প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে অনুপ্রাণিত-উদ্বুদ্ধ ব্যাডমিন্টন তারকা জিয়ার কৃষিবিপ্লব

14

এম. হায়দার আলী

বাংলাদেশ জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের সাবেক খেলোয়াড় মো. জিয়া হোসেন। ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা জুনিয়র ব্যাডমিন্টনে রানার্স আপ হওয়ার পরের বছর জেলা পর্যায়ে ব্যাডমিন্টনে একক ও দ্বৈত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল জিয়া। একের পর এক কৃতিত্বের সম্মাননা তাকে নিয়ে গেছে জাতীয় পর্যায়ে। তিনি হয়ে উঠেন বাংলাদেশের ব্যাডমিন্টন তারকা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। লাল-সবুজের প্রতিনিধি হিসেবে ব্যাডমিন্টন খেলেছেন বিশ্বের ১৫টি দেশে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে জাতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে সম্মাননা পত্র ও ক্রেস্ট পেয়েছেন।
শুধু খেলোয়াড় নয়, প্রশিক্ষক হিসেবেও সমান দক্ষতা দেখিয়েছেন জিয়া। জিয়া বর্তমানেও কিছু ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাব ব্যাডমিন্টন কোর্টে। এর মধ্যে তার এক ছাত্র মোস্তফা জাবেদ জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তার আরেক ছাত্র নিখিল চন্দ্র ধর কাতার ব্যাডমিন্টন জাতীয় দলের কোচের দ্বায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও দেশব্যাপি তার প্রচুর ছাত্র-খেলোয়াড় বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে আছে। করোনাকালে যখন খেলার মাঠে যাওয়া বন্ধ, তখন তিনি গেছেন ফসলের মাঠে। এখানেও হয়েছেন সফল। চট্টগ্রামের বাঁশখালীর জলদী গ্রামের মরহুম রফিক আহমেদ ও নূর আয়েশা বেগমের ৬ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট জিয়া হোসেনের জন্ম ১৯৭৯ সালে। তার দাদা নগরীর পাথরঘাটা চামড়া গুদাম এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম পেয়ার মিয়া সওদাগর। বৈবাহিক সূত্রে শ্বশুরবাড়ি রংপুরের লালমনিরহাটে জমি বর্গা নিয়ে তিনি আলুসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করে লাভবান হয়েছেন। পাশাপাশি পাট চাষ, ভুট্টা ও মাছ চাষ করেও দেখেছেন লাভের মুখ।
জিয়া হোসেন তার কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে শুরুতে ৬০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন সবজি চাষে। ক্ষেতে সবজির পরিচর্যায় নিয়োগ দিয়েছেন দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে অভাবী শ্রমিকদের। এতে এলাকার বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান যেমন হয়েছে, তেমনি তাদের উৎপাদিত রঙিন আলু বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা পাচ্ছে সরকার।
এক সন্তানের জনক জিয়া হোসেন জানান, করোনাকাল আমাদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখিয়েছে। নিজের জন্মপল্লী ছেড়ে সুদূর লালমনিরহাটে গিয়ে এই সময়টাতে কৃষিচাষে নিযুক্ত করেছি নিজেকে। এখানকার অনেক জমি এখনও অনাবাদী। আমাদের উৎপাদিত সাদা রঙের আলুর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে দেশীয় বাজারে। পাশাপাশি বড় আকারের রঙিন আলু বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। চলতি বছর আমার ক্ষেতে প্রায় ১ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। আগামীতে এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারবো বলে আশা করছি এবং আরো তিনটি কৃষিখাত বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এই কৃষিকাজে এলাকার দরিদ্র শ্রমজীবীদের নিযুক্ত করে তাদের দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টাও করছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বৃতি দিয়ে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-বাংলাদেশ ব্যাংক কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার নতুন একটি স্কিম গঠন করবে। এখানে সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ। এই তহবিল থেকে গ্রামাঞ্চলে যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষি, তাদের দেওয়া হবে। যারা পোলট্রি, কৃষি ফার্ম, ফলমূল, মসলাজাতীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন করবেন, তারা এখান থেকে ঋণ নিতে পারবেন, যাতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং সরবরাহ হয়। এটা সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে কৃষিকাজ অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস সারা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে, এখানে খাদ্যাভাব মারাত্মকভাবে দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের উর্বর মাটি আছে, মানুষ আছে। আমরা কিন্তু নিজেদের চাহিদা পূরণ করে অনেককে সাহায্য করতে পারব যদি আমরা যথাযথভাবে খাদ্য উৎপাদন করতে পারি।’
প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে, উদ্বুদ্ধ হয়েছি আমি।