প্রতিবন্ধি ভাতা, ভিজিডি, ঘর দেয়ার আশ্বাসে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ নেজাম উদ্দিনের

52

দিনমজুর মনজুর আলমের ১১ বছর বয়সী মেয়ে রোজিনা আকতার পেটের জটিল রোগের কারণে হাঁটতে পারছে না। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গও তেমন সচল নেই। টাকার অভাবে পারছিলেন না মেয়েটির চিকিৎসা করাতে। তাই প্রতিবন্ধি মেয়েটিকে নিয়ে হতদরিদ্র পরিবারটির সদস্যরা ছিলো চরম হতাশাগ্রস্ত। অসহায় পরিবারের এ মেয়েটিকে প্রতিবন্ধি ভাতা পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চৌকিদার পরিচয়দানকারী যুবক নেজাম উদ্দিন।
আবার মেয়েটির মাকে ভিজিডি দেয়ার আশ্বাসে দিয়েও নিয়েছেন আরো ২ হাজার ১০০ টাকা। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন সেমি পাকা ঘর বরাদ্দ দেয়ার আশ্বাসে বয়োবৃদ্ধ শামশুদ্দৌজার কাছ থেকে নিয়েছেন ৪ হাজার ৮০০ টাকা। এধরনের আশ্বাসে আনোয়ার বেগম নামের বৃদ্ধার কাছ থেকে নিয়েছেন ৪ হাজার ৩০০ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এভাবে ভিজিডি, প্রতিবন্ধি ভাতা, নতুন ঘর দেয়া সহ বিভিন্ন অজুহাতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে এলাকার নিরীহ ও হতদরিদ্র লোকজনের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নেজাম উদ্দিন প্রকাশ ছলিম উল্লাহ নামের এক যুবক। তিনি রাজারকুল ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম হালদারকুল গ্রামের মৃত মো. কালুর ছেলে। নিজেকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার হিসেবে পরিচয় দিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বারের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব অপকর্ম চালিয়ে আসছেন।
রাজারকুল ইউপি চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান জানান, নেজাম উদ্দিন প্রকাশ ছলিম উল্লাহ ইউনিয়ন পরিষদের চোকিদার নন। তবে যুবকটি ইতিপূর্বে চৌকিদার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন এবং পরিষদের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে আসছিলেন।
বিভিন্ন অজুহাতে সে লোকজনের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিলেও বিষয়টি কেউ তাকে অবহিত করেননি। তাই প্রতারণার এসব বিষয় তিনি বিন্দুমাত্রও জানতেন না। তাই তিনি অভিযোগগুলো গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। গত ১৩ জানুয়ারি রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমার কাছে ৩টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
বিধবা, হতদরিদ্র আনোয়ারা বেগম অভিযোগ করেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন সেমি পাকা ঘর বরাদ্দ দেয়ার আশ^াসে তার কাছ থেকে ৬ মাস পূর্বে ৪ হাজার ৩০০ টাকা নিয়েছিলেন চৌকিদার পরিচয়দানকারী নেজাম উদ্দিন প্রকাশ ছলিম উল্লাহ। ঘর দূরের কথা এখন টাকা ফেরত চাইলে উল্টো তাকে হুমকি দিচ্ছে ওই যুবক।
ইউএনও’র কাছে দেয়া অপর অভিযোগে বয়োবৃদ্ধ শামসুদ্দোজা উল্লেখ করেছেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন সেমি পাকা ঘর বরাদ্দ দেয়ার আশ্বাসে তার কাছ থেকে ৪ হাজার ৮০০ টাকা নিয়েছিলেন চৌকিদার পরিচয়দানকারী নেজাম উদ্দিন প্রকাশ ছলিম উল্লাহ। ঘর না পেয়ে তিনি টাকা ফেরত চাইলেও দিচ্ছে না। তাই নিরুপায় হয়ে তিনি প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন।
ইউপি মেম্বার শামসুল আলম আরো জানিয়েছেন, নেজাম উদ্দিন প্রকাশ ছলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে আরো অসংখ্য লোকজনের কাছ থেকে সরকারি সেবার নামে টাকা নিয়ে প্রতারণা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে মৃত আজিজুর রহমানের ছেলে আবছার মিয়ার কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা, ছিদ্দিক আহমদের ছেলে আবদুর রহিমের কাছ থেকে ৮ হাজার টাকা, মৃত আবদুন নবীর ছেলে ছিদ্দিক আহমদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা, মৃত নীল মনির ছেলে সজল পালের কাছ থেকে ২ হাজার টাকা, অজিত পালের ছেলে মিটার পালের কাছ থেকে ৫০০ টাকা, আনোয়ারার কাছ থেকে ৫০০ টাকাসহ অন্তত ২০ জনের কাছ থেকে টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
রামু উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রণয় চাকমা জানিয়েছেন, নেজাম উদ্দিন প্রকাশ ছলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিকে ডাকা হবে এবং এসব অভিযোগ তিনি নিজে তদন্ত করে দোষিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।