প্রসঙ্গ : নারী দিবস

35

আজ নারী দিবস। বিশ্বে বেশ ঘটা করেই এই ৮ মার্চ নারী দিবসটি পালন করা হয়। এ দিবসটিতে অনেক নারী নেত্রীই বেশ ঘটা করে বক্তব্য দিয়ে থাকেন। দেশের অনেক বড় বড় নেতারাও কথা বলে থাকেন এ দিবসটি উপলক্ষে। বলা হয়ে থাকে এসব দিবস নাকি নারীকে সম্মানিত করেছে। এখান থেকেই নারীকে সচেতন হওয়া আহব্বান করা হয়! জাগতে আহব্বান করা হয়! ব্যাপারটা আমার কাছে অনেকটা এমন, বাতির নিচে অন্ধকার যেমন। আচ্ছা আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো, সত্যিই কি নারীদের জন্যে এই দিবসটির কোন দরকার আছে ? পুরো বিশ্ব এ দিবসটি প্রতি বছরই ঘটা করে উদযাপন করে। একবারও কি মনে হয় না, নারী দিবস দিয়ে নারীকে সম্মান নয়, অসম্মানই করা হচ্ছে? কেন না নারীকে এই দিবসের মাধ্যমে দুর্বলই ভাবা হচ্ছে। যা সম্মানের নামে লিঙ্গ বৈষম্যের স্পষ্টত ইংগিত দিচ্ছে এই নারী দিবস। যদি মনে করেন অসম্মান নয়, সম্মানই জানানো হচ্ছে তাহলে আমাকে বলবেন, আলাদা করে একটি দিন নারীকে ঘটা করে কেন এই সম্মান দেয়া হচ্ছে? তাহলে কি পুরুষ অপেক্ষায় নারী দুর্বল? পুরুষের দয়াতেই কি নারীকে বেঁচে থাকতে হয়? যদি এমন ভেবে থাকেন, তবে ভুল। নারী হচ্ছে এ পৃথিবীতে সব থেকে ধৈর্যশীল ও শক্তিশালী। যার প্রমাণ ফরাসি নাট্যকার ও বিপ্লবী নারী ওলিম্পে দ্যা গগ্স। যিনি ১৭৯১ সালে ‘নারী অধিকার এবং মহিলা নাগরিকদের ঘোষণা’ প্রকাশ করেন। তিনি ওই ঘোষণাতে বিশ্বব্যাপী নারীদের জেগে উঠার আহব্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘নারী জেগে উঠো; গোটা বিশ্বে যুক্তির সঙ্কেত ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। তোমার অধিকারকে আবিষ্কার করো। প্রকৃতির শক্তিশালী সাম্রাজ্য এবং পক্ষপাত, গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও মিথ্যা দিয়ে অবরুদ্ধ নয়। সত্যের শিখা পাপ ও অন্যায় দখলের মেঘকে দূর করে দিয়েছে।’ নারী আন্দোলন, পুরুষতান্ত্রিক তথা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ভেঙে বৈষম্যহীন একটা সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ওলিম্পে। তার আহব্বানে বিশ্বের নারী সমাজও জেগে উঠেছিলো। যা মেনে নিতে পারেনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। যার ফলে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছিল তাকে। ১৭৯৩ সালে এই নারী আন্দোলনের সাহসী মানুষটিকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে ফ্রান্স। যা ছিল নিষ্ঠুর ও অত্যন্ত বর্বর একটি অধ্যায়। তবে অসীম সাহসী ওলিম্পে ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার আগে দুরন্ত সাহস নিয়ে বলেছিলেন, ‘নারীর যদি ফাঁসি কাষ্ঠে যাবার অধিকার থাকে, তবে পার্লামেন্টে যাবার অধিকার থাকবে না কেন’?
এখন আপনিই বলুন, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যদি নারী ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে পারে, নারী যদি নিজ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য পুরো বিশ্বের সাথে লড়াই করতে পারে, তাহলে সে নারীর জন্য আলাদা করে নারী দিবসের সত্যিই কি কোন দরকার আছে? একবারও কি মনে হয় না, নারী দিবসের মাধ্যমে নারীকে মানুষ নয়, নারী হতেই শিক্ষা দিচ্ছে?
নারীদের জন্য আলাদা করে আবার একটি দিনের কি দরকার? আজকের নারীরা এখন আর চার-দেয়ালে বন্দী নয়। তারা কোথায় কোথায় পৌঁছে যাচ্ছেন প্রতিদিন। সে স্বতন্ত্র, স্বাধীন। আজকের নারী জানে সে কি চায়। কোথায় তাকে কি করতে হবে? কোথায় কি বলতে হবে? সে ঘর-বর-অফিস এক হাতেই সামলাচ্ছে। যা এক পুরুষের পক্ষে সম্ভব নয়।