির সর্বনাশ করে যাচ্ছে। এসব অপকর্মগুলো নিত্যদিনে ফিরিঙ্গি আকারে পত্রিকায় দৃশ্যমান জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘর সামাল দেবেন না বহিবিশ্বের সঙ্গে তাল রক্ষা করবেন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক আধটু পা পিছলে পড়লে আমাদের ক্ষুদ্র দেশের অর্থনৈতিক কি যে বিপর্যয় ঘটবে তা ভাববার বিষয় অথচ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং কাদা, ছোড়াছুড়ি সমান তালে চলছে। যে সব নেতাদের কাজকর্মের ওপর দলের মান ইজ্জত অনেকাংশে নির্ভর করছে তারাই হাই কমান্ডের নির্দেশকে বেশি অমান্য করছে। এখনই উৎকৃষ্ট সময় এসব কিছু রুখে দিতে নেত্রীকে অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। আজ স্বীয় দলের জন্য নেতার চ্যালেঞ্জ। স্বীয় দলের প্রতি নেতার খবরদারি এবং আঙ্গুল উচকিয়ে বাক্য ছোড়ার ধৃষ্ঠতা, এতে করে দলের ভাবমূর্তি যে ক্ষুন্ন হচ্ছে তা অত্যন্ত ব্যতিত করেছে দলীয় লোকদের। আমার আবার প্রতিদিনকার অভ্যেস সংবাদপত্র কোণা কানচি অবধি পাঠ শেষ করা। ’ আওয়ামী লীগ বলতে উম্মাদ। ৯৫ বছর বয়স পাড় করে শতবর্ষের অপেক্ষায় আছেন। এখন দলের প্রতি আগ্রহ তেতো হয়ে পড়েছে। উনাকে আমি কিছু বলার পূর্বে দেশের চলমান অবস্থা গড় গড় করে বলে যাচ্ছেন। সংবাদপত্রে ও স্মার্ট ফোনে অর্জিত সাফল্যের পরিবর্তে কুকীর্তির বদনামগুলো স্থান করে নিয়েছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় এতদ্ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন দুর্নীতির ব্যাপারে শূন্য সহনীয়তা নীতি অনুসৃত হবে। মোদ্দা কথা কাকে ও ছাড় দেয়া হবে না। মাননীয় সেতুমন্ত্রী বলেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ ঘর থেকেই শুরু হয়েছে এবং দুর্নীতিকে সহনীয় মাত্রায় নিয়ে আসা হবে। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছেন। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পত্র দেয়া হয়েছে। চিঠিতে মহারতিদের নাম তালিকা জুড়িয়ে দেয়া হয়। অনেকের ব্যাংক হিসেবও তলব করা হয়েছে এবং লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে। তারাও বসে বসে আঙ্গুল চুষবেন না। একথা আগে থেকে ঘোষিত হয়। দেশের মানুষ ঘটনা প্রত্যক্ষ এবং পর্যবেক্ষণ করছে। দেশের স্বার্থ কতটুকু সংরক্ষিত হচ্ছে এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অ্যাকশানের মাত্রা কতটুকু জোরালো এতো টাকার স্তুপ কস্মিনকালে ও অক্ষির সম্মুখে দৃশ্য খান হয়নি। সত্যি, দেখতে এবং ভাবতে মনটা আহলাদে ভরে ওঠে। দুই আনা-চার আনা দরের আলু দিয়ে মোটা চাউলের ভাত কিংবা আটার রুটি খেয়ে স্বাধীনতার যুদ্ধের নয় মাস কাটিয়েছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর অর্থাৎ ১৯৭৪ এ মার্কিনী গম ও খাদ্য জাহাজ ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে খাদ্য সংকট সৃজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু সবুজ বিপ্লবের আহŸান জানান। ঐদিকে কুমিল্লা বার্ড অফিসকে রূপান্তর করা হয় ষড়যন্ত্রের কাসিম বাজার কুটির। মাহবুব আলম চাষী, মোস্তাক মীর জাফর বঙ্গবন্ধু আদর করে যাকে ঠাকুর বাবু বলে সম্বোধন করতেন সেই তাহের উদ্দিন ঠাকুর তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী মার্কিণ রাষ্ট্রদূত বোস্টারসহ আরো অনেকে সু² ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে সিদ্ধ হস্তে হত্যার মাধ্যমে উৎখাত করে গুটিকয়েক জুনিয়ার সামরিক অফিসার এবং কয়েকজন সৈন্যের মাধ্যমে। ইতিপূর্বে, চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে (আলেন্দে) হত্যার মাধ্যমে অপসারণ করে সামরিক ব্যক্তি পিনোচেট। সে সময় আত্মবিশ্বাসী বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন আমি চিলির আলেন্দে নই। অর্থাৎ তিনি বিশ্বাস করতে বাংলার মানুষ তাকে ভালবাসে তিনি ও বাংলার মানুষকে ভালবাসতেন। এক বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন ‘তোমরা অনেককষ্ট করেছো তোমাদেরকে ৩ বছর কিছুই দিতে পারবোনা তোমরা রাজি ? জনগণ হাত ঊর্ধ্বে তুলে সম্মতি জ্ঞাপন করেছিলো। তিনি বলতেন ‘আমার মানুষ আমাকে ভালবাসে কে আমাকে হত্যা করবে? তাঁর কাছের লোকগুলো তাঁকে হত্যা করলো। এখন ভয় হয়, শোখের মাসে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ২১ শে আগস্টে হত্যা করে আার একটি শোকের দিন সৃষ্টি করার পরিকল্পনা বেস্তে যায়। জননেত্রী প্রাণে বেঁচে যায়। তারপরও মনে হয় ষড়যন্ত্র থেমে নাই। সঠিক ও দেশপ্রেমে পরিপষ্ট নেতৃত্বের অপমৃত্যু হলে সব সাফল্য এবং আকাক্সক্ষার অপমৃত্যু হবে নির্ঘাত। শক্ত ভিতের ওপর যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে নির্লোভ দেশ প্রেমে উজ্জীবিত মানুষের মাধ্যমে। নৈতিক মূল্যবোধের স্খলন ঘটেছে এর উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে নৈতিকতার পরিচর্যা হউক এটাই কাম্য।
লেখক : কলামিস্ট