প্রাণহানির ঘটনায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

27

বঙ্গোপসাগরের সেন্টমার্টিনে মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ডুবিতে ১৫ জনের প্রাণহানির ঘটনায় ১৯ মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার সকালে টেকনাফ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন টেকনাফ কোস্টগার্ডের কন্টিজেন্ট কমান্ডার এস এম ইসলাম।
এই মামলায় টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীয়া পাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আলমকে (২৮) প্রধান আসামি করে গ্রেপ্তার চার জনসহ আরও ১৫ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস বলেন, সাগরে মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ডুবিতে প্রাণহানির ঘটনায় কোস্ট গার্ড বাদি হয়ে একটি মামলা রুজু করেছে। এই মামলায় ৮ জন আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কক্সবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, অন্য পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া মৃত দেহগুলো ময়না তদন্ত শেষে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি উদ্ধার ভিকটিমদের আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে।
পুলিশের সূত্র জানায়, সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে যাত্রীবাহি একটি ট্রলার সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি কোরালে ধাক্কা লেগে ডুবে যায়। এতে ১৫ জন প্রাণ হারায় এবং ৭২ জন মালয়েশিয়াগামী
যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তাদের থানায় সোপর্দ করে, ২০১২ সালের মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন অবৈধ পথে মানব পাচার ও একই উদ্দেশ্যে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝায়সহ ট্রলার নিমজ্জিত করে মানুষ হত্যার অপরাধে একটি মামলা করে কোস্ট গার্ড। এতে ১৯ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি আরও ৭ থেকে ৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
আসামিরা হলেন, টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়ার মো. আজিজ (৩০), একই এলাকার ফয়েজ আহাম্মদ (৫০), মো. করিম (৪৯), জুম্মা পাড়ার সাদ্দাম হোসেন (২০), একই এলাকার মো. রফিক (২৬), আব্দুস সালাম (৩০), সাইফুল ইসলাম (২৫), কোনার পাড়ার মো. হোছন (৪৫), কচ্ছপিয়া এলাকার মো. আয়ুব (৩৫), জাফর আলম (৩৫), আব্দুর রহিম (২৫), বাঘগোনা এলাকার নুরুল ইসলাম (৪০), ফ্রিস ভাঙ্গা এলাকার সৈয়দুল হক (৩০), টেকনাফ সদরের মিঠাপানির ছড়ার ইউনুচ ওরফে ইউনুচ মাঝি (৪০), হাবির ছড়ার মো. সালাম (৪৫), রাজার ছড়ার হুমায়ুন কবির (২০), উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ডি-৬৪ বøকের ১০ নম্বর রুমের মো. ওসমান (৩০), আমির হোসেন ও সাবরাং ইউনিয়নের পানছড়ি পাড়া এলাকার আব্দুল গফুর প্রকাশ ইসমাইল (৩০)।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, মালয়েশিয়াগামী ট্রলার ডুবির ঘটনায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। এই মামলায় ৮জন মানব পাচারকারীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মানব পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে আরও ব্যাপক তথ্যর জন্য আসামিদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এএসপি আরও বলেন, মানব পাচার রোধে আমরা জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি। সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মানব পাচার ঠেকাতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প, স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় মানব পাচার রোধে প্রচারণা চালানো হবে এবং পলাতক আসামিদের ধরতে পুলিশ মাঠে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, বুধবার সকালে বঙ্গোপসাগর এলাকা থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ নামে এক যুবককে উদ্ধার করা হয়েছে। পরে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর আগে ১৫ জন মৃত এবং ৭২ জনকে জীবত করা হয়েছিল। জাহাজ, হেলিকপ্টার, স্পীড বোট ও ট্রলার নিয়ে নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলছে।
প্রসঙ্গত গত সোমবার রাতে টেকনাফের নোয়াখালীয়া পাড়ার উপক‚ল হয়ে অবৈধ ভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় সেন্টমার্টিনের কাছাকাছি পাথরে ধাক্কা লেগে পানিতে ডুবে যায় ১৩৮ জন বহনকারী একটি ট্রলারটি। এসময় যাত্রী আব্দুল ৯৯৯ নম্বরে কল করে বাঁচার আকুতি জানানোর পর কোস্ট গার্ড উদ্ধার অভিযানে যায়। এতে বুধবার বিকেল পর্যন্ত ১৫ জনের মৃতদেহ এবং ৭৩ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বাকিরা এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।