প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে স্বাক্ষর হবে ৮ চুক্তি

51

টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আগামী ১ জুলাই প্রথম চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই সফরে দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই ছাড়াও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা হবে। চীনের ডালিয়ানে অনুষ্ঠেয় ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের বার্ষিক সভায়ও বক্তব্য দেবেন শেখ হাসিনা। ‘সামার দাভোস’ নামে পরিচিতি পাওয়া এই সভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ, একাডেমি ও সাহিত্য-সংস্কৃতির ১৮০০ এর বেশি প্রতিনিধি অংশ নেবেন।
শেখ হাসিনার এই সফর তার গত মেয়াদের বেইজিং সফরের চেয়ে ভিন্ন হচ্ছে। ওই সফরে মূলত বিনিয়োগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হলেও এবার রোহিঙ্গা ইস্যুকে প্রাধান্য দেওয়া হবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন। তিনি গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ৪ জুলাই চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেছিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি তুলবেন। বৈঠকে আমরা নিজেদের বক্তব্যগুলো তুলে ধরব। তাদের (চীন) ওপর আমাদের ভরসা আছে’।
২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে শুরু করার পর থেকেই এই সংকট সমাধানে তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র চীনের শরণ নেওয়ার পরামর্শ আসছিল। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এ বিষয়ে মনোভাবের পরিবর্তন হয়েছে। এক সময় যারা এটার বিরোধিতা করেছে তারা আবার আমাদের বক্তব্যের কাছাকাছি এসেছে। তারা এখন আমাদের পক্ষে কথা বলছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন বড় মাপের কূটনীতিক। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার একটি বিশেষ জায়গা রয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে উনার খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে, ৫ জুলাই তার সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধানমন্ত্রী’। খবর বিডিনিউজের
চীনের ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসের চেয়ারম্যান লি ঝাংসুর সঙ্গেও বৈঠক করবেন প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টিতে শি জিনপিংয়ের পর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে তাকেই বিবেচনা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই বার্তাটি দেব যে, সমস্যার (রোহিঙ্গা) সমাধান না হলে এই অঞ্চলে অনিশ্চয়তা দেখা দেবে এবং এখানকার উন্নয়ন প্রচেষ্টার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চীনের বাংলাদেশের পাশাপাশি মিয়ানমারেও বিনিয়োগ রয়েছে। এই বিনিয়োগ ঘিরে তাদের প্রত্যাশাও রয়েছে। বিষয়টি অমীমাংসিত থাকলে তাদের ওই প্রত্যাশায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে’।
প্রধানমন্ত্রীর চার দিনের এই সফরে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এসব প্রকল্পে মোট টাকা ঋণ নেওয়া হবে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, ‘এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। আমরা এখনও এগুলো চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়ায় আছি’।
চুক্তিগুলো হচ্ছে, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে গভর্নমেন্ট কনসেশনাল লোন চুক্তি, ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ ও শক্তিশালীকরণ নিয়ে প্রিফারেনশিয়াল বায়ার্স ক্রেডিট লোন চুক্তি, পিজিসিবি প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ গ্রিড নেটওয়ার্ক জোরদার প্রকল্পের জন্য ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি, বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা বিষয়ক চুক্তি। এছাড়াও ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ওয়ার্কিং গ্রæপ প্রতিষ্ঠা নিয়ে সমঝোতা স্মারক, ইয়ালু ঝাংবো ও ব্রহ্মপুত্র নদীর তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় ও পর্যটন কর্মসূচি নিয়ে সমঝোতা স্মারক।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২০১৬ সালে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ২৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। তবে আমরা এখন সে সব ঋণ নেই নাই। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। বিনিয়োগ ও ঋণের মাধ্যমে চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মোমেন বলেন, সরকারের কাছে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থই সবার আগে। ঋণের ফাঁদ বিষয়ে আমরা অবগত আছি। আমরা এমনভাবে কাজ করছি যেন আমরা এ ধরনের ফাঁদে না পড়ি। আমরা অতিরিক্ত বা ব্যবহারযোগ্য নয় এমন ঋণ নিচ্ছি না।
আগামী ১ জুলাই বিকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইটে ডালিয়ানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মধ্যরাতের পর ডালিয়ানে পৌঁছাবেন তিনি। পরদিন ‘এশিয়ার ভবিষ্যৎ’ এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করে ইকোনোমিক ফোরামে বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী। ৩ জুলাই একটি বিশেষ চীনা ফ্লাইটে বেইজিং যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ৫ জুলাই বেইজিং থেকে ঢাকা ফিরবেন তিনি।
এ সফরে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম থাকছেন।