প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য করার প্রস্তাবে নুরুলের দ্বিমত

76

ডাকসু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ উল্লেখ করে এই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানালেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর। গতকাল শনিবার দুপুরে শুরু হওয়া ডাকসুর প্রথম কার্যকরী সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার প্রস্তাব তোলেন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহরিমা তানজিমা অর্ণি। এরপর সভায় বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা করেন ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী। সভায় নুর বাদে ২৪ জন প্রস্তাবে সম্মতি জানান বলে দাবি করেন গোলাম রাব্বানী। তবে ডাকসু ভিপি ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পক্ষে যুগ্ম আহবায়ক নুরুল হক নুর দাবি করেন, সভায় সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেনও ওই প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছেন।
সভা শেষে নুর সাংবাদিকদের বলেন, সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে আমরা কোনও সমাধানে পৌঁছাইনি। আপনারা দেখেছেন যে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এবং আমি নিজেও
একটি অবস্থানে আছি যে এই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সেরকম একটি জায়গা থেকে আমি মনে করি না মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সদস্য ঘোষণা করা উচিত। আমর এই প্রস্তাবে কয়েকজন সমর্থন জানিয়েছেন।
এসময় গোলাম রাব্বানী বলেন, কয়েকজন না ভিপি শুধু নিজেই আপত্তি জানিয়েছেন। এসময় কথা বলা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয় এবং নুর সাংবাদিকদের নিজের অফিস কক্ষে কথা বলার জন্য ডাকেন।
এসময় রাব্বানী বলেন, ওনার রুমে কথা বলুক এটা তার ব্যাপার। আমি বিষয়টি পরিষ্কার করছি। খবর বাংলা ট্রিবিউনের
এসময় সাংবাদিকরা রাব্বানীকে থামিয়ে দিয়ে নুরের বক্তব্য শোনার আহবান জানালে নুর বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান। এখানে তাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য পদ দেওয়া খুব বড় কিছু না। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে একটি বিতর্কিত অবস্থান রয়েছে বর্তমানে। আমরা যেখানে একদিক দিয়ে দায়িত্ব নিচ্ছি আরেকদিকে আমার ভাইয়েরা বোনেরা এই নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছে। আমি ভিপি হয়েও তাদের এই দাবিকে সমর্থন জানিয়েছি। আমি আজও সভাপতি ভিসি স্যারকে বলেছি, তদন্ত কমিটির রিপোর্টে বেরিয়ে আসবে অনিয়মগুলো। এখানে আবার পুননির্বাচন দরকার।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু এই নির্বাচনটি সবার কাছে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত হয়নি, এই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক শিক্ষকদেরও দাবি ছিল এই নির্বাচন পুনরায় হোক। বিতর্কিত নির্বাচনে আমরা চাই না প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য করা হোক।
এরপর নুরের বক্তব্যের বিরোধিতা করে জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, আমাদের কেন্দ্রীয় ডাকসুর যে কমিটি রয়েছে সেখানে ২৩ জন এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছেন এবং একমাত্র ভিপি নুর দ্বিমত পোষণ করেছেন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।
রাব্বানী বলেন, প্রস্তাবটি প্রাথমিকভাবে ২৩:২ অনুপাতে গৃহীত হয় গেছে। প্রধানমন্ত্রীকে সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি সংখ্যাগত দিক থেকে গৃহীত হয়ে গেছে। এটা সলভড ইস্যু। তবে তিনি দাবি করেন, আকতারের অবস্থান প্রস্তাবের পক্ষে ছিল। যদিও সংখ্যাগত দিক থেকে দুই জন বিরোধিতা করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়ে ডাকসুর সভাপতি ও ভিসি ড. আখতারুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন শিক্ষার্থী। আজ প্রায় এই তিন দশক পর ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে তিনি যে উৎসাহ দিয়েছেন, সদা সহযোগিতা করেছেন, যে আশ্বাস তিনি আমাদের দিয়েছিলেন তার সবই তিনি বাস্তবায়ন করেছেন, যার ফলে আমরা আত্মপ্রত্যয়ী হয়েছিলাম। তিনি পাশে থাকায় এই নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের অত্যন্ত শক্তিশালী অনুভব করেছি। তার কারণেই মূলত আজকের এই কার্যকরী পরিষদ পুনর্জীবিত হলো। এ কারণেই আমাদের কার্যকরী পরিষদের সবাই সহমত জ্ঞাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সম্মাননা প্রদানের বিষয়টি প্রস্তাবনায় এসেছে। তাকে আজীবন সম্মাননা সদস্য পদ প্রদান করা হবে। সংসদীয় আইনের ভাষায় বোধহয় এভাবেই আছে সদস্য পদের নামটি, সেটা দেখেই করা হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই প্রস্তাব গ্রহণ করা হলো। এটি আমরা আনুষ্ঠানিক ভাবে এজেন্ডা দিয়ে পরবর্তী সভায় গঠনতন্ত্র দেখে এই মহৎ উদ্যোগটি গ্রহণ করবো। এটি আজকের সিদ্ধান্ত।