প্রকাশ বড়ুয়া’র কৃষ্ণতিথি

106

‘একটা কথা বলবে ?
: কী ?
তুমি আমার বন্ধু হবে ?
: বন্ধু বলেই তো কথা বলছি।
না-
খুব কাছের একজন বন্ধু,
যাকে না দেখে সকাল হয় না
কথা না শুনলে ঘুম আসে না।’

এভাবে কবি প্রকাশ বড়ুয়া ’কৃষ্ণতিথি’ কাব্যগ্রন্থের ৫৪ পৃষ্ঠায় ‘বন্ধু হবে?’ কবিতায় বন্ধুর সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন।
প্রকাশ বড়ুয়া, বহুমুখি প্রতিভার উল্লেখযোগ্য এক ব্যক্তি। লেখালেখির শুরুটা শিশুসাহিত্য দিয়ে। কবি-সাংবাদিক অমিত বড়ুয়া’র তত্ত্বাবধানে আমরা ক’জন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এর ব্যানারে পরিচিতি লাভ করা আজ গদ্য কবিতায় উপস্থিতি জানান দেওয়া প্রকাশ বড়ুয়া। পেশায় সরকারি চাকুরিজীবী হলেও শৈশব থেকে তাঁর বিচরণ সাহিত্য- সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ‘চলে যাও আমি চাইনি’ লেখকের প্রথম কাব্যগ্রন্থ পাঠকপ্রিয়তার পর ঢাকার স্বপ্নকথা প্রকাশনী দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘কৃষ্ণতিথি’ প্রকাশ করে। দেশ-মাতৃকা, প্রাকৃতিক প্রেম বিভিন্ন বিষয়ে লেখা কবির ৪৪টি কবিতা স্থান পেয়েছে এ গ্রন্থে। বইটির ভূমিকায় কবি ও তাঁর কবিতা সম্পর্কে বিশিষ্ট কবি, লেখক, গবেষক সিং ইয়ং ম্রো লিখেছেন, ‘প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ, প্রেম- ভালোবাসা, আনন্দ-বেদনা ও সমাজের যাপিত সময়ের সুক্ষবোধের চিত্র ফুটে উঠেছে।’
কবিতার প্রস্তুতি পর্বে, নিমন্ত্রণ কবিতায় প্রারম্ভিক ভাষার উপস্থাপনায় তাঁকে বলা যাবে একজন সম্ভাবনাময় কবি। তবে তাঁর বেলায় একটি ব্যক্তিক্রম হলো, তিনি একজন গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী ও বাচিকশিল্পি। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারে তাঁর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দের আপডেট খবর পৌঁছাতে সংবাদপাঠক হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেন। কবিতায় উপস্থাপন করেছেন সময় ও পরিপার্শ্ব থেকে অর্জিত তাঁর বোধগুলোকে। পুরো কাব্যটি পড়ে যা মনে হলো, তাঁর কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন কাব্যজীবনের দ্বিতীয়গ্রন্থ কৃষ্ণতিথি প্রকাশ করে। তাঁর বোধগুলো গড়ে উঠেছে কখনও জীবনকে আশ্লেষ করে, কখনও চিরসুন্দর নিসর্গকে নিয়ে এবং কখনওবা আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতাকে ঘিরে। এই কাব্যগ্রন্থে তাঁর জীবনবোধের অনেক কবিতা আছে। সবকিছু মিলে কবির প্রকাশিত ‘কৃষ্ণতিথি’ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সৈনিক বলা যেতে পারে। তিনি ইতিবাচক জীবন চেতনার কবি এবং আজ তাই বহুমুখী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। তাই তো তাঁর কবিতায় দেশের প্রকৃতি ও মানুষ ঘুরে ফিরে আসে। দেশের প্রতি রয়েছে তাঁর অবিচল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা যা ‘হে স্বাধীনতা’ কবিতায় অনিঃশেষ কষ্টের কথা বইয়ে দেয়।
গত ৩০ মার্চ বান্দরবান প্রেসক্লাবের হল রুমে অনেকটা ভিন্নরূপে কবি প্রকাশ বড়ুয়ার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কৃষ্ণতিথি’র ছিল প্রকাশনা উৎসব। অনেক গুণীজনে বইটি নিয়ে নানাভাবে সাফল্য কামনা করেছেন। কবির জন্মস্থান বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামা উপজেলায় হলেও শৈশব পিতৃভূমি চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর গ্রামে বেড়ে উঠা। পরে মা-বাবার চাকুরির সুবাদে কবির মামার বাড়ি চট্টগ্রাম জেলা বাঁশখালী জলদী গ্রামে বসতি গড়ে, ওখান থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। কবি প্রকাশ বড়ুয়ার কৃষ্ণতিথি কাব্যগ্রন্থটির প্রকাশক : রোকসানা সুখী, মূল্য : ২০০টাকা। আশাকরি কবির দ্বিতীয়গ্রন্থ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হবে।