প্রতিরোধে প্রয়োজন বিশেষ পদক্ষেপ

74

চট্টগ্রামের সাথে সংযুক্ত তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়া রোগের বিস্তারের খবরে আমরা শঙ্কিত না হয়ে পারি না। কারণ পার্বত্য জেলাগুলো দুর্গম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় এমনিতেই ম্যালেরিয়ার পাদুর্ভাব রয়েছে। তার উপর এ রোগে যখন পার্বত্য জেলার সীমান্ত এলাকা ভারত ও মিয়ানমারে ভয়াবহ আকার ধারণ করে তখন আমাদের শঙ্কিত করে তোলে। গতকাল জাতীয় একটি দৈনিকে ‘তিন পার্বত্য জেলার সীমান্তবর্তী ভারত ও মিয়ানমারে ম্যালেরিয়া রোগের জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠায় বাংলাদেশেও এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’ মর্মে খবর প্রকাশিত হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তবে এ ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ ম্যালেরিয়া জীবাণুর বাহক মশার কোনো সীমান্ত নেই। সীমান্তের ওপার থেকে সহজেই ওষুধ প্রতিরোধী মশা এ দেশে প্রবেশ করতে পারে। আর তা ঘটলে ম্যালেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে পার্বত্য জেলা ও চট্টগ্রামসহ সারা দেশে। যা দেশের স্বাস্থ্যখাতের জন্য মোটেই সুখবর নয। সেক্ষেত্রে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের যে টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা অসম্ভব হয়ে উঠতে পারে। কারণ হিসাবে আমরা ধারণা করি, বাংলাদেশ একটি জনসংখ্যাবহুল দেশ। বিপুল জনগোষ্ঠীর যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করা স্বাভাবিকভাবেই একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের বিষয়। সরকার যদিও এক্ষেত্রে বেশ আন্তরিক, কিন্তু আমরা লক্ষ্য করে আসছি, বিভিন্ন সময়েই চিকিৎসা খাত নিয়ে নানা ধরনের অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ যেমন- রোগীদের তুলনায় চিকিৎসক সংকট, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংকট, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব, কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি ইত্যাদি। ফলে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, পার্বত্য জেলাগুলোর মত দুর্গম এলাকায় ম্যালেরিয়ার জীবানু প্রতিরোধের শতভাগ নিশ্চিত করার দাবি যথার্থ নয়। তবে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কোনো বিকল্প থাকতে পারে না। তাই বিষয়টি নিয়ে আরও গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
প্রকাশিত খবরে আরো উল্লেখ করা হয়, দেশের সমতল অঞ্চলের তুলনায় পাহাড়ি জনপদে ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। পার্বত্য তিন জেলাসহ ছোটখাটো পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত ১৩ জেলার ৭১টি উপজেলা এ রোগে আক্রান্তের শীর্ষে। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা মনে করি, যখন ১৩টি জেলাসহ সারা দেশে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে রয়েছে- তখন সীমান্তের ওপারে ওষুধ প্রতিরোধী মশার জীবাণু ছড়ানোর বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সঙ্গত কারণেই সংশ্লি­ষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ম্যালেরিয়ার এই ঝুঁকির মধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল-মিলিয়ে বাংলাদেশেও বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস-২০১৯ পালন এবং দিবসটি উপলক্ষে এবারই প্রথমবারের মতো দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালন করার বিষয়টি সামনে এসেছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জিরো ম্যালেরিয়া স্টার্স্ট উইথ মি অর্থাৎ আমিই করব ম্যালেরিয়া নির্মূল’।
আমরা বলতে চাই, ম্যালেরিয়া নির্মূলের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং যে কোনো ধরনের সংকট থাকলে তা নিরসন করতে হবে। আশার কথা হল, এক সময় বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশে ম্যালেরিয়া ছিল একটি আতঙ্কের নাম। তিক্ত স্বাদযুক্ত কুইনাইন ছিল এ রোগের একমাত্র ওষুধ। পরবর্তী সময়ে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের নানা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়েছে। বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুহার আশাতীতভাবে কমেছে, কিন্তু প্রতিবছর আক্রান্তের সংখ্যা কম নয় বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান তিন জেলা উচ্চ-ম্যালেরিয়াপ্রবণ। দেশের মোট ম্যালেরিয়া রোগীর ৯১ শতাংশ এসব এলাকার। এরপর কক্সবাজার জেলাকে মধ্য এবং চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও কুড়িগ্রাম ৯টি জেলাকে নিম্ন-ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল ঘোষণা করা হয়েছে।
আমরা মনে করি, যখন পার্বত্য জেলাগুলোতে বেশি ম্যালেরিয়া প্রবণের কারণ সম্পর্কে চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাহাড় এবং বনাঞ্চল বেষ্টিত হওয়ায় সেখানে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি- তখন এই এলাকাগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনে বিশেষভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংশ্লিষ্টতা জোরদার করতে হবে।