প্রশাসনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সংকট

67

প্রাত্যহিক ১৫টি উপজেলার প্রশাসনিক কাজের বাইরে বেদখলে রাখা সরকারি জায়গা কিংবা স্থাপনায় উচ্ছেদ অভিযান, মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনা ও বাজার মনিটরিংয়ের মত আট ধরনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে হয় জেলা প্রশাসনের অধীনে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের। আসন্ন রমজানসহ কর্ণফুলী তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনার প্রেক্ষাপটে নির্বাহী হাকিমদের চাহিদা ও প্রয়োজনীয়তা তুঙ্গে থাকার এই সময়ে যেন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার খরায় আক্রান্ত হয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, জেলা প্রশাসনের প্রায় ২৯টি শাখা রয়েছে। এসব শাখার বিপরীতে সহকারী কমিশনার হিসেবে ২৬ কর্মকর্তা পদায়ন করা হলেও প্রশিক্ষণজনিত কারণে তাদের বেশিরভাগই ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা যেসব শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন সেসব শাখার কাজও অন্য শাখার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে চালিয়ে নেয়া হচ্ছে। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন শাখায় কর্মরত সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপর দাপ্তরিক কাজের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। একেকজন কর্মকর্তাকে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে সাতটি শাখারও দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। দাপ্তরিক কাজের সীমাহীন চাপের কারণে নিয়মিত মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম অনেকটাই বন্ধ রয়েছে। শাখাগুলো হল, শিক্ষা, জেনারেল সার্টিফিকেট, প্রবাসী কল্যাণ, তথ্য ও অভিযোগ এবং আগ্নেয়াস্ত্র শাখা, রেভিনিউ মুন্সিখানা (আর,এম), জে. এম. ফরমস্ স্টেশনারি এবং ট্রেজারি শাখা, আইসিটি, পি.এস. রেকর্ড, আর.এস রেকর্ড এবং লাইব্রেরি ও হজ শাখা, নেজারত, ব্যবসা ও বাণিজ্য, বহিরাগমন ও পাসপোর্ট এবং পেনশন ও কল্যাণ শাখা। প্রশাসনে প্রতিদিনের কাজে নিয়মিতভাবে অন্তত ৩৫ জন কর্মকর্তা থাকার কথা থাকলেও পদোন্নতি ও দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণজনিত কারণে বর্তমানে শুধুমাত্র ছয়জন কর্মকর্তা দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। জেলা প্রশাসনকে রাজস্ব সার্কেলের আওতাধীন ১৫টি উপজেলার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি নগরীতে নানা কাজ সামাল দিতে হয়। এসব কাজের প্রায় প্রতিটিতে দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয় প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের। এই মুহূর্তে সহকারী কমিশনার পদের ১৪ কর্মকর্তার একজনও দায়িত্বে নিয়োজিত নেই। কর্মকর্তা-খরার কারণে বর্তমানে প্রাত্যহিক কাজ চালিয়ে নিতে যেমন প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তেমনি আসন্ন রমজানে বাজার মনিটরিং কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অনেকটা অনিশ্চিতার মুখে পড়েছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘প্রশাসনজুড়ে বিরাজমান জনবল সংকটের এই চরম অবস্থার কথা জানিয়ে ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা ছয়জন কর্মকর্তার মধ্যে গড়ে অন্তত চারজনকে প্রতিদিন প্রটোকলে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। ১৪ জন নতুন সহকারী কমিশনারকে এখানে পদায়ন করা হলেও স¤প্রতি এদের সবাইকে প্রশিক্ষণের জন্য বাইরে পাঠানো হয়েছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই নাজুক। দ্রুততম সময়ে মধ্যেই আমাদের জনবল দরকার। তা না হলে আমাদের নিয়মিত কাজ বিঘ্নিত হওয়া ছাড়াও সেবাপ্রার্থীদের সাধারণ মানুষদের অনাকাংখিত ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।’
প্রশাসন সূত্র বলছে, রিটসহ নানা জটিলতায় বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পুনরায় চালুর নির্দেশনা রয়েছে উচ্চ আদালতের। কিন্তু নির্দেশনা অনুযায়ী উচ্ছেদের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যান্য জটিলতার পাশাপাশি রয়েছে নির্বাহী হাকিমের সংকটও। এছাড়া, সহকারী ভূমি কমিশনার (এসি-ল্যান্ড) এর ২১ টি পদের মধ্যে সাত কর্মকর্তার পদ শূন্য রয়েছে। এ অবস্থায় সাথে পর্যাপ্ত নির্বাহী হাকিম পাওয়া না গেলে আসন্ন রমজান মাসে বাজার মনিটরিংয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। অন্যদিকে, বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে আগামী ১৫ মে থেকে নগরীর বিভিন্ন পাহাড় কিংবা পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে অভিযান শুরু করতে চায় জেলা প্রশাসন। সবমিলিয়ে সর্বক্ষেত্রে নির্বাহী হাকিমদের বাড়তি চাহিদা বিরাজ করছে। নির্বাহী হাকিম ছাড়া এসব কার্যক্রমের একটিও শুরু করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব নয়।
কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি এস এম নাজের হোসেন নির্বাহী হাকিমের এই সংকটকে ভয়াবহ পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করেন। নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী নয়জন কর্মকর্তার মধ্যে পাঁচজনই নেই। তার মানে ষোলআনা যেখানে দরকার, সেখানে আট আনাও নেই। অথচ, আমাদের সামনে পবিত্র রমজানসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন সময় এসে হাজির হয়েছে। রমজানের পবিত্রতা ও বাজারমূল্য সহনীয় মাত্রায় রাখতে বর্তমানে মনিটরিং কার্যক্রম অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আমরা আশা করব, অতি সত্বর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর অন্যান্য জেলা থেকে এনে হলেও এ সমস্যার সমাধান করবে।’