‘পেঁয়াজ যা এসেছে বেশিরভাগই পচা’

28

সীমান্তের ওপারে টানা চার দিন আটকে থাকা আগের এলসির ভারতীয় পেঁয়াজ নিয়ে কিছু ট্রাক দেশে এলেও তার ‘বেশিরভাগই পচা’ বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। দিনাজপুরের হিলি স্থল বন্দর আমদানি-রপ্তানি গ্রূপের সভাপতি হারুন অর রশীদ বলেন, ওই বন্দর দিয়ে গত শনিবার ভারত থেকে আসা ১১ ট্রাক পেঁয়াজের ‘প্রায় পুরোটাই’ পচে গেছে।
সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিমও একই অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “শনিবার ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে আসা ৩১ ট্রাক পেঁয়াজের বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।” শনিবার ভারত থেকে হিলি ও ভোমরা বন্দর দিয়ে এই ৪২ ট্রাক পেঁয়াজই এসেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
নিজেদের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভারত সরকার গত সোমবার আকস্মিকভাবে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়। ওই ঘোষণার পর সীমান্তে বাংলাদেশ অভিমুখী পেঁয়াজের ট্রাকগুলোও আটকে দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। খবর বিডিনিউজের
ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী তিন স্থলবন্দর মিলিয়ে পাঁচশর বেশি ট্রাক সীমান্তের ওপারে আগের এলসির পেঁয়াজ নিয়ে আটকে থাকে চারদিন। ফলে রোদ-বৃষ্টি, গরমে পেঁয়াজে পচন ধরে। এরপর ভারত সরকারের বিশেষ উদ্যোগে বিলম্ব রপ্তানি আদেশ নিয়ে কিছু ট্রাক হিলি ও ভোমরা দিয়ে শনিবার বাংলাদেশে ঢুকলেও বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ আসতে পারেনি বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, “পেঁয়াজগুলো আসছে ভারতের মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র প্রদেশ থেকে। সেখান থেকে পেঁয়াজের ট্রাক বাংলাদেশে আসতে সময় লাগে ছয় দিন। তারপর ঘরে তিন দিন পর্যন্ত রাখা যায়। এরপর পচতে থাকে।
“এলসি করা পেঁয়াজ গত ৭ সেপ্টেম্বরে রওনা হয়। ১২ দিনের মাথায় ১১ ট্রাক পেঁয়াজ হিলি হয়ে এসেছে। তাহলে বুঝতেই পারেন পেঁয়াজ কেমন থাকবে।”
হিলি বন্দর দিয়ে আসার অপেক্ষায় আরও চার শতাধিক ভারতীয় ট্রাক সীমান্তের ওপারে আটকা পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি জট খুলবে। রোববার ভারতে সাপ্তাহিক ছুটি। সোমবার যদি বিষয়টি নিয়ে তারা বসেন এবং সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে আরও তিন দিন। তাহলে ভাবুন বিষয়টি। এখানে দুই দেশেরই ব্যাবসায়িক স্বার্থ আছে। তাই উচ্চপর্যায় ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে বলে আশা করছি।
ভারতের এই পেঁয়াজের ‘স্টোরেজ কোয়ালিটি নেই’ বলে জানালেন বাংলাদেশ মশলা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক হামিম রেজা। তিনি বলেন, “ভারত থেকে আমদানি করা এসব পেঁয়াজ ওপেন পলিনেটেড ভ্যারাইটি। এই পেঁয়াজ সর্বাধিক দুই সপ্তাহ রাখা যায়। এসব পেঁয়াজের স্টোরেজ কোয়ালিটি নেই। আর গাদাগাদি করে রাখলে দ্রুত পচতে শুরু করে।”
এদিকে পেঁয়াজ পচতে শুরু করায় ভারতে ট্রাক থেকে নামিয়ে স্থানীয়ভাবে বিক্রির খবর মিলেছে। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম বলেন, “ভারতের ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে এখনও দুই শতাধিক পেঁয়াজবাহী ট্রাক আটকে রয়েছে। এর মধ্যে কিছু পেঁয়াজ ফিরে যাচ্ছে। আর কিছু পেঁয়াজ সেখানে আনলোড করে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করে ফেলছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।”