ফেরত গেল সেবক নিবাস প্রকল্পের ১০ কোটি টাকা

93

টাকা খরচ করতে না পারায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ‘সেবক নিবাস’ প্রকল্পের ১০ কোটি টাকা ফেরত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সেবকদের অস্থায়ী ঘরে সরিয়ে নিতেই জটিলতায় প্রকল্প পিছিয়ে রেখেছে। কেননা সেবকরা তাদের বাসস্থান থেকে অন্যত্র যেতে নারাজ। তাদের এমন আবদার মেটাতে প্রকল্পটি স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। কাগজে-কলমে সব প্রক্রিয়া শেষ হলেও প্রকল্পের ভবন তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করতে দুই বছর পার হয়েছে। প্রকল্পের সেবকদের (পরিচ্ছন্নকর্মী) অসহায়তা ও চরম ধীরগতির কারণে এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। চসিক সূত্র জানিয়েছে, নগরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হরিজন স¤প্রদায়ের ৩ হাজার ৬৪৭জন পরিচ্ছন্নকর্মী সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কাজ করে। বান্ডেল কলোনি, ঝাউতলা, মাদারবাড়ি ও সাগরিকার হরিজন কলোনিতে তাদের বসবাস। সময়ের সাথে বেড়েছে পরিবারের সদস্যের সংখ্যা। ফলে এক রুমের জরাজীর্ণ ঘরে থাকেন ৭-৮ জন। তাদের এমন দৈন্যদশা থেকে মুক্তি দিতে সাবেক মেয়র আ জ ম নাছিরের আমলে প্রকল্পটি গৃহীত হয়।সরকার ৭টি ভবন নির্মাণে প্রায় ২৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। প্রকল্পের বিপরীতে পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে অস্থায়ী ঘরে সেবকদের স্থানান্তর করতে হবে। তারপর পুরাতন ভবনগুলো ভেঙে নতুন ভবনের কাজ শুরু করতে হবে। তবে অস্থায়ী ঘর তৈরি করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয় সিটি কর্পোরেশনকে। কেননা নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য কোনো এলাকায় করা অস্থায়ী ঘরে যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন সেবকরা। তাই পুরাতন ভবনের পাশেই রাস্তার একপাশে তৈরি করা হয়েছে এসব অস্থায়ী ঘর। সেখানে বিদ্যুৎ-গ্যাসের লাইন দিতেই সময় গেছে দুইবছর। এখন তাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী। জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই নগরীর পরিচ্ছন্নকর্মীদের জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্যে চসিকের গৃহীত ২৩১ কোটি ৪২ লাখ ৬৮ হাজার টাকার ‘পরিচ্ছন্নকর্মী নিবাস’ শীর্ষক প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্পে সরকারি তহবিল (জিওবি ফান্ড) থেকে ১৮৫ কোটি ১৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। বাকি ৪৬ কোটি ২৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা চসিকের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত। করোনার কারণে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়িয়েছে মন্ত্রণালয়।
এ প্রকল্পের আওতায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ১৪তলা বিশিষ্ট ৭টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১ হাজার ৩০৯টি ফ্ল্যাট থাকবে। এর মধ্যে ৩৩ নং ওয়ার্ডস্থ বান্ডেল কলোনিতে ৩টি, ফিরিঙ্গীবাজারে ১টি, ঝাউতলায় ২টি এবং সাগরিকায় চসিকের নিজস্ব জায়গায় ১টি ভবন নির্মাণ করার কথা রয়েছে।
ভবনগুলোতে বসবাসকারী পরিচ্ছন্নকর্মীদের প্রতিটি পরিবারের জন্য দুইটি বেডরুম, একটি রান্নাঘর, দুইটি বাথরুম থাকবে। প্রতিটি ভবনে দুইটি লিফট থাকবে। এছাড়া তাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাÐের জন্য প্রতিটি ভবনের নিচতলায় স্কুল ও সাংস্কৃতিক কাজে ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখা হবে।
প্রকল্পটির পরিচালক চসিকের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী মুনিরুল হুদা জানান, প্রকল্পের টেন্ডার প্রক্রিয়া, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নকশা তৈরি সব শেষ। সেবকরা নিজেদের স্থান থেকে সরতে নারাজ। তাদের একই জায়গায় রেখে প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ করা অনেক কঠিন। তাদের এমন অদ্ভুত আবদার প্রকল্পের কাজকে থমকে দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে পাশেই তাদের জন্য অস্থায়ী শেড তৈরি করতে হচ্ছে। বান্ডেল কলোনি এবং ফিরিঙ্গিবাজারে স্থানান্তর শেষ পর্যায়ে। অন্যদিকে মাদারবাড়িতে এখনও অস্থায়ী শেড তৈরি কাজ চলছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তাদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য ঘরগুলো তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু ন্যূনতম সহায়তা নেই। বরং কাজ করতে গেলে অনুষ্ঠানের অজুহাতে কাজ বন্ধ রাখতে হয়। তাদের বাঁধা না থাকলে প্রকল্পের কাজ এতদিনে অর্ধেক শেষ হয়ে যেত।
প্রকল্পের টাকা ফেরত যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দুই ভাগে টাকা ছাড় করে মন্ত্রণালয়। এক ভাগের টাকা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে ২ কোটি ২৫ লাখ বিল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচের বিল প্রদান করা হয়। দ্বিতীয়ধাপে গত অর্থবছরে ১০ কোটি টাকা অর্থ ছাড় করে মন্ত্রণালয়। উন্নয়ন কাজ শুরু করতে না পারায় টাকাগুলো ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তাই অর্থবছরের শেষে টাকাগুলো ফেরত গেছে।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন জানান, চলতি বছরের ৩১ মে মন্ত্রণালয় ১০ কোটি টাকা প্রকল্পের বিপরীতে ছাড় করে। কিন্তু টাকাগুলো ব্যবহার না হওয়ায় ৩০ জুন ফেরত নিয়ে যায় মন্ত্রণালয়। আগামী অর্থবছরে টাকাগুলো আবার ছাড় হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।