প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ মানছে না পরিষদ

51

কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহাস্থ হাজী ওমরা মিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিমের বিরুদ্ধে অনিয়মের নানা অভিযোগ। তদন্ত শেষে সত্যতা পেয়েছেন মর্মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বাবুল চন্দ্র নাথ। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৮ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামশুল তাবরীজ স্কুলের পরিচালনা কমিটির নিকট পত্র দেন। আদেশ করা হয় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুর রহীমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে তাকে অবগত করার জন্য। কিন্তু স্কুল পরিচালনা পরিষদ ওই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে বর্তমান শিক্ষকের নেতৃত্বে শিক্ষার মানোন্নয়নে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার সহযোগিতা এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের প্রতিবেদন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে লিখিতভাবে ইউএনওকে জানানো হয়। তাতে বলা হয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ভাগ্নীকে বিভিন্ন অভিযোগে স্কুল থেকে অপসারণ করায় ক্ষোভের বসে ওই প্রতিবেদন দিয়েছেন। অথচ প্রতিবেদন দেয়ার কয়েক মাস আগেই ওই শিক্ষা অফিসার স্কুলের একটি অনুষ্ঠানে ইতোপূর্বেকার সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং স্কুলের পাঠদান ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রশংসা করেন বলে জানানো হয়।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ স্কুলটি নানা ইস্যুতে শিক্ষক আর পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে গ্রুপিংয়ের কারণে শিক্ষার মান পেছনে পড়ে থাকে। বর্তমান প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম যোগদানের পর শিক্ষার মান কিছুটা বাড়লেও শিক্ষকদের মধ্যে বেতন বৈষম্যের কারণে গ্রুপিং লেগে আছে। এসব শিক্ষকের বড় একটি অংশ উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারী, শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রাতিষ্ঠানিক বেতন নেয়ার গুরুতর অভিযোগ আনা হয়। কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশে এসব অভিযোগ তদন্ত করেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র নাথ। এরপর ৫ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করেন।
তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ সামশুল তাবরীজ ২৮ মে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিয়ে তার দপ্তরে অবহিত করার জন্য স্কুল পরিচালনা কমিটিকে নির্দেশ দেন। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এম মহিউদ্দিন চৌধুরী তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং নির্দেশের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার বদলে তার মাধ্যমে শিক্ষার মনোন্নয়নে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহযোগিতা কামনা করে গত ১৫ জুন ইউএনও বরাবর একটি পত্র দেন। তাতে প্রতিবেদন একপেশে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার ভাগ্নিকে বিভিন্ন অভিযোগে স্কুল থেকে অপসারণ করায় ক্ষোভের বসে ওই প্রতিবেদন দিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন। তাতে আরো বলা হয় গত কয়েক মাস আগেও ওই তদন্ত কর্মকর্তা স্কুলের এক অনুষ্ঠানে শিক্ষার অগ্রগতিসহ নানা বিষয়ের প্রশংসা এবং বর্তমান প্রধান শিক্ষকের হাত ধরে এ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেন।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র নাথ প্রতিবেদনে প্রধান শিক্ষকের মধ্যে সবগুলো অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন উল্লেখ করেন এবং গুরুতর তিনটি বিষয়ে আলোকপাত করেন। এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বাবুল চন্দ্র নাথ বলেন, নারী শিক্ষিকাদের তার কক্ষে বসিয়ে রাখা, অন্য শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ ও প্রধান শিক্ষক কর্তৃক প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়ম বর্হিভূতভাবে বেশি বেতন নেয়া গুরুতর অপরাধ। তিনি বলেন, স্কুলের সভাপতি কর্তৃক একজন শিক্ষককে সরকারি বেতন ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বেতন নেয়ার সুযোগ দেবেন এটা কাম্য নয়। এটা সরকারি প্রজ্ঞাপন বিরোধী। তিনি বলেন, এ স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রæপিংয়ে জড়িয়ে আছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি আশানুরূপ এগুতে পারেনি। বর্তমান প্রধান শিক্ষক সরকারি ও প্রতিষ্ঠানিক মিলিয়ে ৩০ হাজার টাকার মতো বেতন পান। আর অন্য শিক্ষকরা ৩ হাজার টাকার মধ্যে। এ কারণে গ্রæপিয়ে চরম আকার ধারণ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার ভাগ্নিকে স্কুল থেকে অপসারণে তিনি ক্ষুব্দ নন। এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। স্কুল পরিচালনা কমিটির পক্ষ থেকে প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে পত্র দেয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন, তবে এখনো দেখার সুযোগ হয় নি বলে তিনি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ সামশুল তাবরীজ জানান, তার আদেশ প্রত্যাখান করে পরিচালনা কমিটি কর্তৃক একটি পত্র তার দপ্তরে পৌঁছেছে। তিনি সেটি দেখেছেন, তবে এখনো মূল্যায়ন করা হয় নি। আগামী সপ্তাহে ওই পত্রের আলোকে কি করা যায় এবং কি কারণীয় তা খতিয়ে দেখবেন জানিয়ে বলেন, বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ মানেই বরখাস্ত করার আদেশ নয়। শোকজ হতে পারে। অভিযোগের বিষয়ে শোকজের জবাব প্রাপ্তির পর পরিচালনা কমিটি যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু তা না করে কেন প্রত্যাখ্যান করা হলো পত্রটি ভালোভাবে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে বলা যাবে। তিনি বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তার সহকর্মীরা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করেছেন।