বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম হবে আগরতলায়

71

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামকরণে অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এবার পড়শী দেশ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা কারাগারের পাশেই বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। যেখানে থাকবে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত নানা স্মারক। বঙ্গবন্ধুর নামে মিউজিয়াম গড়ার লক্ষ্যে একখন্ড জমিও খালি রাখা হয়েছে। যার পাশেই গড়ে উঠেছে ২৮তলা উঁচুমানের একটি আইটি হাব।
ত্রিপুরা-আগরতলার বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্টজনদের দাবির মুখে এ মিউজিয়াম করার ঘোষণা দেয় রাজ্য সরকার। এর আগে ৭২জন বুদ্ধিজীবী-রাজনীতিক মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের কাছে এ মিউজিয়াম নির্মাণের আবেদন করেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি আগরতলা প্রেস ক্লাবে সফরকারী চট্টগ্রাম জার্নালিস্ট স্পোর্টস ক্লাবের সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় বঙ্গবন্ধুর নামে মিউজিয়াম করার বিষয়টি অবহিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম নির্মাণে দাবিকারীদের একজন আগরতলার প্রথম শ্রেণির দৈনিক স্যন্দন পত্রিকার সম্পাদক ও আগরতলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি সুবল কুমার দে। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘জেলখানার পাশেই ২৮তলার আইটি হাব হচ্ছে। তার পাশেই বঙ্গবন্ধু মিউজিয়ামটি হবে। ত্রিপুরা ও আগরতলার বুদ্ধিজীবীরা মানিক সরকারের আমলে রাজ্যসভায় আবেদন করলে সরকার এটি করতে রাজি হয়। মিউজিয়ামের জন্য ত্রিপুরা সরকার সে জায়গাটি খালি রেখেই আইটি হাব নির্মাণ করছে। শিগগির সেটি হয়ে যাবে।’
ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক অরুনোদয় সাহা পূর্বদেশকে বলেন, ‘এ রাজ্যে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ১৬ লক্ষ শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া হয়েছিল। অথচ সেসময় ত্রিপুরা রাজ্যে ১৫ লক্ষ মানুষ বসবাস করতো। এরপরেও আমাদের কোন সমস্যা হয়নি। সবকিছুর উর্ধ্বে উঠেই ভারত সরকার বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের সাথে আমাদের নাড়ির টান।’
জানা যায়, ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা জেলে একদিন নিয়মরক্ষার ‘বন্দিজীবন’ কাটিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৩ সালে ত্রিপুরার প্রথম মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত শচীন্দ্র লাল সিংহের নির্দেশে সাবেক শাসক কৈলাস প্রসাদ চক্রবর্তী জিরানিয়া সীমান্ত এলাকা থেকে বঙ্গবন্ধুকে আগরতলায় নিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধকালীন সহায়তার জন্য জহরলাল নেহেরুর সাথে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্র লাল সিংহ বঙ্গবন্ধুর পক্ষে সেই আর্জি নেহেরুর কাছে পাঠিয়ে দেন। তবে পাকিস্তানি গুপ্তচরেরা বিষয়টি জেনে যাওয়ায় বিদেশি অনুপ্রবেশ আইনে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সেসময় নিয়মরক্ষার আইন প্রয়োগের স্বার্থে তাদের জেলে পাঠানো হলেও বঙ্গবন্ধু ও তার সঙ্গীরা থাকেন জেল সুপারের বাংলোয়। তাদের যেন সেখানে কোন অসুবিধা না হয় তা তদারকি করতে তৎকালীন রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি উমেশ কান্ত সিনহা। যে কারণেই জেলখানার পাশেই বঙ্গবন্ধুর নামে এ মিউজিয়াম করার দাবি করেন ত্রিপুরার বুদ্ধিজীবীরা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবে আগরতলায় গিয়েছিলেন তা নিয়ে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা’ তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন আগরতলার এক চিত্র সাংবাদিক। তথ্যচিত্রের জন্য গবেষণা করেছেন আগরতলার সিনিয়র সাংবাদিক মানস পাল। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ ও শেখ সাহেবকে নিয়ে অনেক স্মৃতি আছে আগরতলায়। ১৯৬৩ সালে শেখ সাহেব আসাম হয়ে আরো দুইজন সঙ্গীসহ আগরতলা এসেছিলেন। ওই একবারই তিনি আগরতলা আসেন। সে সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য দিল্লিতে অনুমতি চেয়েছিলেন জহরলাল নেহেরু সাহেবের কাছে। বিষয়টি গুপ্তচরেরা জেনে যাওয়ায় অনুমতি না পেয়ে পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতায় নিয়মরক্ষার জন্য একদিন আগরতলা জেলখানায় থাকতে হয়েছিল শেখ সাহেবকে। পরে কৌশলে উনাকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। এরপরতো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হলো। আগলতলায় অনেক স্মৃতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। এগুলো রক্ষা করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’