প্রক্রিয়াগত ত্রুটি রেখে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কাম্য নয়

29

২০২০ সালের হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে তা সাধারণ নিয়ম ও কমিশনের বিধির ব্যত্যয় ঘটিয়ে করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশ পেয়েছে। নির্বাচন কমিশনের আইন ও বিধান অনুযায়ী ভোটার তালিকা নির্ভুল ও ত্রæটিমুক্ত করার জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারির কারণ দেখিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ছাড়াই নির্বাচন কমিশনের ওয়াইসাইডে প্রদত্ত ফরম পূরণ করে যারা আবেদন করেছেন, তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে ভোটার হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কারণ ও যুক্তির যথার্থতা থাকলেও এর ফলে বিপুলসংখ্যক নতুন ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়বে-তাতে কোন সন্দেহ নেই। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার বিষয়টি একটি নিরন্তর প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হচ্ছে, প্রতি বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করাই নিয়ম। এ তালিকা অধিকতর নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত করাই এর উদ্দেশ্য। বছর বছর অনেকে নতুন ভোটার হওয়ার উপযুক্ত হন। তাদের নিবন্ধন হওয়াটা জরুরি। অনেক ভোটারের মৃত্যু হয়। তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিতে হয়। কিছুসংখ্যক দ্বৈত ও ভুয়া ভোটারও থাকে তালিকায়। বাংলাদেশের নাগরিক না হয়ে ভোটার তালিকাভুক্ত হওয়ার ঘটনাও থাকে। এগুলো সংশোধন করার জন্যই ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়। এ কারণেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরেজমিন পরিদর্শন ও তথ্য সংগ্রহ করে তালিকা চূড়ান্ত করতে হয়। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন কারণে এবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সেক্ষেত্রে ভোটার তালিকা কতটা ত্রুটিমুক্ত ও নির্ভুল হবে, সে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। ভোটার তালিকা কোনোভাবে বিতর্কিত বা প্রশ্নবিদ্ধ হোক, এটি কাম্য নয়। অতীতে এ তালিকা নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অনেক কাজের সমালোচনা হতে পারে। তবে তাদের আমলে একটি কাজ সম্পন্ন হয়েছিল খুব ভালোভাবে। সেটি হলো একটি নির্ভরযোগ্য ভোটার তালিকা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন। এ কৃতিত্বের দাবিদার অবশ্যই তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। তবে খুব অল্প সময়ে কাজটি সুসম্পন্ন হওয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন সেনাসদস্য ও স্কুল শিক্ষকরা। ইতোমধ্যে ভোটার তালিকা কয়েক দফা হালনাগাদ করা হয়েছে। হালনাগাদ কার্যক্রমে কোনো কোনো স্থানে কিছু অনিয়মের অভিযোগও উঠেছে। বিভিন্ন এলাকায় নারী ভোটার বৃদ্ধির হার পুরুষের তুলনায় কম দেখা গেছে, যা নিয়ে একজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ এদেশের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে, অতীতে এমন খবরও পত্রপত্রিকায় এসেছে। ভোটার তালিকায় নাম থাকা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গাকে শনাক্তও করা হয়েছিল তখন। ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হলে সর্বশেষ ভোটার তালিকাতেও রোহিঙ্গাদের উপস্থিতি থাকতে পারে।
ভিন্ন দেশের নাগরিকরা আমাদের ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে এদেশের রাজনীতি ও সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখবেন, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ভোটার তালিকা থেকে তাদের অপসারণ জরুরি। সর্বশেষ হালনাগাদকরণে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ ছাড়া এ কাজগুলো কতটা নির্ভুলভাবে সম্পন্ন হবে, এ প্রশ্নও রয়েছে।
সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি নির্ভুল ভোটার তালিকার বিকল্প নেই। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাও এর ওপর অনেকাংশে নিভর্রশীল। ভোটার তালিকা নির্ভুল ও হালনাগাদ করার এ গুরুদায়িত্ব নির্বাচন কমিশনকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে।