বইমেলায় ব্যতিক্রমী স্টল ‘ময়লা দিন, বাদাম নিন’

225

বইমেলার ষষ্ঠ দিন। মেলা প্রাঙ্গণে দেখা গেল কিছু কাগজের ঠোঙা। দুইজন শিক্ষিত যুবক এসে কাগজের ঠোঙাগুলোকে একটি ময়লার ঝুঁড়ির মধ্যে নিলেন। এভাবে ওই ঝুড়ি নিয়ে হেঁটে হেঁটে কাগজপত্র সংগ্রহ করে পুরো মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার করে তাদের স্টলে গিয়ে জমা করলেন। যে স্টলে জমা রাখা হয়েছে তার নাম ‘ময়লা দিন, বাদাম নিন’। অর্থাৎ, ময়লা সংগ্রহ করে যিনি তাদের ঝুড়িতে ফেলবেন তাকে দেওয়া হবে একটি চীনা বাদাম। আবার যিনি প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করে দিবেন, তাকে দেওয়া হবে একটি কলম।
উৎসুক জনতা ও সচেতন দর্শনার্থীদের মেলা প্রাঙ্গণ থেকে কাগজ ও বোতল সংগ্রহ করে স্টলে দিয়ে কলম আর বাদাম নিতে দেখা গেছে।
গতকাল শনিবার নগরীর এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে বিডি ক্লিন চট্টগ্রাম স্টলের স্বেচ্ছাসেবীর সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত বছর অনুষ্ঠিত বই মেলায়ও তাদের এ উদ্যোগটি ছিল। তবে তখন ময়লা দেয়া ব্যক্তিদের বাদাম ও কলম দেয়ার পাশাপাশি মাস্ক দেয়া হয়েছিল। এবারে মাস্ক অপ্রতুল হওয়াতে সমন্বয়করা শুধুই বাদাম আর কলম দিচ্ছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রেজাউল করিম বলেন, বিডি ক্লিন চট্টগ্রামের এ উদ্যোগটি সত্যিই অসাধারণ এবং প্রশংসনীয়। নিজেরা ময়লা পরিষ্কার করার মাধ্যমে নগরবাসীর বিবেক জাগ্রত করে দিচ্ছেন তারা। আমি নিজেও কয়েকটি ময়লা পরিষ্কার করে তাদের বাস্কেটে জমা দিয়েছি, তবে বাদাম নিইনি। আমি নৈতিক দায়িত্ব থেকে এটি করলাম।
এবারের বই মেলায় বিডি ক্লিন চট্টগ্রাম’র ৭ জন সমন্বয়ক ব্যক্তিগত উদ্যোগে অমর একুশে বইমেলার ভেতরে মূল ফটকের ডানপাশে স্টল দিয়েছেন ‘ময়লা দিন, বাদাম নিন’। সাত সমন্বয়কেরা হলেন- আদিল আহমেদ কবীর, সাঈদুল মান্নান সায়েম, আশেক মির্জা, আব্দুল আজিজ, সাইমুর রহমান, ইমাম হোসেন মুহিব এবং ওসমান গনি। প্রত্যেকে একজন করে সপ্তাহের সাতদিন স্টলে অবস্থান করবেন। একজন সমন্বয়কের অধীনে ২০ থেকে ২৫ জন বিডি ক্লিনের সদস্যথাকে। তারা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন বলে জানান সমন্বয়কেরা।
শনিবার দায়িত্ব পড়ে বিডি ক্লিনের অতিরিক্ত সমন্বয়ক আইটি এন্ড মিডিয়া সাঈদুল মান্নান সায়েমের উপর। তিনি পূর্বদেশকে বলেন, আমরা বিডি ক্লিন চট্টগ্রামের হয়ে প্রতি শুক্রবার নগরীর কোন না কোন এলাকা পরিষ্কার করি। তেমনি অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে আমরা এসেছি। এখানে আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো শুধু ময়লা পরিষ্কার করা নয়, আগত দর্শনার্থীকে সচেতন করা। তাই আমাদের স্টলে যিনি পরিত্যক্ত কাগজ জমা দিবেন তাকে একটি বাদাম দিচ্ছি আর যিনি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিচ্ছেন তাকে একটি কলম দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সপ্তাহজুড়ে আমাদের সাত সমন্বয়ক একদিন একদিন করে স্টলে আসবেন এবং প্রতিদিন স্টলে যে সমন্বয়ক থাকবেন তার দায়িত্ব হচ্ছে ওইদিনের সকল খরচ বহন করা। অর্থাৎ মেলার শুরু থেকে নাস্তা-পানি, কলম ও বাদাম কেনাসহ যা যা খরচ আছে তার দায়িত্ব সমন্বয়কের। আর আমরা এ টাকাটা কারও কাছ থেকে নিচ্ছি না। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে খরচ করছি।
সাঈদুল মান্নান সায়েম বলেন, আমরা কিছুক্ষণ পর পর মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে ময়লা সংগ্রহ করছি। আমরা ময়লা সংগ্রহ করার মানে হচ্ছে- আরেকজন যাতে ময়লাগুলো যেখানে সেখানে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে। এটাই আমাদের চাওয়া পাওয়া। তাছাড়া মেলার প্রতিটি স্টলে আমাদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে একটি বাস্কেট। এ পর্যন্ত অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমাদের গ্রæপে অংশগ্রহণ করার আবেদন করেছেন। যারা আমাদের সাথে থাকতে আগ্রহী তাদেরকে আমরা রাখছি।
সামনের পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছর মুজিববর্ষ উপলক্ষে দেশব্যাপী ১০ কোটি সিগারেট বাট সংগ্রহ চলবে এবং ১৬, ১৭ এবং ১৮ মার্চ (তিন দিন) ঢাকায় প্রদর্শিত হবে। আর আমাদের স্বপ্ন হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।