ফোনই যখন আপনার বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি চালায়

51

আপনার ফোনের গোপন তথ্য আর গোপন থাকছে না। বহু মানুষের কাছেই মোবাইল ফোন হচ্ছে এমন এক জানালা যা দিয়ে তারা বিশ্ব দেখেন। কিন্তু এই মোবাইল ফোনই যদি হয়ে ওঠে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে উঁকি দেওয়ার জন্য অন্য কারো জানালা, তখন কী হবে? এটি কি কখনো আপনার মনে আসে যে আপনার পকেটের ভেতরেই আসলে লুকিয়ে আছে এক গুপ্তচর?
বহুদূর থেকেই হ্যাকাররা আপনার মোবাইল ফোনে স্পাইওয়্যার বা গুপ্তচর-প্রযুক্তি ঢুকিয়ে দিয়ে আপনার ফোনে থাকা সব তথ্য পেয়ে যেতে পারে। এরকম একটি অবস্থা কল্পনা করুন, যেখানে এই স্পাইওয়্যার দিয়ে কেউ আপনার ফোনের মাইক্রোফোন থেকে শুরু করে ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত নিয়ে নিচ্ছে। খবর বিবিসি
মনে হতে পারে একটি বেশ কষ্টকল্পিত ব্যাপার, কিন্তু আসলে তা নয়। এরকম সফ্টওয়্যার এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। এই সফ্টওয়্যার এখন ব্যবহার করা হচ্ছে সাংবাদিক, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী বা আইনজীবীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখার জন্য।
কিন্তু কারা এ কাজ করছে এবং কেন? আমাদের পকেটে থাকা মোবাইল ফোন যে গুপ্তচরে পরিণত না হয়, তা ঠেকানোর জন্য আমরা কী করতে পারি? মাইক মারে একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। কাজ করেন স্যান ফ্র্যান্সিসকোর ‘লুকআউট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে। মোবাইল ফোন এবং এতে সংরক্ষিত তথ্য কিভাবে নিরাপদ রাখা যায় সে বিষয়ে তারা পরামর্শ দেয় বিভিন্ন দেশের সরকার থেকে শুরু করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি পর্যায়ের ভোক্তাদের।
বিশ্বের সর্বাধুনিক এই গুপ্তচর প্রযুক্তি কিভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করছিলেন তিনি। তার মতে, এই প্রযুক্তি এতটাই শক্তিশালী এবং মারাত্মক যে একে একটি ‘অস্ত্র’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যারা এই সফটওয়্যার তৈরি করেছে তারা আপনার ফোনের জিপিএসের মাধ্যমে আপনাকে সব জায়গায় অনুসরণ করতে পারে বলে জানান মাইক মারে।
ওরা যে কোন সময় আপনার ফোনের মাইক্রোফোন বা ক্যামেরা অন করতে পারে এবং আপনার চারপাশে যা ঘটছে তার সবকিছু রেকর্ড করতে পারে। আপনার ফোনে যত রকমের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ আছে, সবগুলোতে তারা ঢুকে পড়তে পারে। ওরা আপনার সব ছবি, কনট্যাক্ট, আপনার ক্যালেন্ডারের সব তথ্য, আপনার সব ইমেইল, যত রকমের ডকুমেন্ট সব চুরি করতে পারে। এটি কার্যত আপনার ফোনকে একটি আড়িপাতা যন্ত্রে পরিণত করে। যেটি দিয়ে তারা আপনার প্রতি মুহূর্তের গতিবিধির ওপর নজরদারি চালায়। আপনার ফোনের সব তথ্য চুরি করে।
স্পাইওয়্যারের ব্যবহার নতুন কোন জিনিস নয়। বহু বছর ধরেই নানা রকমের স্পাইওয়্যার চালু আছে। কিন্তু এই সর্বশেষ স্পাইওয়্যার এতটাই মারাত্মক যে এটি আসলে সাইবার নিরাপত্তার জন্য খুবই ভিন্ন ধরণের এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। এটি মোবাইল ফোনের যত রকমের কাজ, সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। আর এই প্রযুক্তি এতটাই অত্যাধুনিক যে এটিকে সনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব।

ঘুম থেকে উঠে যাত্রী দেখেন
বিমানে কেউ নেই

এয়ার কানাডার একটি বিমানে চড়ে বসেন টিফানি অ্যাডামস। কিউবেক থেকে টরোন্টো যাবেন এই নারী। যাত্রা পথে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎ ঘুম ভাঙে প্রচন্ড ঠাণ্ডায়।
ঘুম থেকে জেগে দেখেন চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। আশপাশে কেউ নেই। কোনো সাড়াশব্দ নেই। ভীষণ ঘাবড়ে গেলেন তিনি। কিছুক্ষণ ঘোরের মধ্যে থাকলেন। ফলে কী ঘটেছে তা বুঝতে একটু সময় লাগল।
বিমানটি অবতরণের পর এর ক্রু ও বিমানবন্দরের কর্মীরা সব ধরনের কার্যক্রম শেষ করে ফেলেছেন। ঘুমন্ত অবস্থায় বিমানের ভেতর তাকে আটকে রেখেই সবকিছু বন্ধ করে চলে গেছেন।
নিজের ফেসবুক পেইজে টিফানি লিখেছেন, ঘুম থেকে উঠে দেখেন তখনও শরীরের সঙ্গে সিটবেল্ট বাঁধা। কিন্তু যাত্রা শেষ হওয়ার পর বিমান ত্যাগ করার আগে পুরো বিমানের সকল অংশ ভালো করে দেখে তবেই বিমানের কর্মীদের বের হওয়ার কথা।


টিফানি লিখেছেন, বিমানটি টরোন্টো পেয়ারসন বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এরপর কয়েক ঘণ্টা ঘুমন্ত অবস্থায় বিমানে ছিলেন তিনি। সেটি রানওয়েতে পার্ক করা ছিল। পুরো বিষয়টি বোঝার পর প্রথমে মোবাইল ফোন হাতড়ে বের করলেন। এক বান্ধবীকে জানালেন তার অবস্থার কথা। কিন্তু কোন রকম কথা শেষ করতেই ফোনের চার্জ গেল চলে।
রীতিমতো ভীতিকর রোমাঞ্চ। হাতড়াতে হাতড়াতে পৌঁছালেন ককপিটে। সেখানে একটি টর্চ-লাইট খুঁজে পেলেন। সেটি জ্বালিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতে লাগলেন। যাত্রীদের সুটকেস আনা নেওয়া করা হয় এ রকম একটি ছোট গাড়ির একজন চালক হঠাৎ সেই আলো দেখলেন। ভয়াবহ ভড়কে গেলেন ওই চালক। ততক্ষণে টিফানির বান্ধবী ডেনা ডেল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাতে সক্ষম হন।
গত ৯ জুনের এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এয়ার কানাডা জানিয়েছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকে প্রায়ই রাতে ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখেন বলে জানিয়েছেন টিফানি।