পেকুয়ায় এনজিও এসএআরপিভির নিয়োগে অনিয়ম

237

পেকুয়া উপজেলায় এনজিও এসএআরপিভির নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার সকালে এনজিও এসএআরপিভির নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই অনিয়মের অভিযোগ তুলে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় স্থানীয় এনজিও ফোরাম।
সূত্র জানায়, গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত পেকুয়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান উপক‚লীয় কলেজ, কলেজের মৌলভী সাঈদুল হক ছাত্রবাস ও শহীদ জিয়া বিএমআইতে কমিউনিটি নিউট্রিশন ওয়ার্কার (সিএনডব্লিউ) ও কমিউনিটি নিউট্রিশন ভলান্টিয়ার (সিএনভি) এই দুই পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার আগের রাতে স্থানীয় কতিপয় দালাল চক্রের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস, নিয়োগ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন এলাকার প্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়াসহ আরো একাধিক অভিযোগ পাওয়া যায়। এর আগে নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার জন্য পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইকা শাহাদাত, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ওই এনজিওর কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিলেও তা মানা হয়নি।
এসব কারণে এনজিও এসএআরপিভির নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে পেকুয়ার ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করে স্থানীয় এনজিও ফোরাম। অনিয়ম, দুর্নীতি, চাকরি দেওয়ার নামে দালাল চক্র কর্তৃক প্রার্থীদের কাছ থেকে উৎকোচ আদায়, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশ তোয়াক্কা না করায় এসএআরপিভির বিতর্কিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানায় স্থানীয়রা।
এনজিও এসএআরপিভির বিতর্কিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল না করলে ওই এনজিওকে পেকুয়ার মাটিতে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবেনা বলে হুশিয়ারী দিয়েছেন আমরা পেকুয়াবাসী সংগঠনের মহাসচিব মাহামুদুল করিম। এক বিবৃতিতে মাহামুদুল করিম জানান, এনজিও এসএআরপিভির লোকজন অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো দ্রæত নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করে। চাকরি দেওয়ার নামে পেকুয়ার নারী প্রার্থীদের সাথে প্রহসন করেছে। তাই তিনি ওই বিতর্কিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের জোর দাবি করছি।
জানা যায়, এনজিও এসএআরপিভির চকরিয়ার ভরামুহুরীস্থ আঞ্চলিক কার্যালয় পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নে মা ও শিশুর পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নয়ন ও কমিউনিটি ভিত্তিক আকস্মিক অপুষ্টি ব্যবস্থাপনা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য দাতা সংস্থা ডব্লিউএফপি ও এ্যাকশন এগিনিস্ট হাঙ্গার এর আর্থিক সহযোগীতায় জনবল দুইটি পদে ৮৮ নারী প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য গত মাসের ২৯ জানুয়ারি একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। ওই বিজ্ঞপ্তির মতে, পেকুয়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের প্রার্থীদের চলতি মাসের ৪ ফেব্রূয়ারি বিকাল ৫টার মধ্যে ওই এনজিওর চকরিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে দুই পদের প্রার্থীদের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। পেকুয়ার সাত ইউনিয়ন থেকে প্রায় এক হাজারের অধিক আবেদনকারী নারী প্রার্থী আবেদন করেছিল। গত ৭ ফেব্রেূয়ারি এনজিওর কার্যালয় থেকে আবেদনকারী নারী প্রার্থীদের মোবাইলে ফোন করে ৮ ফেব্রূয়ারি শনিবার পেকুয়ায় তিনটি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
অভিযোগ উঠেছে, এনজিও এসএআরপিভির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মচারীর নেতৃত্বে পেকুয়া উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে দালাল নিযুক্ত করা হয়। ওই কর্মচারীর নিযুক্ত দালালগণ কয়েকটি গ্রামের অর্ধশতাধিক নারী প্রার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদায় করে। পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওই কর্মচারীর সাথে এনজিওর কতিপয় কর্মকর্তাদের যোগসূত্র রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বিদেশি দাতা সংস্থার আর্থিক সহযোগীতায় কোন এনজিও প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জনবল নিয়োগের পূর্বে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিধান থাকলেও এনজিও এসএআরপিভির কর্তৃপক্ষ তা করেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চাকরি প্রার্থী জানান, দালাল চক্রের মাধ্যমে এনজিও এসএআরপিভি পরীক্ষার পূর্বের রাতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করা হয়। অনেক পরীক্ষার্থী পরীক্ষার পূর্বের রাতেই প্রশ্ন পেয়ে যায়। তাই এই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি।
এসব বিষয়ে জানতে এনজিও এসএআরপিভির চকরিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রোগ্রাম ম্যানেজার কাজী মাকসুদুল আলম মুহিতের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি কল রিসিভ না করায় তার মতামত জানানো সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা শাহাদাত বলেন, এনজিও এসএআরপিভির নিয়োগ পরীক্ষা স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকার্তাকে নির্দেশে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা কথা শুনেনি। ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।