ফটিকছড়িতে পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা দালালদের কাছে জিম্মি

233

ফটিকছড়ি পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের গ্রাহকরা দালালের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পল্লী বিদ্যুতের মিটার, বিদ্যুতের তার পরিবর্তন, খুঁটি দেওয়া থেকে সব কাজ দালালরা করে থাকে। অঞ্চল ভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে দালালরা গ্রাহকদের সঙ্গে চুক্তি করে কাজ করে থাকে। দালাল ছাড়া পল্লী বিদ্যুতের কোনো কাজ হয় না। যে কোনো কাজ দালালদের মাধ্যমে করতে হয় বলে জানিয়েছে ভোক্তভোগীরা। গ্রাহকরা নিজে এসে কোনো কাজ করতে পারেন না বলে জানিয়েছেন। এসব কাজের সঙ্গে লাইনম্যান, পরিদর্শক থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কর্তারা মাসোয়ারা পেয়ে থাকেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। জানা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের আওতায় যে সব গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামের লোকজন আবাসিক মিটার, বাণিজ্যিক মিটার, শিল্পপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ, মিটার পরিবর্তন, ঘরের ওয়ারিংয়ের কাজ থেকে শুরু করে সব কাজের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে পল্লী বিদ্যুৎতের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দিয়ে করিয়ে থাকেন। সব মিলিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ফটিকছড়ি জোনাল অফিসের আওতাধীন শত শত বিদ্যুৎ গ্রাহক এক শ্রেণীর দালালের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। দালালরা নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের কথা বলে গ্রাহক থেকে দু’ ভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রথমে লাইন নির্মাণের সময় ও মিটার সংযোগের সময়ে। গত ৮ মাসে প্রায় ৭ হাজারের উপরে নতুন গ্রাহকের মিটার সংযোগ ও বিনা মূল্যে সরকারী ভাবে শত কিলোমিটারে উর্ধে নতুন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এসব থেকে দালালরা কি পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে; তা তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এসব দালালরা কেন প্রতিনিয়ত পল্লী বিদুৎ অফিসে আনাগোনা করে থাকে তা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সি সি ক্যামরার ফুটেজ দেখলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসবেও বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমান সরকার বিনা মূল্যে প্রতিটি পরিবারে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যে পল্লী বিদ্যুতের সার্ভেয়ার টিম এলাকা ভিত্তিক মাষ্টার প্লেন তৈরী করে। পরবর্তীতে দরপত্রের আহব্বান করে। দরপত্রে যে ঠিকাদার কাজ পায়; তার নিকট থেকে বা যে কোন উপায়ে এক শ্রেনীর দালাল মাষ্টার প্লেনের কাজের তালিকা বের করে। তালিকা মতে এলাকা পরিদর্শন করে যে বাড়ী বা বসত ঘর অনুমোদন হয়েছে, তা দেখে দ্রুত বিদ্যুৎ দিবে বলে গ্রাহক হতে ৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়। এসব দালালরা এলাকায় গ্রাহকের সাথে কথা বলে সরাসরি টাকা আদায় করতে সমস্যা হলে এলাকা থেকেও কয়েকজন দালাল সাথে নেয়। দালালদের এসব কাজ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অগোচরে থেকে যায়। পরে বিনা খরচে সরকারী ভাবে গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার পর যখন জানতে পারে প্রতারিত হয়েছে, তখন গ্রাহকের কিছু করার থাকেনা! এদিকে মাস্টার প্লেনের আওতায় গ্রাহককে নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার সময় ১পয়েন্ট ওয়ারিং করতে হয় পল্লী বিদ্যুতের ইলেকট্রেশিয়ান দিয়ে। অর্থাৎ রড, মিটার বোর্ড, মেইন সুইচ সহ বোর্ড, তার লাগানোর জন্য ১ হাজার টাকা। আর মিটার ৪ শত টাকা ও সদস্য ফি বাবৎ ৫০ টাকা খরচ হয়। আবার যাদের মাষ্টার প্লেনে নাম নেই তাদের অনলআইনে আবেদন করতে হলে আরো ২শত টাকা অতিরিক্ত লাগে। এতে মিটারসহ এক জন গ্রাহক বিদ্যুৎ পেতে খরচ হয় ১ হাজার ৪ শত ৫০ টাকা বা ১হাজার ৬ শত ৫০ টাকা। কিন্তু সেখানে মিটার সংযোগ প্রদানের জন্য দালালরা গ্রাহক হতে আদায় করে আসছে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে করে বর্তমান সরকারের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এদিকে এসব বিষয়ে ফটিকছড়ি সদর জোনাল অফিসের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডি জি এম মো. আবুল কালামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিদ্যুতের গ্রাহকরা বিনা রশিদে কাউকে টাকা দেবেন কেন? পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে মাইকিং ও কি ভাবে মিটার সংযোগ পাবে সে জন্য প্রচার পত্র বিলি করা হয়েছে। তবু দালালদের খপ্পরে পড়বে কেন? দালালদের খপ্পরে পরার বিষয়টি যেহেতু লোক মুখে শুনেছি, তা তদন্ত করে দেখা হবে।