প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য থামাতে হবে

26

জালিয়াতি, প্রতারণা ও টকবাজির ঘটনা নতুন না হলেও করোনাকালীন এর দৌরাত্ম্য এতো বেশি বেড়েছে, সাধারণ মানুষকে উদ্বিগ্ন না করে পারেনা। আগে আমরা শুনতাম বিভিন্ন বিষয়ে সার্টিফিকেট জালিয়াত চক্রের দৌরাত্ম্যের কথা। এ সার্টিফিকেট জালিয়াতির চক্রে পড়ে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েছে, জেল জরিমানাও কম হয়নি, কিন্তু প্রশাসনের নজরদারীর মধ্যেও জালিয়াতিচক্রকে সম্পূর্ণভাবে দমন করা সম্ভব হয়নি। এরমধ্যেই ভয়াবহ দুঃসংবাদ হচ্ছে, বর্তমানে করোনার দুঃসময়ে এই জালিয়াতি ও প্রতারক চক্র আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাদের দৌরাত্ম্যে মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। গতকাল দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, আদালতপাড়া থেকে সরকারি কিংবা বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠান- সর্বত্র নিজেদের জাল বিস্তার করে ওঁৎ পেতে বসে আছে ভয়ঙ্কর প্রতারক চক্র। চাকরি-সেবা ও প্রতিকার চাইতে গিয়েই এসব চক্রের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। লাগাম টানায় ঢিলেমির সুযোগে নানা খাতে রীতিমত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে প্রতারকচক্র। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর অভিযোগ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টিগোচরে আসার পর প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অতি সাম্প্রতিক সময়ে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশসহ জেলা আইনজীবী সমিতি চাঞ্চল্যকর প্রতারণার কয়েকটা ঘটনার রহস্য উন্মোচন ও জড়িত প্রতারকচক্রের কয়েকজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এদের প্রতারণার ধরন ও কাহিনী রীতিমত পিলে চমকানো। তবে তাদের সহযোগী অনেকেই এখনও নিজেদেরকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। র‌্যাব ও গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, চক্রের বাকি সদস্যদেরও আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবেদনে পারভিন আক্তার নামের এক নারী, রতন কুমার দাশ ও ইব্রাহিম নামক দুই প্রতারকের যে বিবরণ আসছে, তাতে বলার অবকাশ নেই যে, এ তিনজনের পেছনে শক্তিশালী চক্র সক্রিয় যারা সাধারণে মানুষকে ধোকা দিয়ে সর্বস্বান্ত করে ছাড়ছে। আমরা দৃশ্যত দেখেছে চলতি বছরের শুরু থেকে মহামারি করোনা ভাইরাসের টেস্ট এর নামে জাল সার্টিফিকেটের জমজমাট ব্যবসার বিষয়টি। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী চক্রগুলো করোনা নেগেটিভ এবং পজিটিভ জাল সার্টিফিকেটই তৈরি করে। সাধারণ চিকিৎসার জন্য এখন হাসপাতালে রোগী ভর্তি হতে গেলেই করোনা পজিটিভ বা নেগেটিভ সার্টিফিকেট চায়। তারা এই সার্টিফিকেট ছাড়া রোগী ভর্তি তো দূরের কথা অনেক সময় চিকিৎসাই দিতে চায় না। এছাড়া বাইরে কর্মস্থল, পোশাক কারখানা এবং ভ্রমণের জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট অনেকটা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। উপসর্গ ছাড়া করোনা টেস্ট করানো কঠিন। আবার তা সময়সাপেক্ষও বটে। আর এই সুযোগ নিচ্ছে প্রতারক চক্র। প্রতারক চক্র ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন হাসপাতাল, করোনা টেস্টিং সেন্টারের সিল, চিকিৎসকের নাম, স্বাক্ষর এবং করোনা সার্টিফিকেটের স্টাইল জাল করে ভুয়া করোনা সার্টিফিকেট দিচ্ছে। এই প্রতারক চক্র শুধু নেগেটিভ নয়, পজিটিভ সার্টিফিকেটও দিচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা দেশের বাইরে যান তারাও এই জাল নেগেটিভ সার্টিফিকেট কিনছেন। করোনায় বিশ্বব্যাপী বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থায় আনা হয়েছে করোনা সনদ দেখানোর নিয়ম। আর বিদেশ ভ্রমণের জন্য অসাধু চক্রটি এই সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে চীনের গুয়াংঝু শহরগামী একটি ফ্লাইটে ১৭ বাংলাদেশি যাত্রীর করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়ার তথ্য মিলেছে। যাদের প্রত্যেকেরই বাংলাদেশ থেকে নেয়া করোনার নমুনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ ছিল। ভুয়া সনদ নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করে বহির্বিশ্বের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে চক্রটি। এই জালিয়াত চক্র হাসপাতাল ও টেস্টিং সেন্টার এলাকা ছাড়াও অনলাইনে তৎপর। তারা অনলাইনে করোনা সার্টিফিকেটের নানা ধরনের অফার দেয়। এ ধরনের চক্র শুধু ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে নয়, দেশের সর্বত্র এরা তৎপর। প্রতারণা ও জাল সার্টিফিকেট ভেজাল খাবার, ভেজাল ওষুধের চেয়েও মারাত্মক। এই সত্য সামনে রেখে অভিযানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতা অবলম্বন দরকার। কারা প্রতারণা ফাঁদ সৃষ্টি করে সাধারণ অসহায় মানুষকে সর্বস্বান্ত করছে, কারা এদের পেছন থেকে সাহস দিচ্ছে, এসব বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারা ইত্যাদি অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি মনে করছি। প্রতারক চক্রকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সজাগ হতে হবে। পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।