প্রণোদনার অর্থ মোবাইল অ্যাকাউন্টে দেওয়ার নির্দেশ

48

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কৃষক ও প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য ঘোষিত প্রণোদনা মোবাইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কঠিন এই পরিস্থিতিতে দ্রুততম সময়ে প্রণোদনা বা ঋণের অর্থ কৃষক ও প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের হাতে পৌঁছে দিতে এই ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোকে ডিজিটাল ওয়ালেটভিত্তিক বা অ্যাপসভিত্তিক ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালুরও নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে এবিষয়ে একটি চিঠি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চেয়ারম্যানদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার জন্য সরকার এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার বিভিন্ন আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এই অংক দেশের জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) ৩ দশমিক ০৭ শতাংশ। সরকারের নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ পর্যন্ত ৬৬টি সার্কুলার জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকা, ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-প্রতিষ্ঠান (এসএমই) খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) জন্য ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিমের আওতায় ৫ হাজার কোটি টাকা এবং উৎপাদনমুখী শিল্প কারখানার জন্য ৩০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ সুবিধা বা চলতি মূলধন ঋণের আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে।
এছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকি বাবদ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দেশ্যে ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার তহবিল, বাণিজ্যিক ব্যাংকের স্থগিত সুদের ভর্তুকির জন্য ২ হাজার কোটি টাকা এবং নিম্ন আয়ের পেশাজীবি, কৃষক ও ক্ষুদ্র/প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য ৩ বছর মেয়াদি ৩ হাজার কোটি টাকার আবর্তনশীল পুনঃঅর্থায়ন স্কিমের আওতায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
ব্যাংকভিত্তিক এসব প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো বিশেষ করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকসমূহের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পরিচালনা পর্ষদের কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত থেকে যথাসময়ে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বিভিন্ন বিষয়াদি যেমন- প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বা শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্বাচন, সুদের হিসাবায়ন, অর্থায়নের উৎস, ঋণের মেয়াদকাল, ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ বিতরণে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ভূমিকা, বাংলাদেশ ব্যাংকে ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। যাতে পরিচালনা পর্ষদের প্রতিটি সদস্য, সম্যক ধারণা লাভ করতে পারেন এবং ঋণ দেওয়া কার্যক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে যথাযথভাবে ভূমিকা রাখতে পারেন। ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা দেওয়া এবং কৃষক ও প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের দ্রæততম সময়ে ঋণের অর্থ মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) মাধ্যমে সরাসরি বিতরণের বিষয়েও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিবেচনা করতে হবে। খবর বিডিনিউজের
নির্দেশনামূলক ওই চিঠিতে আরও বলা হয়, বর্তমান বাস্তবতায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করা জরুরি। এ পরিস্থিতিতে গ্রাহকদের স্বশরীরে ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংকিং সেবা গ্রহন সংক্রমণ ঝুঁকি বাড়ায়। তাই অ্যাপস বা ডিজিটাল ওয়ালেট ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা চালু করা হলে গ্রাহকের স্বশরীরে ব্যাংকে আসতে হবে না। আধুনিক ফিন টেক (ঋরহঞবপয) প্রযুক্তি সারা বিশ্বের ব্যাংক লেনদেনকে গ্রাহকের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) ও ডিজিটাল ওয়ালেট সেবার মাধ্যমে গ্রাহক সহজেই ঘরে বসে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়সহ সব ধরনের ব্যাংক লেনদেন ও পেমেন্ট সেটেলমেন্ট করতে পারেন।
একইসঙ্গে প্রবাসী বাংলাদেশীরাও মানি এক্সচেঞ্জ হাউসে না এসে ঘরে বসে অর্থ পাঠাতে পারবেন। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী যুগোপযোগী প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং প্রডাক্ট চালুর মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে বিভিন্ন সেবা পৌঁছানো যেতে পারে। ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারে বিদেশি সফটওয়্যার কোম্পানির ওপর নির্ভর না করে দেশীয় সফটওয়্যার ব্যবহারের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে।
এ অবস্থায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিচালনা পর্ষদ সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারসমূহ বিস্তারিত আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং বর্তমানে কোভিড-১৯ জনিত সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে নিরাপদ ব্যাংকিংয়ের জন্য ডিজিটাল ওয়ালেটভিত্তিক বা অ্যাপসভিত্তিক ও ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রচলনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।