প্রতীকী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন মেয়রের

44

গণহত্যার দিক দিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ পাহাড়তলী বধ্যভূমিসহ ৭৭টি বধ্যভূমির অবস্থান চট্টগ্রামে। এখন পর্যন্ত একটি বধ্যভূমিও সংরক্ষিত হয়নি। পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের মুখে রুখে দাঁড়ানোর গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে এ নগরীর। এছাড়া জনসম্মুখে বঙ্গবন্ধুর প্রথম ৬ দফা দাবী উত্থাপন ও দেশের স্বাধীনতার ঘোষণাও পাঠ করা হয় এ নগর থেকেই।
স্বাধীনতা অর্জনে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন কয়েক লাখ মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এ শহীদদের স্মরণে স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতিসৌধ। তবে সময়ের বিবর্তনে বধ্যভূমি সংরক্ষণের মত স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতির কমতি ছিল না। এমনকি আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরের বছরেই কাজীর দেউড়ি শিশু পার্কে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
প্রতিশ্রুতির ৩ বছর পার হওয়ার পর মামলার আশঙ্কাকেই কারণ হিসেবে দাঁড় করান তিনি। ফলে ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ মিনারই সব ধরনের শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের একমাত্র অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষোভের শেষ নেই নগরবাসী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে। তবে গেল বিজয় দিবসে প্রতীকী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। অবশ্য মহানগর যুব মহিলা লীগের উদ্যোগে তৈরি হয়েছে প্রতীকী স্মৃতিসৌধটি।
গত সোমবার নগরীর টাইগার পাস এলাকায় বিন্নাঘাস প্রদর্শনী কেন্দ্রে সকাল ৯টায় এ স্মৃতিসৌধে যুব মহিলা লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন মেয়র।
এ সময় সিটি মেয়র স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে একটি স্মৃতিসৌধ করতে না পারা লজ্জাজনক। তবে আমরা বৃহৎ পরিসরে সৃন্দর ও পরিকল্পিত একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করতে চাইছি। যেখানে যুগের পর যুগ মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারবে। এমন একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি।
অন্যদিকে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে সিটি করপোরেশনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছিলেন, ‘চট্টগ্রামে আমাদের সবেধন নীলমণি একটি শহীদ মিনার। ২১ ফেব্রূয়ারি, ২৬ মার্চ ও বিজয় দিবসে আমরা এ শহীদ মিনারেই যাই। গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে চট্টগ্রামে স্মৃতিসৌধ প্রয়োজন।
তিনি তখন পুরোনো সার্কিট হাউসের সামনের শিশুপার্কের স্থানটিকে সুবিধাজনক স্থান উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘সেখানেই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যুক্তিযুক্ত হবে। শিশুপার্কের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে সে মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। এ স্থানেই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে।’ এমন ঘোষণার পর গত ১৮ নভেম্বর শিশু পার্কটির আধুনিকায়ন কাজেরও উদ্বোধন করেন তিনি।
জানা গেছে, পার্ক করার শর্তে জমিটি সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়েছে। ফলে পার্ক ব্যতীত অন্যকিছু করলে আইনি জটিলতা পড়ার আশঙ্কাতেই ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন মেয়র। তাই এখন নগরীর কাট্টলিতে স্থায়ীভাবে স্মৃতিসৌধ করার পরিকল্পনা করেছেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।
এদিকে প্রতীকী স্মৃতিসৌধটির উদ্যোক্তা মহানগর যুব মহিলা লীগের আহব্বায়ক অধ্যাপিকা সায়রা বানু রৌশনী জানান, শহীদ মিনার আর স্মৃতিসৌধ এক কথা নয়। কিন্তু নগরীতে স্মৃতিসৌধ না থাকার কারণে সবাই শহীদ মিনারেই যান। এক্ষেত্রে আমার ভাবনায় এলো দুটো বিষয়, প্রথমত- একটা প্রতীকী স্মৃতিসৌধ তৈরি করে এতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা যায়। দ্বিতীয়ত- এর মাধ্যমে চট্টগ্রামে একটা স্মৃতিসৌধের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা যায়। মেয়র মহোদয় আমার এ ভাবনার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। আমি বিশ্বাস করি আমার এ ইচ্ছার বাস্তবায়ন একদিন হবে।
ইস্পাত কাঠামোয় ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরি করা হয়েছে ১০ ফুট উচ্চতা ও ৮ ফুট প্রস্থের এ প্রতীকী স্মৃতিসৌধটি। এর নকশা করা হয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে। প্রতীকী স্মৃতিসৌধটির রয়েছে ৭টি ফলক। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাতটি পর্যায়কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সাতটি পর্যায়ের প্রথমটি সূচিত হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এরপর চুয়ান্ন, আটান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অগ্রসর হয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ।
প্রতীকী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় উপস্থিত ছিলেন কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, নগর যুব মহিলা লীগের আহব্বায়িকা সায়রা বানু রৌশনী, সদস্য সচিব মমতাজ বেগম, যুগ্ম আহব্বায়িকা জাহানারা সাবের, সিনিয়র সদস্য ঝুমা আলমগীর, সাইকা দোস্ত, জিন্নাত খানম, রুবা আহসান, সোনিয়া আজাদ, আসমানি ঝুমুর প্রমুখ।