প্রধানমন্ত্রীর বড় অংকের আর্থিক প্রণোদনা অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে

44

আকস্মিক মহামারী নোভেল কোভিড-১৯ তথা করোনাভাইরাস বিশ্বের সবকিছুকে স্থবির করে দিয়েছে। লকডাউনের কারণে গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেরও সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থগিত হয়ে পড়েছে। মানুষের জীবনরক্ষায় এ ধরনের সাময়িক স্থবিরতা যেমন যৌক্তিক, তেমনই এর পরবর্তী ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আগাম ব্যবস্থা নেয়াও অপরিহার্য। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই এমন আগাম ব্যবস্থা নিয়েছে বড় বড় অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে। আমাদের সরকারপ্রধান এক্ষেত্রে আন্তরিক, তার প্রমাণ দেখা গেছে অচলাবস্থার সময়ে পোশাক শিল্পের কর্মচারীদের বেতন পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণার মধ্য দিয়ে। এরপর তৈরি পোশাকশিল্প গার্মেন্টসহ সকল রফতানিমুখি শিল্প প্রতিষ্ঠান আশ্বস্ত হয়ে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানান। অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রবাহের অংশীদার সকল শ্রেণি-বিভাগকে এ সুবিধার আওতায় আনার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় গতকাল রবিবার সংবাদ সম্মেলন করে বড় অংকের আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেন। করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় নতুন একটি প্যাকেজসহ মোট পাঁচটি প্যাকেজে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব প্যাকেজ ঘোষণার সময় বলেন, তাৎক্ষণিক, স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী পর্যায়ে এসব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। কর্মপরিকল্পনাগুলো হলো, সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা : প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকরি ব্যয়ের ক্ষেত্রে ‘কর্মসৃজনকে’ মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিদেশ ভ্রমণ ও বিলাসী ব্যয় নিরুৎসাহিত করা হবে। আমাদের ঋণের স্থিতি-জিডিপির অনুপাত অত্যন্ত কম (৩৪ শতাংশ)। বিধায় অধিকতর সরকারি ব্যয় সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর কোনও চাপ সৃষ্টি করবে না।’ আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ: ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে কতিপয় ঋণ সুবিধা প্রবর্তন করা হবে। অর্থনৈতিক কর্মকাÐ পুনরুজ্জীবিত করা, শ্রমিক-কর্মচারীদের কাজে বহাল রাখা এবং উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অক্ষুণœ রাখাই হলো আর্থিক সহায়তা প্যাকেজের মূল উদ্দেশ্য। সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি: দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনগণ, দিনমজুর এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা হবে। যেমন-বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়, লক্ষ্যভিত্তিক জনগোষ্ঠীর মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ, বয়স্কভাতা এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীদের জন্য ভাতা কর্মসূচির আওতা সর্বাধিক দারিদ্র্যপ্রবণ ১০০টি উপজেলায় শতভাগে উন্নীত করা এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহীত অন্যতম কার্যক্রম গৃহহীন মানুষদের জন্য গৃহনির্মাণ কর্মসূচি দ্রæত বাস্তবায়ন করা। মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা: অর্থনীতির বিরূপ প্রভাব উত্তরণে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে সিআরআর এবং রেপোর হার কমিয়ে মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। যা আগামীতেও প্রয়োজন অনুযায়ী অব্যাহত থাকবে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য থাকবে যেন মুদ্রা সরবরাহজনিত কারণে মুদ্রাস্ফীতি না ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস সংক্রমণে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর কী ধরনের বা কতটুকু নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা এখনও নির্দিষ্ট করে বলার সময় আসেনি। তবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাবও তিনি তুলে ধরেছেন। এছাড়া এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ঘোষিত অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণকে হার মানাতে পারে বলেও আশংকা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ ৩.০২ বিলিয়ন ডলার হবে মর্মে প্রাক্কলন করেছে।
আমরা লক্ষ্য করেছি, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এ প্রণোদনায় রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক যোগানদাতা সকল পেশা, শ্রেণি ও প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের স্তরবিন্যাস করে আলাদা প্যাকেজের আওতায় আনায় আমরা মনে করি, এ সুবিধা পেতে আর কারো হয়রানীর স্বীকার হতে হবেনা। তবে কিছুদিন আগে ঘোষিত প্রণোদনার ক্ষেত্রে যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দেখা দিয়েছে, তা যেন এখানে দেখা না যায়, এবং স্বচ্ছতার সাথে এ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকার মহৎ উদ্যোগ নিয়ে জনসুবিধা নিশ্চিত করার ঘোষণা দেয়ার পরও আমলাতান্ত্রিকতার অদ্ভুত শর্তারোপের ঘেড়াকলে আটকে যায়, সরকারের অনেক আন্তরিক ও ইতিবাচক উদ্যোগও। করোনাভাইরাসের কারণে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য এটি মূলত একটি মাস্টারপ্ল্যান।
করোনাভাইরাস মহামারীর পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি এ পরিকল্পনা প্রশংসার দাবি রাখে। আমরা আশা করব, সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপে, নানামুখি তহবিল এবং প্রণোদনা বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।