ফুটবল বনাম বাফুফে

183

ফুটবল যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঝড়পপধৎ (সকার) নামে পরিচিত। এই খেলাটি প্রাচীন মিশর, পারস্য, ব্যবিশন, গ্রীস, চীনে প্রচলিত থাকলেও ফুটবলের বিকাশ ঘটেছে ইংল্যান্ডে। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে আইন করা হয়েছিল যে, প্রত্যেক দলে গোলরক্ষক সহ ১১ জন করে খেলোয়াড় থাকবে। ১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম গোলের পার্শ্বে খুঁটির উপরে আড়া ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৭৭ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম ফুটবল খেলার সময় ৯০ মিনিট নির্ধারণ করা হয়। ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম গোলপোস্টে জাল ব্যবহার করা হয়। ১৮৯১ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম পেনাল্টি কিকের আবির্ভার হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বকাপ টেলিভিশনে প্রথমবার সম্প্রচার করা হয়। এরপর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন গঠন করা হয়। এর ২ বছর পর ১৯৭৪ সাল থেকেই এটি পেয়ে যায় এএফসি ও ফিপার সদস্যপদ।
দেশের ফুটবলে একসময় সোনালী অতীত ছিলো। এখন সেই অধ্যায় চলে গেছে। যেখানে নেই কোনো স্বচ্ছতা। কারণ দুর্নীতির আখড়া হয়ে গেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। বিভিন্ন অনিয়ন ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে এসেছিল বাফুফের বিরুদ্ধে। যার কারণে বাফুফের ব্যাংক একাউন্টগুলোর বিবরণ, সিলেট বিকেএসপিতে ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফিকা থেকে প্রাপ্ত অর্থ ও ব্যয়ের বিবরণ, ২০০৮-২০১৮ সাল পর্যন্ত বার্ষিক ও অডিট রিপোর্ট চায় দুর্নীতি দমন কমিশন। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে বাফুফের কার্যক্রম। যার ফলে সঠিক সময়ে ফুটবলের বিভিন্ন আয়োজন ব্যাহত হয় যার ফলে খেলোয়াড়দের খেলার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এর ফলে প্রতিভাবান খেলোয়াড় বিলুপ্ত হয়। ফুটবলের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হয়। ফুটবলের বিভিন্ন লীগে যেসব টিম অংশগ্রহণ করে তারা সংসরের উপর ভরসা করে, তারাই যদি স্পন্সর মানি না দেয় তাতে ফুটবলের উপর প্রভাব পড়ে। এতেকরে টিম ম্যানেজারগণ টিম দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। কোচদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়াতে গাফিলতি থাকে। যেমন আসন্ন বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের খেলার আগে জাতীয় দলের প্রধান কোচ মেসিদের দেশে না থাকার বিষয়টিও সমালোচিত হয়। বিভিন্ন জেলায় বয়সভিত্তিক ফুটবল খেলোয়াড় বাছাই পর্বেও নানা ধরনের গাফিলতি দেখা দেয়। সম্প্রতি কলাবাগান, মোহামেডান, আবাহনী, ভিক্টোরিয়া এসব ফুটবল ক্লাবে মাদক দ্রব্য ও ক্যসিনো-র সন্ধান পাওয়া যায়। এই ধরনের ক্লাবগুলো যদি এসব মাদক, দুর্নীতিতে লিপ্ত থাকে তখন অন্যান্য ক্লাবগুলোও এসবে আসক্ত হয়ে পড়বে। এতে করে একটা সময় ফুটবল খেলাটি চিরতরে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেহেতু বিভিন্ন ক্লাব থেকেই প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসে। ক্যাসিনো নিয়ে এক সংসদ সদস্য এর পক্ষপাতিত্ব করলেও বাকি সদস্যগণ এই মতামতের সাথে দ্বিমত পোষন করেন। তার মতানুসারে ক্লাবগুলো খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক ঠিকভাবে দেয় না তাই খেলোয়াড়রা এসব ক্যাসিনো বা জুয়ার সাথে লিপ্ত হয় অধিক লাভের আশায়। তবে যা একদিতে অন্যায় এবং অন্যদিকে সংবিধান পরিপন্থী। অপরদিকে বিসিবি-র পরিচালক ক্যাসিনোর বিরোধিতা করে বলেছেন, ক্যসিনো দিয়ে ক্লাব চালাতে এটা ভিত্তিহীন। বাফুফে থেকে দুর্নীতি দমন করার জন্য সৎ একজন মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত করতে হবে। বাফুফে-র আইনানুসারে ধারা ৬ অনুচ্ছেদ ৫৮ তে বর্ণিত আছে, দুর্নীতির শাস্তিস্বরূপ ১ লাখ টাকা জরিমানা, ফুটবল সম্পর্কিত কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার, যেকোনো স্টেডিয়ামে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে। জেলায় জেলায় বয়সভিত্তিক খেলাগুলো সঠিকভাবে ও সৎভাবে পরিচালনা করতে হবে। বিভিন্ন লীগের স্পন্সরমানি একটি নিয়মের মধ্যে আদায় করতে হবে। সঠিক সময়ে যদি স্পন্সররা পরিশোধ না করে তাহলে এর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রত্যেক জেলায় জেলায় ফুটবল প্রশিক্ষণের জন্য স্টেডিয়াম তৈরি করতে হবে যা হবে উন্নত মানের এবং দীর্ঘস্থায়ী। খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ যেমন মানসিক, শারীরিক ভালো মানের ক্রীড়াশিক্ষক দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। প্রতিবছরে বিভিন্ন ধরনের ফুটবল লীগের আয়োজন করতে হবে, যেন প্রতিভাবান খেলোয়াড়রা উঠে আসে এবং আমাদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে।
ফুটবল যথাযথভাবে পরিচালনা করতে পারলে ক্রিকেটের পাশাপাশি বাংলাদেশ ফুটবল ও বিশ্বে পরিচিত হবে এবং অন্যদেশে সুনাম অর্জন করবে। এই ফুটবল যদি চলে যায় জুয়ারী অর্থাৎ এই পরিচালক আ সভাপতিদের হাতে আর যদি এইসব ঘৃণিত কাজে লিপ্ত থাকে তাহলে উন্নতি যতই করতে চাক না কেন, অর্থাৎ দেশকে ফুটবলের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাইলে তা বরফে রং করার মত হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, আইন অনুষদ