ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না

81

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ফসলি জমি কিন্তু নষ্ট করা যাবে না, ফসলও উৎপাদন করতে হবে। মিরসরাইয়ে ৩০ হাজার একর জমি রয়েছে সেখানে শিল্পায়ন করা হোক। আমাদের শিল্পায়ন যেমন দরকার তেমনই কৃষি জমিও লাগবে। মিরসরাই ইকোনমিক জোন চরাঞ্চলে হচ্ছে। সেখানে কোনো ফসলি জমি নেয়া হয়নি। ভবিষ্যতেও কোনো কার্যক্রমে ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। আমরা ফসলি জমি নষ্ট করবো না। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি, মানুষকে কষ্ট দেয়ার জন্য না। এক্ষেত্রে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তাদের যেনো কষ্ট না হয় সে দিকেও নজর দিতে হবে।’
গতকাল বুধবার সকাল ১০টায় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীর উন্নয়ন কাজ এবং সেখানে বিজিএমইএ গার্মেন্টস ভিলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর তিনটি ইকোনমিক জোন নিয়ে ৩০ হাজার একর জমিতে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর গড়ে উঠছে।
যাদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ সঙ্গে সঙ্গে দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তাদের জমি তিনগুণ করে দিয়েছি। আর তারা টাকাতো পাবেই তাদের বিকল্প জায়গার ব্যবস্থাও করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। পাশাপাশি যাদের জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে তাদের ছেলেমেয়েকে ইকোনমিক জোনের দেশি-বিদেশি কোম্পানির কারখানায় চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রেও অগ্রাধিকার দেয়ার অনুরোধ করছি।’
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেনের সঞ্চালনায় মিরসরাই ইকোনোমিক জোন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও মিরসরাইয়ের সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীবাসী গর্বিত এই শিল্পাঞ্চলের নাম বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর করা হয়েছে। এছাড়া এখানে আপনার নামে শেখ হাসিনা স্মরণী ও শেখ হাসিনা সরোবর হচ্ছে তাই আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বেজা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। আশ্চর্য হয়ে গেছি আমি গত ২ বছরে এখানকার চরাঞ্চলের চেহারা পাল্টে অত্যাধুনিক শিল্পনগরে রুপান্তরিত হচ্ছে। আমি বলতে চাই এখানে বন্দোবস্তি ৭০০ একর জমিতে প্রায় ১ হাজার পরিবার চাষবাস করতো, তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল; তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হোক। বেজার চেয়ারম্যান বলেছে আরো প্রায় ৬৫০ একর ফসলি জমি কাজিরতালুক ও মঘাদিয়ায় নতুনভাবে অধিগ্রহণ করতে চায়। তবে সেখানে গ্রামটা বাদ দিতে হবে। বন্দোবস্তি ও অধিগ্রহণের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারা ডিসি অফিসের এলএ অফিসে যাবে না, এলএ অফিসের কর্মকর্তারা এই এলাকায় এসে অফিস করে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার অনুরোধ জানাই। আমি বিশেষ অনুরোধ করছি মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনীর স্থানীয়দের অগ্রাধিকারভিত্তিতে যেন চাকরি দেওয়া হয়, ইতোপূর্বেও আমি এই অনুরোধটা করেছিলাম।
মোশাররফের বক্তব্যের সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোশাররফ ভাই আপনি মিরসরাইয়ের চরাঞ্চলের জায়গার খোঁজ আপনি দিয়েছেন, ইকোনমিক জোন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যারা জমি দিয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা যেন কাজ পায়। শিল্পের জন্য নতুন করে ফসলি জমি নেওয়া যাবে না। যা নেওয়া হয়েছে যথেষ্ট। আগে সেখানে শিল্প কারখানায় ভরে যাক।’


জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, দেশি-বিদেশি ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হবে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে এবং প্রায় ৭ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ফেনী-৩ আসনের সংসদ সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসউদ উদ্দিন চৌধুরী, ফেনীর জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা, বসুন্ধরা গ্রুপ ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান তাজবীর, চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, বিজিএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী, মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমিন, মিরসরাই উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইয়াছমিন আক্তার কাকলী, নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন, নবনির্বাচিত উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইসমত আরা ফেন্সী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুন্ড ও ফেনী অর্থনৈতিক জোন নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর’সহ ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উদ্বোধন ও ১৩টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে ১৬টি বাণিজ্যিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রমের উদ্বোধন ও ২০টি শিল্প কারখানার ভিত্তিস্থাপন করেন তিনি। একই সঙ্গে আরও ৫ চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।