বঙ্গবন্ধুর চোখ দুটি শেখ হাসিনাকে দিয়ে গেছেন

35

বঙ্গবন্ধু চলে গেছেন ঠিক। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর চোখ দু’টি শেখ হাসিনাকে দিয়ে গেছেন। তিনি জানেন, কাকে সম্মান জানাতে হবে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ‘আনন্দধারা’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের স্বাধীনতা পুরস্কার ও দৈনিক আজাদীর বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল পদক প্রাপ্তিতে চট্টগ্রাম একাডমি এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর চট্টগ্রামে আশ্রয় পেয়েছিলাম। সেই সুবাদে আজাদীর সঙ্গে পরিচয়। প্রীতিলতা, সূর্য সেন তো এখানকারই। চট্টগ্রামের সমৃদ্ধ ইতিহাস। ইঞ্জিনিয়ার খালেকের যোগ্য উত্তরসূরি অধ্যাপক খালেদ।
মূল্যায়নে দেরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর রাষ্ট্র কি আমাদের হাতে ছিল? সংবিধান কাটাছেঁড়া হয়েছে।
তারা অধ্যাপক খালেদকে শত্রু মনে করেছিল। তাদের নেতাকে ভোটে হারিয়ে দিয়েছিলেন। আমি কিন্তু সিদ্ধান্ত আগে নিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের নীতি নির্ধারণ করে। প্রেস কাউন্সিলে অতীতে টাকা দেয়নি রাষ্ট্র। শেখ হাসিনা দিয়েছেন। গত বছর ৬টি পুরস্কার দিয়েছিলাম। এবার তিন মিনিটে সিদ্ধান্ত হলো আজাদীকে সম্মানিত করার। রাষ্ট্র যদি না থাকে মূল্যবোধ, সাহিত্য, সংস্কৃতি থাকে না। তাই রাষ্ট্র গড়তে হবে। রাষ্ট্র গড়ার নায়কদের সম্মানিত করতে হবে। আজাদীকে সম্মানিত করতে পেরে প্রেস কাউন্সিল সম্মানিত বোধ করছে। সংস্কৃতির যদি চর্চা না করেন রাষ্ট্র থাকবে না। এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম একাডেমির চেয়ারম্যান, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের কোহিনূর প্রেসে একুশের প্রথম কবিতা ছাপানো হয়। অধ্যাপক খালেদ ও আজাদীর স্বীকৃতিতে আমরা গর্বিত। চট্টগ্রাম পথ দেখিয়েছে পুরো ভারতবর্ষকে। আজাদী আমাদের পথ দেখাবে।
ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সিকান্দার খান বলেন, অধ্যাপক খালেদ একটি প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজাদীতে ছুটে আসতেন প্রাণের টানে। তিনি দৃঢ়চেতা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। মূল্যবোধ লালন করতেন।
চুয়েটের উপাচার্য ড. মো. রফিকুল আলম বলেন, অধ্যাপক খালেদ ছিলেন অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। স্বাধীনতাযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাতিঘর ছিলেন। তিনি ছিলেন সমাজের বাতিঘর, দার্শনিক। আজাদী হচ্ছে চট্টগ্রামের আয়না। ইন্টারনেটে সব খবর পড়লেও আমি আজাদী পড়ি।
অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ফজলুল কাদের চৌধুরীকে আমরা পরাজিত করেছিলাম ১৯৭০ সালে। তখন থেকে অধ্যাপক খালেদ আমার নেতা। যদিও সরাসরি পরিচয় ১৯৮১ সালে। আজাদীর সঙ্গে সেই বন্ধন এখনো ছিন্ন হয়নি। অগ্রজ-অনুজের সম্পর্ক অনেক দূর এগিয়েছে। রিকশায় চলাফেরা করতেন। সহজ সরল জীবনযাপন করতেন। আমার মনে হতো স্যারের (খালেদ) অভিমান ছিল। তাই ১৯৭৩ সালের পর নির্বাচনমুখী হননি। কারণ রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন।
দৈনিক আজাদী চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত হলেও এটি জাতীয় দৈনিক। আজাদী প্রথম দেশের বিজয়ের কথা জানিয়েছিল। যোগ করেন ড. মইনুল।
শিক্ষাবিদ-গবেষক ড. মাহবুবুল হক বলেন, ষাটের দশকে ছাত্র অন্দোলনে যুক্ত থাকাকালে আজাদীর সঙ্গে পরিচয়। চট্টগ্রাম কলেজে অনার্স পড়ার সময় আক্কেল আলী ছদ্মনামে কলাম লিখি আজাদীতে। আজাদীর ‘হাজার বছরের চট্টগ্রাম’ সম্পাদনার দায়িত্ব পেয়েছিলাম।
সরকারি চারুকলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ রীতা দত্ত বলেন, আজাদী ও অধ্যাপক খালেদ অভিন্ন সত্তা।
এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক, লায়ন জেলা গভর্নর কামরুন মালেক, আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহেদ মালেক।
দীপশিখা নৃত্য একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক কবি অরুণ শীল। আবৃত্তিশিল্পী আয়েশা হক শিমুর সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক কবি রাশেদ রউফ, পরিচালক প্রাবন্ধিক নেছার আহমদ প্রমুখ। অনুষ্ঠান থেকে আজাদী ও ইঞ্জিনিয়ার খালেককে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়ার দাবি জানানো হয়। খবর বাংলানিউজের