প্রাথমিক সমাপনী ও জেএসসির ফল ফল প্রকাশেই শেষ নয়; ফলবান করার উদ্যোগ জরুরি

60

২০১৯ সালে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী সমাপনী এবং নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের জেএসসি, জেডিসির চারটি সমাপনী পরীক্ষার ফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও এসব পরীক্ষার ফল মোটামুটি সন্তোষজনক বলা যায়। এবার পিইসি পাস করেছে ৯৫.৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী আর ইইসি পাস করেছে ৯৫.৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। জেএসসি ও জেডিসিতে গড় পাসের হার ৮৭.৯০ শতাংশ। তবে দেশের সবকটি শিক্ষা বোর্ডের তুলনায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের জেএসসির ফল খুব একটা ভালো হয়নি। এসএসসি ও এইচএসসির রেজাল্ট-এর মতো জেএসসিতেও চট্টগ্রামবাসী হতাশ হয়েছে বলা যায়। তবে লক্ষ্য করার বিষয় যে, বোর্ড ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টমহল চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ফল বিপর্যয়ের জন্য পার্বত্য জেলা কক্সবাজারের দুর্গম এলাকাকে দায়ী করে আসলেও এবার জেএসসিতে এসব এলাকার ফল গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো হয়েছে। এমনকি কক্সবাজারের একটি বিদ্যালয় শীর্ষ দশে স্থান করে নিয়েছে। সুতরাং রেজাল্ট বিপর্যয়ের জন্য শুধু পার্বত্য জেলা বা কক্সবাজার জেলাকে দায়ী না করে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ উন্নয়ন ও লেখাপড়ার মান বৃদ্ধির প্রতি দৃষ্টি দেয়া জরুরি। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডকেও এর দায়িত্ব নিতে হবে।
সমাপনী পরীক্ষা যখন থেকে শুরু হয়েছে তখন থেকে লক্ষ করা যাচ্ছে, সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর কত শতাংশ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে এ আলোচনা বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে আসছে। ফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। আর যারা জিপিএ-৫ পায়নি সেসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা হতাশ হন। যেকোনো পরীক্ষার ফল সন্তোষজনক হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা আনন্দিত হবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু জিপিএ-৫ না পেলে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের হতাশ হওয়া উচিত নয়। কারণ যারা জিপিএ-৫ পায়নি তাদের কম মেধাবী ভাবার কোনো কারণ নেই। বিষয়টি উপলব্ধি করে জিপিএ-৫ তুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। গতকাল সাবারের একটি বই উৎসবে শিক্ষামন্ত্রী সংবাদকর্মীদের কাছে জিপিএ-৫ তুলে দিয়ে সিজিপিএ পদ্ধতি চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন। আমরা মনে করি, এটি যত দ্রæত তুলে দেয়া যায় ততই মঙ্গল। বস্তুত অভিভাবকদের বড় দায়িত্ব হল শিক্ষার্থীদের উৎসাহ প্রদান করা। শিক্ষার্থীরা উৎসাহ ও সুযোগ পেলে যে বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দিতে সক্ষম হবে, এটা জোর দিয়ে বলা যায়। এখনও অনেক অঞ্চলে গ্রামের শিক্ষার্থীরা শহরের শিক্ষার্থীদের মতো সুযোগ পাচ্ছে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও যাতে শহরের শিক্ষার্থীদের মতো সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা উদ্বেগের সাথে আরো একটি বিষয় লক্ষ করে আসছি, বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকের মূল চিন্তা থাকে কী করে বেশি নম্বর পাওয়া যায়, জিপিএ-৫ অর্জন করা যায়; বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতির কারণেই মূলত এমন চিন্তার প্রসার ঘটছে বলে প্রতীয়মান। এ ধরনের উদ্ভট চিন্তা দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম শিশু-কিশোরদের জন্য মোটেই সুখকর নয়। এই ব্যাধি শিক্ষার্থীদের কী ক্ষতি করছে, তা তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং এনসিটিবির পাঠ্যবই পড়ার বিষয়ে তাদের বিশেষভাবে উৎসাহিত করতে হবে। শিশুদের বিভিন্ন বিষয়ের গ্রন্থ পাঠে যত বেশি সময় নির্ধারণ করা যাবে, নতুন বিষয়ে জানতে তারা তত বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এছাড়া কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার উদ্যোগও সরকারকে নিতে হবে। সমাপনী পরীক্ষা, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার নামে যে কোচিং বাণিজ্য অবাধে চলছে, তা থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে না পারলে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম মেধাশূন্য নাগরিকে পরিণত হবে। আমরা আশা করি, সমাপনী পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে আলোচনা-সমালোচনায় শেষ করলে হবে না; শিক্ষার্থীদের ফলবান, মেধাবী ও সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে।