বই উৎসব ভুলত্রুটি শুধরে সর্বাঙ্গীণ সফল করার প্রতি মনোযোগ দিতে হবে

96

ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিনটি ছিল বুধবার। বছরের প্রথম এ দিনটি দেশের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের হাসির আলোয় উজ্জল হয়ে উঠেছিল। কারণ তারা এ দিনে নববর্ষের উপহার হিসেবে পেয়েছে নতুন বই। সরকার প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দেশের সকল প্রাথমিক, নি¤œ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সকল শিক্ষার্থীর মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করেছে। সূত্র জানায়, সারা দেশে ৪ কোটি সাড়ে ২৭ লাখ শিক্ষার্থীর হাতে তুলে দেয়া হয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রায় সাড়ে ৩৫ কোটি নতুন বই। পার্বত্য জেলার পাঁচ নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত তাদের মাতৃভাষায় ছাপানো বই দেয়া হয়। এছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য বিতরণ করা হয়েছে ব্রেইল বই। বছরের শুরুতেই এ কাজটি সাফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে সরকার। এজন্য সরকার প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষসমূহ প্রশংসার দাবি রাখে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ সূত্রে জানা যায়, ৩১ ডিসেম্বরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এসে শিক্ষার প্রসারে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারে না। তাই আমাদের লক্ষ্য ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা’। এ লক্ষকে সামনে রেখে সরকার টানা ১১ বছর ধরে বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদানের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এটি বর্তমান সরকারের অন্যতম ভালো কাজ নিঃসন্দেহে। মাঝেমধ্যে বই বিতরণে কিছু কিছু অনিয়মের কথা সংবাদপত্রে আসলেও এতো বড় একটি আয়োজনে ছোটছাট ত্রæটি-বিচ্যুতিগুলো আমলে না নিয়ে বরং বলা যায, উদ্যোগটি মহৎ এবং দেশ ও জাতির জন্য কর‌্যাণকর- এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে একথা সত্য যে, বিতরণকৃত কিছু বইয়ের ক্ষেত্রে মুদ্রণ বিভ্রাট, পাতা এলোমেলো থাকা, ছাপার মান খারাপ হওয়া ইত্যাদি অভিযোগ এসে থাকে। আবার কখনও কখনও সংশ্লিষ্টরা ব্যর্থতা ও দুর্নীতিরও পরিচয় দিয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে, মুষ্টিমেয় কিছু লোকের ব্যর্থতা অথবা দুর্নীতির কারণে একটি মহতী উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে না। এ কার্যক্রমের ভুলত্রুটিগুলো শুধরে কীভাবে একে সর্বাঙ্গীণ সফল করা যায় সেদিকেই এখন সরকারের দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। পাঠ্যপুস্তক উৎসব দিবস উপলক্ষে বুধবার রাজধানী ও সাভারে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠানটি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানটি হয় সাভারের অধরচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। অপরদিকে চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বই উৎসবের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানগুলো যথাসম্ভব শিশুবান্ধব করে তোলার চেষ্টা করা হয়। আমরা চাই, এমন অনুষ্ঠান যেন সবসময় সুন্দর ও সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়।
বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, বিনামূল্যের বই বিশেষত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র অভিভাবকদের জন্য এক নতুন শ্রেণিতে নতুন বই পাওয়ার আনন্দই অন্যরকম। সে বই যদি বিনামূল্যে পাওয়া যায় তাহলে তো কথাই নেই। এর মধ্যে এক ধরনের সার্বজনীনতাও রয়েছে। কেননা দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের অনেকেরই নতুন বই কেনার সামর্থ্য থাকে না। তারা আগে পুরনো বই দিয়েই বছর পার করত। এখন সবার হাতেই নতুন বই। তাই উৎসবমুখর পরিবেশে সর্বস্তরের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথমদিনে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে শামিল হয়েছিল। বড় ধরনের স্বস্তি। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ সহায়তায় তাদের আর্থিক কষ্টের বোঝা অনেকটাই লাঘব হবে নিঃসন্দেহে। শুধু বিনামূল্যের বই নয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে টিফিনসহ শিক্ষাসামগ্রি প্রদানের উদ্যোগের কথাও শুনা যাচ্ছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধসহ প্রাথমিক শিক্ষার অন্য সমস্যাগুলোর প্রতিকার করা সহজ হবে। দেশের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার ভিতটি শক্তভাবে গড়ে উঠতে পারবে, যা একটি জাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।