প্রতীক নয়, সৎ ও যোগ্য প্রার্থীই ভোটারদের কাছে বিবেচিত হওয়া উচিত

97

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮তে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বে দেশের রাজনীতিতে আলোচনার বিষয় ছিল অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে। এক পর্যায়ে রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে শুরু হয় ভাঁজনীতির খেলা। জোট-মহাজোট নিয়ে ক্ষমতার নাগাল পাবার প্রাণপণ চেষ্টা। এ ভাঁজনীতি খেলায় শেষ পর্যন্ত কেউ কেউ অসন্তুষ্ঠ হয়ে অভিমান করে ছিঁড়কে পড়েছে। সব মিলিয়ে প্রধানত দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে দেশের রাজনীতি। তার বাইরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়টি দল জোট-মহাজোটের বাইরে গিয়ে সংসদ নির্বাচন করছে নিজস্ব প্রতীক বা মার্কা নিয়ে।
প্রধানত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, ১৪ দলীয় জোট ও জাতীয় পার্টির মধ্যে ঐক্য-অনৈক্য মিলিয়ে সাধারণত একটি পক্ষ। অন্য দিকে ২০ দলীয় জোট, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিএনপি ও জামায়াত মিলিয়ে আরেকটি পক্ষ। দেশের একটি প্রধান দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতীক বা মার্কা নৌকা। এ মার্কায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট নিয়ে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রধান ভ‚মিকায় ছিল আওয়ামী লীগ। তাই দেশে নৌকা মার্কার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। মহাজোটভ‚ক্ত দলসমূহ নিজস্ব প্রতীকের চেয়ে নৌকা প্রতীককে প্রাধান্য দিতে দেখা গেছে।
বিকল্প ধারা, জাসদসহ যারা মহাজোট থেকে নির্বাচন করছে তারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে। সেখানে জাতীয় পার্টি লাঙল প্রতীক নিয়ে মহাজোটের ভেতরে ও বাইরে নির্বাচন করছে। অন্য দিকে দেশের আর এক প্রধান দল বিএনপির মার্কা বা প্রতীক ধানের শীষ। ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে। এর বাইরে কাস্তে, কুঁড়েঘর, মোমবাতি, চেয়ার, হাতপাখা, ছাতাসহ বিভিন্ন প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে কিছু রাজনৈতিক দল।
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো নিজের দলীয় আদর্শ, মূলনীতি, প্রতীকের চেয়ে জনপ্রিয় প্রতীকের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। নদী-মাতৃক বাংলাদেশে নৌকা প্রতীকের জনপ্রিয়তা যেমন রয়েছে তেমনি কৃষি প্রধান এদেশে ধানের শীষও একটি পরিচিত নির্বাচনী প্রতীক। ভোটাররা প্রার্থীর দলীয় আদর্শ, প্রার্থীর সততা এবং যোগ্যতার চেয়ে প্রতীক দেখে ভোট দিতে চায়। এর ফলে কোন কোন প্রতীকের আশ্রয়ে অসৎ, অযোগ্য প্রার্থী ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে পারে। কোন ব্যক্তি কী প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে এসেছে তা বিজ্ঞ ভোটারদের বিবেচনা করা উচিত। প্রার্থীর সততা, দলীয় আদর্শ, যোগ্যতা বিবেচনা করে সাধারণ ভোটাররা ভোট প্রদান করলে তিন শত আসনে যোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচিত হবে। প্রতীকের অধীনে যেসব অযোগ্য প্রার্থী কোননা কোন কারণে প্রতীক ব্যবহারের টিকিট পেয়েছে তাদের ব্যাপারে সাধারণ ভোটার সুবিবেচনা করে ভোট প্রদান করলে দেশের জাতীয় সংসদ পাবে যোগ্য-সংসদসদস্য। সত-যোগ্য প্রার্থী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিক হারে নির্বাচিত হলে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন সাধিত হবে। যোগ্য লোকের বিজ্ঞ ভূমিকায় দেশে উন্নতি ও অগ্রগতি সাধিত হবে এমন ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।