প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে ২ শিক্ষককে অপসারণের দাবি

54

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সম্প্রতি প্রশাসনিক দায়িত্ব পাওয়া দুই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে অনশন করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ। গতকাল বুধবার বিকেল ৩টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বরে অনশন শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরীর আহব্বানে অনশন তুলে নেন তিনি। পরে প্রক্টর কার্যালয়ে অনশনকারী ছাত্রলীগ নেতার সাথে আলোচনা করেন। ওই দুই শিক্ষক হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালনা ও প্রকাশনা দপ্তরের পরিচালকের দায়িত্ব পাওয়া নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন ও সহকারী প্রক্টরের দায়িত্ব পাওয়া সমাজতত্ত¡ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. হানিফ মিয়া। এই দুই শিক্ষক গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কটূক্তিকারী’ সমাজতত্ত¡ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলামের পক্ষে মানববন্ধন করেছিলেন বলে দাবি অনশনকারী ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখারের।
২০১৮ সালের ২৩ জুলাই মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলাও করেছিলেন অনশনকারী এ ছাত্রলীগ নেতা।
অনশনের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইফতেখার উদ্দিন আয়াজ বলেন, স¤প্রতি ড. রাহমান নাসির উদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা পরিচালনা ও প্রকাশনা দফতরের পরিচালক পদে এবং ড. হানিফ মিয়াকে সহকারী প্রক্টর পদে নিয়োগ দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। অথচ এই দুই শিক্ষক প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তিকারী মাইদুল ইসলাম ও কোটা সংস্কারকারীদের পক্ষে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এদের দুইজনকে প্রশাসনিক দায়িত্ব দিয়েছে উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন কর্মকান্ড শেখ হাসিনার সাথে প্রতারণার শামিল। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে এটা কখনোই মেনে নিতে পারি না। এজন্য আমি অনশনে বসেছিলাম। পরে প্রক্টর স্যার এসে আমাকে আলোচনার জন্য নিয়ে যান। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। তাই আজকের মতো অনশন তুলে নিয়েছি। কাল ফের অনশনে বসবো।
এদিকে অনশন চলাকালীন ঘটনাস্থলে আসেন সহকারী প্রক্টর ড. হানিফ মিয়া। এসময় তিনি অনশনকারীকে শিক্ষক মাইদুল ইসলামের স্ত্রীর একটি স্ট্যাটাস দেখিয়ে চলে যান। এসময় মাইদুলের মামলার সাক্ষী শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপ-সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ইমাম উদ্দি ফয়সাল পারভেজ ও ছাত্রলীগ নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় এসে আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের দাবি, ইফতেখার ছাত্রলীগের কেউ না। তিনি প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় অভিযোগ না করে অনশনে বসতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা বলেছি, এর পেছনে কি উদ্দেশ্য আছে- তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী বলেন, আমরা আলোচনা করে তার দাবির বিষয়ে জেনেছি। আমাদের আহব্বানে সে অনশন তুলে নেয়।
উল্লেখ্য, তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলা দায়েরের পর গত বছরের ৬ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে শিক্ষক মাইদুল ইসলাম আট সপ্তাহের আগাম জামিন নেন। জামিন শেষে ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন মাইদুল ইসলাম। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এরপর একই বছরের ৮ অক্টোবর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালত তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর এই মামলায় হাইকোর্ট থেকে শিক্ষক মাইদুল জামিন পান। তবে আদেশনামাটি ২০ দিন পর চট্টগ্রাম এসে পৌঁছায়। ফলে কারাগার থেকে ওই বছরের ৩০ অক্টোবর মুক্তি পান তিনি। এর আগে একই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। তবে বর্তমানে জামিনে থাকায় তুলে নেয়া হয় সে বরখাস্তের আদেশ। এদিকে তিনি নেদারল্যান্ডে উচ্চ শিক্ষায় স্কলারশিপ পেয়েও ছুটি পাচ্ছেন বিভাগ থেকে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।